ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

নবীন এখন ডারবানে

শেরিফ সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১১
নবীন এখন ডারবানে

জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে এবার বিশ্ব নেতারা আগ্রহ নিয়ে চেয়ে থাকবেন তরুণদের দিকে। এ কথাই বলছিলেন এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের তরুণ প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল রেজওয়ান নবীন।

জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনের সময় যখন সমুদ্র উপকূলীয় দেশগুলো হুমকির মুখে ঠিক সে মুহূর্তে তরুণদের উপরই ভরসা করছে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকার, মালদ্বীপের সাধারণ মানুষ।

শুক্রবার রাতে ডারবানে রওনা দিয়েছেন নবীন। যাওয়ার আগে বাংলানিউজকে তিনি ২১ নভেম্বর ‘রোড টু ডারবান: গোলটেবিলে তরুণদের ভাবনা’ শিরোনামে গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনের জন্যে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘সম্মেলনে যাওয়ার আগে এমন আলোচনা খুবই জরুরি ছিল; যেখানে সবাই মন খুলে কথা বলতে পেরেছেন। সেই সঙ্গে ওই দিনের আলোচনায় যতগুলো প্রসঙ্গ উঠে এসেছে সবগুলো আমি সম্মেলনে উপস্থাপন করবো। ’

জাতিসংঘের সম্মেলন ২৮ নভেম্বর শুরু হলেও তার আগে বিশ্বের সকল তরুণ প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘কনফারেন্স অব ইয়ুথ’। আজই শুরু হচ্ছে এ সম্মেলন। সে সম্মেলন থেকেই তরুণদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু হবে।

জলবায়ু প্রসঙ্গে প্রতিটি দেশের নেতৃবৃন্দের ব্যর্থতার ফলে এবার বিশ্ব চেয়ে আছে তরুণদের দিকেই। সবাই আশাবাদি এবারের কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস বা কপ নিয়ে। কপের ১৭ তম এ আয়োজনে বাংলাদেশ সহ জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলো অংশগ্রহণ করবে।

বাংলানিউজ আয়োজিত গোটটেবিল বৈঠকে নবীনের বক্তব্যটি তুলে ধরা হলো:

মূলত জাতিসংঘের যে সম্মেলনটি হয় তার সংক্ষিপ্ত নাম হচ্ছে ‘কপ’। এবার বসছে কপের ১৭তম সম্মেলন। সম্মেলনে তরুণরা আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পৃক্ত হওয়া শুরু করে ১৪ তম সম্মেলন থেকে।   সেবার সম্মেলনটি পোল্যান্ডে হয়েছিল। এর আগে তরুণরা বিভিন্নভাবে সম্মেলনে সম্পৃক্ত হতো। বাংলাদেশের তরুণরা সর্বপ্রথম এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে ২০০৯ সালে। তিনজন তরুণ সেখানে অংশগ্রহণ করে। তার মধ্যে দুজন ছিলেন ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়ন। আমি তখন ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়ন হইনি। কিন্তু সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেইঞ্জের একজন সদস্য হিসেবে আমি সম্মেলনে অংশ নেই।
    
কপ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? এটি প্রত্যেক দেশের জলবায়ুর শীর্ষ একটি সম্মেলন। কপ ১৫ যেটি হয়েছিল সেখানে  ওবামা থেকে শুরু করে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের মনমোহন সিং-সহ অন্যান্য দেশের নেতারাও অংশ নেন। আশা করা হচ্ছিল ওই সম্মেলনে আমরা আইনগত বাধ্যবাধকতা সম্পন্ন একটি চুক্তিতে আমরা পৌঁছতে পারবো। সেটি শেষ পর্যন্ত হয়নি।

সেই চুক্তিতে আবার কীভাবে পৌঁছানো যায়। পাশাপাশি যে দাবিগুলো আছে (যেমন: কিউটোপ্রটোকল, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডসহ আরো যে বিষয়গুলো আছে) সেগুলো নিয়েই কপ ১৭-তে আলোচনা হবে।

