ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সেন্টমার্টিন রক্ষায় নীতিমালা চূড়ান্ত হচ্ছে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২২
সেন্টমার্টিন রক্ষায় নীতিমালা চূড়ান্ত হচ্ছে

কক্সবাজার: দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন রক্ষায় নীতিমালা চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে সরকার।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) নীতিমালার প্রস্তুতকৃত খসড়া পর্যালোচনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সভাকক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

দ্বীপ রক্ষায় ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা এবং টেকসই পর্যটন নীতিমালা ২০২২’ শিরোনামে নীতিমালাকে ঐতিহাসিক বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা। তবে নীতিমালাটির পর্যটক যাতায়াত সীমিতকরণসহ কিছু অংশের বিরোধিতা করছেন টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটের জাহাজ ব্যবসায়ী এবং সেন্টমার্টিনের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। পরিবেশবাদীরা বলছেন, শুধু মাত্র ব্যবসা করে অর্থ আদায়ে ব্যস্ত হওয়ার স্বার্থে এর বিরোধিতা।

নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভিত শিলার ওপর বালি ও সামুদ্রিক শামুক-ঝিনুক চূর্ণ জমা হয়ে গঠিত হয়েছে। অবস্থান এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে দ্বীপ সংলগ্ন এলাকাটি প্রবাল সমৃদ্ধ। সরকার ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল ৫২৯ হেক্টর আয়তনের দ্বীপটিকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। সরকার ২০২২ এর ৪ জানুয়ারি বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-এর ধারা ১৩ (১) ও ১৩ (২)-এর ক্ষমতাবলে বৈশ্বিকভাবে হুমকির সম্মুখীন প্রবাল, গোলাপি ডলফিন, হাশর, রে মাছ, সামুদ্রিক কাহিন, সামুদ্রিক পাখি, সামুদ্রিক ঘাস এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও এদের আবাসস্থল সংরক্ষণ; সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই আহরণের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকার মানোন্নয়ন; ব্লু ইকোনমি সমৃদ্ধকরণ এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিঙ্গি ১৪) অর্জনের লক্ষ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপ প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার অতিরিক্ত এক হাজার ৭৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ৭০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত এলাকাকে সেন্টমার্টিন মেরিন প্রটেক্টেড এলাকা ঘোষণা করে।

কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন, অনাবাসী ব্যক্তিদের অধিক গমনাগমন ও অবস্থান, ক্রমবর্ধমান দূষণ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের কারণে সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। দ্বীপের স্থায়ী বাসিন্দাদের পেশাগত ও প্রথাগত জীবন-জীবিকার উন্নয়ন, ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কৃতির লালন, সংরক্ষণ ও উৎকর্ষ সাধন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেন্টমার্টিনের অনেক এলাকায় জীবন্ত প্রবালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণাংশে অবস্থিত ছেঁড়াদিয়া দ্বীপের চতুর্দিকে এখনও বিরাজমান জীবিত প্রবালসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এ দ্বীপকে অধিগ্রহণপূর্বক সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করলেও অবৈধভাবে অসংখ্য পর্যটক ছেঁড়াদিয়া দ্বীপে যাতায়াত করছেন। বর্ণিত প্রেক্ষাপটে, সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি টেকসই পর্যটন, স্থানীয় বাসিন্দাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দ্বীপ ও সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবহার বিষয়ে একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়।

নীতিমালার ১৩টি অংশে বিভিন্ন নির্দেশনা রয়েছে। যেখানে নীতিমালার শিরোনাম, প্রবর্তন, উদ্দেশ্য, সংজ্ঞা, প্রয়োগ, ভূমি ব্যবহার ও অবকাঠামো নির্মাণ, পর্যটক ও পরিবহন ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, কতিপয় ক্ষেতে পূর্বানুমতি, তহবিল, কমিটি, প্রতিবেদন ও অস্পষ্টতা দূরীকরণের কথা উল্লেখ রয়েছে। বুধবার বৈঠকে খসড়াটি চূড়ান্ত হলে তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রচারের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে।

১৩টি নীতিমালার মধ্যে কিছু অংশের বিরোধিতা করছেন টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটের জাহাজ ব্যবসায়ীরা।  সী ক্রুজ অপারেটরস্ ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সভাপতি তোফায়েল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, দেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষেরা স্বল্প খরচে কক্সবাজার হয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপটি ভ্রমণ করে যেতে পারে। কিন্তু পর্যটক সীমিত ও নিবন্ধন করার বিষয়টি বাস্তবায়িত হলে দেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষেরা বিদেশে গিয়ে দেশের অর্জিত অর্থ অপচয় করবে।

বুধবার (২২ জুন) দুপুরে সাগরপাড়ের একটি হোটেল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পর্যটকবাহী জাহাজ মালিক সংগঠন সী-ক্রুজ অপারেটরস অনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব) নেতারা বলেন, বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের স্বার্থে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ সীমিত না করে জীব-বৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ নিশ্চিতে নীতিমালা প্রণয়ন করার দাবি জানাচ্ছি।

তবে ভিন্ন কথা বলছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। কক্সবাজারের পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, মূলত পর্যটন সংশ্লিষ্ট নয় এমন কিছু ব্যবসায়ী পর্যটন মওসুম শুরু হলেই ফিটনেসবিহীন ও সাগরে চলাচলের উপযোগী নয় এমন লক্কর ঝক্কর মার্কা লঞ্চ ভাড়া নিয়ে সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটক বহনের ব্যবসায় লিপ্ত হন। মূলত এসব ব্যবসায়ী সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানান, নীতিমালার খসড়ায় যেসব বিষয় উঠে এসেছে তা সেন্টমার্টিন রক্ষায় ঐতিহাসিক এবং যুগোপযোগী একটি নীতিমালা হবে। যেখানে পর্যটক যাতায়াত, জাহাজ চলাচল, শব্দ দূষণ রোধ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামোসহ সব বিষয়ে উঠে এসেছে। এটার বিরোধিতা করার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি মনে করেন, দ্বীপে ১২ হাজার বাসিন্দা রয়েছে। যেখানে ৯০০ পর্যটক যাওয়াও ঝুঁকির। এর চেয়ে আরও কম পর্যটক গেলে দ্বীপের জন্য মঙ্গল।

পর্যটন সেবার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের (বাপা) কক্সবাজার কমিটির সদস্য কলিম উল্লাহ জানান, সেন্টমার্টিন রক্ষায় অবশ্যই নীতিমালা জরুরি। অনেক দেরি হলে তা হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২২
এসবি/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।