ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বঙ্গোপসাগরে নির্বিচারে হাঙর নিধন

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৯
বঙ্গোপসাগরে নির্বিচারে হাঙর নিধন

বাগেরহাট: বঙ্গোপসাগরে নির্বিচারে বিভিন্ন জাতের হাঙর ধরছেন জেলেরা। সাগর থেকে ধরা এসব হাঙর বিভিন্ন মাছের আড়ৎ ও সুন্দরবনের শুঁটকি পল্লিতে বিক্রি হয় চড়া দামে। এগুলো শুঁটকি হয়ে চলে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ও বিদেশে। আইনে নিষিদ্ধ থাকলেও চড়া দামের জন্য জেলেরা অন্যান্য মাছের সঙ্গে হাঙরও ধরছেন। যে কারণে দিন দিন বঙ্গোপসাগরে কমছে হাঙরের সংখ্যা। 

বিশেষজ্ঞদের দাবি, নির্বিচারে হাঙর ধরলে একসময় বঙ্গোপসাগর থেকে হাঙর বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে হাঙর নিধন বন্ধে প্রচার-প্রচারণা ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেছে বন বিভাগ।

বাগেরহাট কেভি মৎস্য আড়তে মাছ বিক্রি করতে আসা জেলেরা বাংলানিউজকে বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরে মাছ ধরি। ইলিশসহ যত ধরনের মাছ আমরা পাই তা বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করি। মাছ বিক্রির অর্থের বেশিরভাগই ট্রলার মালিকরা নিয়ে যায়। আমাদের কষ্টের দাম পাই না।  

তারা বলেন, মাছ ধরার সময় জালে কামট (হাঙর), শাপলাপাতা ও গোলপাতা মাছও ধরা পড়ে। এসব বিক্রির টাকা মালিককে দেওয়া লাগে না। তাই সব সময় চাই যাতে জালে বেশি কামট ও গোলপাতা মাছ ধরা পড়ুক।

পাথরঘাটার জেলে কবির ও হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এক সময় বঙ্গোপসাগরে প্রচুর পরিমাণে কামট পাওয়া যেত। তবে এখন খুবই কম ধরা পড়ে। কামট, গোলপাতা ও শাপলাপাতা মাছ বিক্রির টাকা মালিকরা নেন না। এজন্য জেলেরা এগুলো বেশি করে ধরে। এগুলো থেকে আমাদের ভালো আয় হয়।

জেলেরা জানান, একটি বড় কামটের ওজন প্রায় ৪-৬ মণ। একটি বড় কামট ধরতে পারলে তা ৩০-৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। এছাড়া ছুড়ি (ছোট) কামট আকার অনুযায়ী ২০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি। সপ্তাহখানেক বঙ্গোপসাগরে থাকলে প্রায় পাঁচ শতাধিক ছোট কামট ধরা পড়ে জালে। ভাগ্য ভালো হলে অনেক সময় দু’একটি বড় কামটও পেয়ে যাই। এগুলো পাথরঘাটা, পাড়ের হাট ও বাগেরহাট কেভি বাজার মৎস্য আড়তে বিক্রি করি। এছাড়া সুন্দরবনের দুবলার চরের শুঁটকি পল্লিতেও কামট বিক্রি করি।

এসব হাঙরের শুঁটকি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয় চড়া দামে। চীনসহ বিভিন্ন দেশে হাঙরের পাখনার রয়েছে অত্যাধিক চাহিদা। অভিজাত হোটেলগুলোতে বেশিদামে হাঙরের পাখনা কেনা হয় বলে জানান জেলেরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাগেরহাট উপকূলীয় মৎস্যজীবী সমিতির এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, বাগেরহাট কেভি বাজারে সামান্য কিছু কামট বিক্রি হয়। মূলত হাঙরকে বাঁচাতে হলে সুন্দরবনের দুবলার চরে হাঙর শুকানো ও আহরণ বন্ধ করতে হবে।

হাঙরের শুঁটকি শুকানো হচ্ছে।  ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট কেভি বাজার মৎস্য আড়তে জেলেদের বিক্রি করা হাঙর বাগেরহাটের পুটিমারী এলাকায় দড়াটানা নদীর চরে শুকিয়ে শুঁটকি করে চট্টগ্রামে পাঠান এক ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, কেভি বাজার থেকে আমরা ছুরি কামটগুলো কিনি। এগুলো শুকিয়ে চট্টগ্রামে পাঠাই। বর্তমানে তিন মাসের মৌসুমে অল্পকিছু কামট পাই। তাই এর পাশাপাশি লইট্টা মাছ শুঁটকি করে পাঠাই।

বড় কামট পান কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে প্রচুর পরিমাণ পেতাম। এখন অনেক কম পাই। এখন আমার কাছে চারটি বড় কামট আছে। তিনটি স্লাইচ করে শুকাতে দিয়েছি। আর একটি আছে, কাল শুকাবো।

তিনি আরও বলেন, বাগেরহাট বাজারে কামট অনেক কম পাওয়া যায়। বরিশাল, পাথঘাটা, বরগুনা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মৎস্য আড়তে অনেক বেশি কামট বিক্রি হয়। আপনারা সেখানে যোগাযোগ করতে পারেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ আব্দুর রউফ বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা অঞ্চলের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে হাঙর কম পাওয়া যায়। কিন্তু চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে অনেক বেশি হাঙর পাওয়া যায়। ওইসব অঞ্চলে অনেক জেলে আছেন যারা শুধু হাঙর ধরতেই সমুদ্রে যায়। তবে বঙ্গোসাগরের বাংলাদেশি সীমানায় কী পরিমাণ হাঙর রয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। এগুলোর স্টক অ্যাসেসমেন্ট করা প্রয়োজন। এই প্রজাতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বঙ্গোপসাগরের হাঙরের ওপর অধিক গবেষণা প্রয়োজন।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে ডলফিন, হাঙরসহ অনেক প্রজাতির প্রাণী ধরা অপরাধ। জেলেরা যাতে হাঙর না ধরে এজন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের সচেতনামূলক প্রচার-প্রচারণা করে থাকি। এছাড়া কোনো জেলের নৌকায় হাঙর থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, ডলফিন প্রকল্পের আওতায় ২ ডিসেম্বর থেকে সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরে হাঙর, ডলফিনসহ আহরণ নিষিদ্ধ প্রাণী না ধরার জন্য দুবলার চর শুঁটকি পল্লিতে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হবে। এছাড়া যদি কোথাও হাঙরের শুঁটকি করে থাকে তাহলে সেখানে অভিযান চালানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৯
এমআইএইচ/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।