উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সাত বছরের বেশি সময় ধরে বালু উত্তোলনে ইজারা বন্দোবস্ত নেই। অথচ উপজেলাজুড়ে পাহাড়ি নদী ও ছোট ছোট পাহাড়ি ছড়া এবং কৃষিজমি থেকে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন।
স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং বালু উত্তোলনকারীরা প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে অবাধে বালু উত্তোলন করে চলেছে। এর ফলে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, ছড়া-খাল ভাঙন, ফসলি জমি প্রভৃতি ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির মুখে পড়েছে। একই সাথে বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্রীমঙ্গলে শুধু ছড়ার বালু নয়; বালু উত্তোলনকারীদের থাবা পড়েছে এবার কৃষি এবং সরকারি খাস জমিতেও। বালু উত্তোলনকারীরা এস্কেভেটর ও ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মাটি কেটে সমতল ও কৃষি ভূমি উজার করছে। মাটির ৩০-৪০ ফুট গভীরে গর্ত করে মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। ফলে এলাকার ফসলি জমি উজার হয়ে যাচ্ছে।
শ্রীমঙ্গলে এই অবৈধ বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালীদের নিয়ে গড়ে ওঠেছে এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা। ক্ষমতাসীন দলীয় লোক হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।
সম্প্রতি উপজেলার ভূনবীর ইউপির জৈতাছড়ার দু’পাশ ঘেঁষে শাসন, ইসলামপাড়া ও ইছামতি গ্রামে গিয়ে বালু উত্তোলনের ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। এক বালু উত্তোলন শ্রমিক আকলিস মিয়া জানান, এ বালু উত্তোলনের সাথে ভূনবীর ইউপি চেয়ারম্যান চেরাগ আলী জড়িত আছেন।
চেয়ারম্যান চেরাগ আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমি নিজেও এলাকার মানুষ হয়ে না পারি এর বিরুদ্ধে বলতে, না পারি নিজে সইতে। এখানে পাঁচ-ছয়টা পার্ট আছে। এরা হলেন ইমাম উদ্দিন, ঠান্ডা মিয়াসহ বিভিন্ন পার্টি এখান থেকে বালু তুলে তুলে নেয়। আমার দিকে আপনি খেয়াল রাইখেন; আমার কিন্তু শত্রুর অভাব নাই।
অভিযুক্ত অবৈধ বালু ব্যবসায়ী মোছাব্বির মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমি এসবের সাথে জড়িত না। চেয়ারম্যান চেরাগ মিয়া, হাওর মিয়া, আসলাম, সাদ্দামসহ আরো দুই-তিনজন এর সাথে জড়িত। এছাড়াও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা বদরুল আলম শিপলু জড়িত রয়েছেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা যুবলীগের সদস্য বদরুল আলম শিপলু বাংলানিউজকে বলেন, কেউ যদি আমার নাম উদ্দেশ্যমূলকভাবে যুক্ত করে রাখে তাহলে আমার কী করার আছে?
জাতীয় পরিষদ সদস্য, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও সাধারণ সম্পাদক, বাপা সিলেট শাখা আবদুল করিম কিম বাংলানিউজকে বলেন, বালু উত্তোলনের নামে এখানে হরিলুট চলছে। সম্পূর্ণ এলাকার পরিবেশ প্রতিবেশকে বিপন্ন করে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলনের চিত্র ভয়াবহ। আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে অবজ্ঞা করে চলা এই বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রশাসনের আরো কঠোর পদক্ষেপ দেখতে চাই।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলায় অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো সফল অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে তিনটি ট্রাক এবং তিনটি মেশিন জব্দ করা হয়েছে। আগামীতে অন্যান্য এলাকায় এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৯
বিবিবি/এমজেএফ