সম্মেলনে আমি কী তুলে ধরবো সেটিই হলো প্রশ্ন। আপনারা জানেন ঢাকায় কিছুদিন আগে ক্লাইমেট ভারনাবেল ফোরামের একটি সম্মেলন হয়েছে। যেখানে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এসেছিলেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেসকল দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সংকটে পড়বে সেসকল দেশের এটি একটি ফোরাম। সেখানে কিছু বিষয় জোড়ালোভাবে এসেছে। ওই সম্মেলনের সমাপনীতে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছিলেন, ‘আর কত সম্মেলন আমরা করবো? আর কত সম্মেলন করলে আমরা একটি সিদ্ধান্তে আসতে পারবো?’ আমরা দেখি আমাদের সিডর হয়, আইলা হয়। আরও নানা দুর্যোগের মুখোমুখি আমরা প্রতিনিয়ত হচ্ছি। যেমন: আমাদের জেলেরা সমুদ্রে নিয়মিত মাছ ধরতে যেতে পারেন না। কারণ হচ্ছে সাইক্লোন। আগেও বাংলাদেশ সাইক্লোন প্রবণ দেশ ছিল। কিন্তু এখন নিয়মিত সাইক্লোন হয়। যা আগে এভাবে হতো না। প্রত্যেক মাসেই দেখা যায় দু-তিনবার করে সাইক্লোন হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়ে যাচ্ছে।  

এমনই একটি বিপদের সময় আসছে সম্মেলনে তরুণদের পক্ষে কী এমন করার আছে? প্রথম সম্মেলনে আমাদের তেমন দক্ষতা ছিল না। কিন্তু এবারের সম্মেলনে যাওয়ার আগে অন্তত এতটুকু বলতে পারি যে, আমাদের ভেতর ধীরে ধীরে দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দক্ষতা যতো বৃদ্ধি পাবে আমাদের ভুমিকা ততো জোরালো হবে। দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে এ ধরনের সম্মেলনে আমাদের দাবিগুলো জোরালোভাবে তুলে ধরা সম্ভব। সম্মেলনে সরকারের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের গ্রুপ কাজ করে। যেমন: তরুণদের গ্রুপ, নারীদের গ্রুপ, শ্রমিকদের গ্রুপ। সবাই নিজের অবস্থানটি তুলে ধরতে চান। এবারের সম্মেলনে আমিসহ আরো একজন তরুণ যাচ্ছেন। সেই অর্থে দেখা যাবে ওই সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই দুর্বল। তারপরও আমরা আমাদের দাবিগুলো  বিশ্ব পরিমন্ডলে তুলে ধরতে চাই। আমরা কী ভাবছি সেই বিষয়গুলোই আমি সেখানে নিয়ে যেতে চাই। আজকের এই অনুষ্ঠানটি একটি প্ল্যাটফর্ম।

আমাদের দাবিগুলো বিশেষ করে ৩৫০ পিপিএম, আমরা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কথা বলি। আমরা ক্লাইমেট ফান্ডের কথা বলি। সে জায়গাতে আমরা কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারি। বিশেষ করে আমরা দায়ী না হয়েও আমরা অনেক বেশি ভুমিকা পালন করছি। সে বিষয়গুলোর জন্যও আমরা খুব শক্তিশালী অবস্থানে আছি বলে মনেকরি। তাছাড়া আমাদের দেশ এতো দুর্যোগপূর্ণ দেশ। সেখানে আমরা মানিয়ে নেই। এই মানিয়ে নেওয়া বিষয়টি নিয়ে আমি সম্মেলনে বলতে চাই।

গোলটেবিল নিয়ে বাংলানিউজ প্রকাশ করেছে ‘ক্রোড়পত্র’। ক্রোড়পত্রটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।