ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

দৃষ্টিনন্দন ‘মে ফ্লাওয়ার’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৮ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৯
দৃষ্টিনন্দন ‘মে ফ্লাওয়ার’

মৌলভীবাজার: দেখলে মনে হয় পুরো একটি আস্ত ফুল। কিন্তু আসলে কি তাই? না, আসলে তা নয়। এই বৃত্তটি আস্ত একটি ফুল নয়। অনেকগুলো ফুলের সমন্বয় গঠিত অপূর্ব ‘মে ফ্লাওয়ার’। রক্তিম শোভায় উজ্জ্বল হয়ে প্রকৃতিতে দারুণ সৌন্দর্য ছড়ায় সে।

সারা বছর মাটির নিচে ঘুমিয়ে থাকে এই ফুল গাছের কাণ্ড। মে মাস এলেই সে কীভাবে যেন টের পেয়ে যায়! তারপর মাটি ভেদ করে মাথা উঁচু করে সেই বৃত্তাকার ফুলটি জানান দেয় তার আপন অস্তিত্ব।


 
প্রায় ২শ ফুলের সমন্বয়ে গঠিত সেই ‘মে ফ্লাওয়ার’ এর পুষ্পবৃত্ত। একেকটি ফুলের রয়েছে ৬টি পাপড়ি আর ৭টি পুংকেশর। যা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে রয়েছে। ফুলটির স্থায়ীত্ব প্রায় এক সপ্তাহকাল। শ্রীমঙ্গল উপজেলার মাস্টারপাড়া আবাসিক এলাকার ‘বিজয় কুটির’ থেকে এ ছবিগুলো তোলা।
 
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ও উদ্ভিদ গবেষক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ইংরেজি নাম Blood Lily। এর বৈজ্ঞানিক নাম  Scadoxus multiflorus এবং পরিবার Amarllidaceae। এই গাছের বৈশিষ্ট্য হলো- প্রথমে ফুল আসে; তারপর পাতা আসে।
 
ফুলটির নামকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটার কাণ্ড সারাবছর মাটির নিচে থাকে। ইংরেজি মে মাসেই মাটি ভেদ করে ফুলটি বের হয়। এ Amarllidaceaeপরিবারের কোনো একটা ভ্যারাইটি মে মাসের শুরুতে ফোটে বলে এ জাতীয় ফুলগুলোর নাম ‘মে ফ্লাওয়ার’ রাখা হয়েছে। তবে সবগুলো মে মাসের প্রথম তারিখে ফোটে না।  
‘মে ফ্লাওয়ার’ এর দৃষ্টিনন্দন পুষ্পবৃত্ত ।  ছবি: বাংলানিউজ‘একটি বৃত্তে অসংখ্য ফুলের আমবেল জাতীয় গোলাকার পুষ্পবিন্যাস। এ বিন্যাসে ২শটির মতো ফুল একত্রে মিশে থাকে। ফুলগুলোর মাথায় হলুদ রঙের পুংকেশর থাকে। গাছটির প্রকৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি Bulbous Plant অর্থাৎ, পেঁয়াজের মতো অংশ থাকে নিচে। অনেকগুলো আবরণের সমষ্টি হলো পেঁয়াজ। পেঁয়াজে যেভাবে অনেকগুলো আবরণ থাকে; তেমনি এই গাছটিতেও। এই আবরণগুলোকে ‘ভাল্বাস’ বলে। ’
 
ওষুধিগুণ সম্পর্কে ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, এটা কিন্তু ‘পয়জনাস প্লান্ট’ অর্থাৎ, কিছুটা বিষাক্ত জাতীয় উদ্ভিদ। যেসব ছাগল বা ভেড়া এর পাতা খায় তাদের শরীরে কিন্তু বিষক্রিয়া হয়। আফ্রিকাতে এইবৃক্ষটির কস বা রস ‘অ্যারো-পয়জন’ শিকারের তীরের মধ্যে এর কস ব্যবহার এবং মাছ ধরতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ‘ফিসিং-পয়জন’ অর্থাৎ মাছ শিকারের এর ব্যবহার হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী ওষুধেও এ বৃক্ষটি ব্যবহার করা হয়।
 
সাউথ আফ্রিকা, ওয়েস্ট অফ্রিকা, ঘানা, আইভরিকোস্ট, সাইবেরিয়া, মেক্সিকো প্রভৃতি দেশে এই মে ফ্লাওয়ারটির বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। এটি আমাদের দেশের বনাঞ্চল বা বনভূমির উদ্ভিদ নয়। আমাদের দেশের সৌখিন বৃক্ষপ্রেমীরা এ ফুলটিকে টবে লাগান বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর এবং উদ্ভিদ গবেষক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ১০২১ ঘণ্টা, ১৬ মে, ২০১৯
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।