ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সিসা তৈরির কারখানা গিলে খাচ্ছে জীববৈচিত্র্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৪ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৯
সিসা তৈরির কারখানা গিলে খাচ্ছে জীববৈচিত্র্য সিসা তৈরির কারখানা। ছবি: বাংলানিউজ

আশুলিয়া, (ঢাকা): সাভারের আশুলিয়ায় সবুজে ঘেরা পরিবেশ-প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে সিসা তৈরির কারখানা। যা যথারীতি গিলে খাচ্ছে আশুলিয়ার জীববৈচিত্র্য।

কারখানায় রাতের আঁধারে পোড়ানো ব্যাটারি থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থের বিষক্রিয়া বাতাসের সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে পড়ছে প্রকৃতিতে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে এ এলাকায় বসবাসরত মানুষসহ গাছ-পালা, ফল ও পশু-পাখি।

এলাকাবাসীর তথ্য মতে, আশুলিয়া ইউনিয়নের শ্রীখণ্ডিয়া ও দূর্গাপুর এলাকার নির্জন এলাকায় গড়ে উঠেছে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির প্রায় ১৮টি কারখানা। একেবারে উন্মুক্ত পরিবেশে কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে কারখানাগুলো। সিসা তৈরির কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকরা।  ছবি: বাংলানিউজশ্রীখণ্ডিয়া এলাকায় অবৈধভাবে কারখানা গড়ে তুলেছেন সজিব নামে এক ব্যক্তি। পাশের গ্রাম দূর্গাপুরে আজাদ ও রেদওয়ান নামে আরও দু’ব্যক্তি প্রভাব খাটিয়ে গড়ে তুলেছেন দু’টি কারখানা। এছাড়া আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে এ ধরনের আরও অন্তত ১৮টি সিসা তৈরির কারখানা।

এদিকে দিনের পর দিন পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে প্রতিকার চেয়েও রহস্যজনক কারণে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারচ্ছেন না এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ রাসায়নিক বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকটি গরু মারা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রীখণ্ডিয়া এলাকার প্রভাবশালী আমজাদ হোসেনের মালিকানাধীন জমিতে গড়ে ওঠা কারখানায় স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে প্রায় ৮ থেকে ৯ জন শিশু। তাদের মধ্যে কেউ পুরানো ব্যাটারির উপরের অংশ তুলে ফেলছে, আবার কেউ ব্যাটারির ভেতর থেকে সিসা জাতীয় ধাতব পদার্থ বের করছে।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছয় থেকে আট হাজার টাকা বেতনে কাজ করছে তারা। দিনে একদল শ্রমিক ব্যাটারি থেকে এসব ধাতব পদার্থ বের করে, রাতে আরেকদল শ্রমিক সেগুলো মাটির গর্তে ফেলে পুড়িয়ে একটি ঘন পাত্রের রূপ দেয়। পরে সেই ঘন পাত্রগুলোকে বিভিন্ন বড় বড় ব্যাটারি তৈরি কারখানায় বিক্রয় করা হয়।

অভিযোগ করে স্থানীয় আব্দুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ছয় থেকে সাত মাস হবে অবৈধ সিসা তৈরির কারখানাগুলো গড়ে তোলা হয়েছে। এসব কারখানায় পরিত্যক্ত ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হয়। ফলে নির্গত ধোঁয়ার মাধ্যমে বিষাক্ত রাসায়নিক আশপাশে ছড়িয়ে পড়ায় গাছপালা শুকিয়ে যাচ্ছে। এমনকি গাছের ফুল-ফল পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ইব্রাহিম হোসেন নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, গত কয়েক দিনে কারখানার আশপাশে গরুকে ঘাস খাওয়ানোর কারণে বেশ কয়েকটি গরু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এতে করে মারাত্মকভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রশাসন তাদের দিকে নজর দেয়নি। কারণ পুলিশ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অসাধু এ ব্যবসায়ীদের এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট করতে সাহায্য করছেন। সিসা তৈরির কারখানার ধোঁয়ায় গরুর মৃত্যু।  ছবি: বাংলানিউজএসব অভিযোগের সত্যতা জানতে চাইলে সিসা কারখানার মালিক সজিব, সুমন বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাটারি পোড়ানোর কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে এমন তথ্য আমাদের জানা নেই। এলাকাবাসীর অনেকেই আমাদের নামে চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছেন। বুঝি না কেনো তারা এসব করেন।

এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা এড়িয়ে যান।

তবে, অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে শিগগিরই অবৈধ কারখানাগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজুর রহমান।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শ্রীখণ্ডিয়া ও দূর্গাপুর এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠা সিসা তৈরির কারখানার ব্যাপারে তিনি অবগত নন। তবে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিসা তৈরির কারখানা।  ছবি: বাংলানিউজএ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরিবেশ বিজ্ঞান অনুষদের প্রভাষক নন্দিতা সরকার বলেন, আবাসিক এলাকায় এসব কারখানা গড়ে উঠা মোটেও ঠিক হয়নি। ব্যাটারিতে এসিড জাতীয় পদার্থ থাকে যা  হাতে লাগলে মানুষের ক্ষতি হয়। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভের শিশুর উপর প্রভাব ফেলে। এসব কারখানা বন্ধের ব্যাপারে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৬৩ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৯
ওএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।