ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

মাছ কম, খরচ উঠছে না লক্ষ্মীপুরের জেলেদের

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২২
মাছ কম, খরচ উঠছে না লক্ষ্মীপুরের জেলেদের

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মতিরহাট এলাকার জেলে খোকন মাঝির ট্রলার নিয়ে চার জেলে গিয়েছিরেন নদীতে মাছ ধরতে।  

একদিনে নৌকার জ্বালানিসহ সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

সারাদিন মেঘনায় জাল ফেলে ইলিশ মিলেছে মাত্র আটটি। তা-ও আকারে ছোট। ঘাটে এসে সেই মাছ বিক্রি করতে হয়েছে মাত্র ৬০০ টাকায়। এতে ওই ট্রলার মালিকের প্রায় তিন হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।  

একই উপজেলার নাছিরগঞ্জ এলাকার কাশেম মাঝি সাতজন জেলেকে নিয়ে নিজের ট্রলারে করে সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন। চারদিন সাগরে থেকেছেন তারা। ট্রলারের জ্বালানি এবং তাদের বাজার-সদাইসহ খরচ হয়েছে ২১ হাজার টাকা। এ ক’দিনে যে মাছ পেয়েছেন, তা বিক্রি হয়েছে ১৭ হাজার টাকায়।  

সোমবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর বেশ কয়েকজন জেলে বাংলানিউজের কাছে মাছ শিকারের এমন চিত্র তুলে ধরেন।  

তারা জানান, নদীতে মাছের সংখ্যা একেবারে কমে গেছে। ফলে তাদের পোষাচ্ছে না। অনেকে ট্রলারের জ্বালানি এবং অন্যান্য খরচ করে নদীতে যাচ্ছেন। কিন্তু জালে আশানুরূপ মাছ ধরা না পড়ায় হতাশ জেলেরা। অন্যদের অবস্থা দেখে অনেক জেলে নিষেধাজ্ঞার পর থেকে এখনো মাছ ধরতে যাচ্ছেন না।

মাছের আকালের কারণ হিসেবে জেলেরা বলছেন, নদীতে পানি একেবারে কমে গেছে। অনেক স্থানে চর পড়েছে। ইলিশ গভীর পানির মাছ। মা ইলিশ ডিম ছেড়ে দিয়ে গভীর সাগরে চলে গেছে। তাই এ মুহূর্তে নদীতে ইলিশ তেমন নেই বললেই চলে।  

তারা আরও জানার, শীত চলে আসছে। এ সময়টাতে এমনিতেই নদীতে মাছ কম থাকে। তবে শীতে পোয়া মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু ইলিশের জালে পোয়া মাছ ধরা পড়ে না। যাদের পোয়া মাছের জাল আছে, তাদের জালে সে মাছ ধরা পড়ে।  

লক্ষ্মীপুর সদরের চররমনী মোহন এলাকার ট্রলার মালিক গিয়াস উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, নদীতে মাছের পরিমাণ কম, তাই এবার নিষেধাজ্ঞা শেষেও নদীতে যাইনি।  

সোমবার বিকেলে জেলার সদর উপজেলার মজুচৌধুরীর হাট মাছঘাট, কমলনগরের মতিরহাট, নাজিরগঞ্জ ও নবীগঞ্জ মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে, ঘাটগুলোতে আগের মতো মাছের প্রাচুর্য নেই। ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমও কম। হাঁকডাক নেই। মাঝে মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু জেলেনৌকা নদীর ঘাটে। সামান্য কিছু মাছ এনে তারা ঘাটের বাক্সতে এনে ডাকে বিক্রি করেন।

মতিরহাট এলাকার জেলে আবদুর রহমান বলেন, ছোট নৌকা দিয়ে মেঘনায় বাপ-ছেলে মিলে মাছ ধরি। সারাদিনে ১১টি জাটকা ইলিশ পেয়েছি, সেগুলো ৭৭৫ টাকায় বিক্রি করেছি। পোয়া মাছ বিক্রি করেছি আড়াইশ’ টাকার।  

বাক্স মালিকরা জানিয়েছেন, মাছের সংখ্যা একেবারেই কম। জেলেদের খরচও উঠছে না। তাই অনেক জেলে নদীতে যেতে চান না।  

মতিরহাট মাছ ঘাটের বাক্স মালিক আইয়ুব আলী বাংলানিউজকে বলেন, ৬ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের অভয়াশ্রমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রথম কয়েকদিন নদীতে মাছ মিলেছে ভালোই। ঘাটগুলোতে অনেক মাছ বিক্রি হয়েছে। ঘাটে প্রচুর লোক সমাগমও ছিল। কিন্তু এখন সারাদিন ঘাটে বসে থাকতে হয়। মাঝে মধ্যে দুই-একটি ট্রলার-নৌকা নদী থেকে মাছ নিয়ে ঘাটে আসে। মাছ কম হওয়ায় দাম গত কয়েকদিনের চেয়ে কিছুটা বেশি।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. সারোয়ার জামান বাংলানিউজকে বলেন, শীতে একটু মাছ কম পাওয়া যায়। আবার লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর অংশে গভীরতা কম। সে কারণে এ অঞ্চলে মাছ কিছুটা কম থাকতে পারে। তবে নদীর গভীরে মাছ পাচ্ছেন জেলেরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০২২
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।