ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

হারিয়ে যাচ্ছে মহারাজার আমলের ঢোপকল

মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩
হারিয়ে যাচ্ছে মহারাজার আমলের ঢোপকল

দিনাজপুর: মহারাজা গিরিজানাথ রায় বাহাদুরের আমলের যেসব নিদর্শন বা স্থাপনা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে ঢোপকল অন্যতম। শহরবাসীর সুপেয় পানির জন্য নির্মাণ করা হয় ঢোপকলগুলো।

তবে সময়ের বিবর্তন আর অযত্ন-অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে সেই ঢোপকলগুলো। পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে ঢোপকল সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন একদল স্বেচ্ছাসেবক।  

প্রথমে দিনাজপুর শহরের বুটিবাবুর মোড় এলাকায় নির্মিত ঢোপকলটি সংস্কার করে ‘বিউটিফুল দিনাজপুর’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ। পরে একে একে শহরের ডাবগাছ মসজিদ মোড়, লালবাগ চৌরাস্তার মোড়, কালিতলা থানা মোড়ে নির্মিত ঢোপকলগুলো রং দিয়ে রাঙিয়ে তোলেন ওই ফেসবুক গ্রুপের সদস্যরা। সংস্কার করা ঢোপকলগুলোর পানি অনেকেই পান করছেন। স্থানীয়রা ছাড়াও নানা কাজে এসব ঢোপকলের পানি ব্যবহার করছেন পথচারীরা। পৌরসভার পানির লাইন থেকে এসব ঢোপকলে পানি আসে। ঢাকনা থাকায় ময়লা যায় না পানিতে। যার যখন প্রয়োজন, ট্যাপ খুলে পানি খেতে পারে, নিতে পারে।

বুটিবাবুর মোড়ের দোকানদার হাফিজ উদ্দিন বলেন, আগে তো এ ঢোপকলের পানি খাইতাম। দোকানে পানি লাগলেও ঢোপকল থেকে পানি নিতাম। এক যুগের বেশি সময় ধরে এটি অবহেলায় পড়ে ছিল। এখন তো কয়েকজন ছেলে মিলে রং করল। দেখতেও সুন্দর লাগছে। আবার পানি খেতে পারব আমরা। আমাদের অনেক সুবিধা হবে।

ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন, হঠাৎ করে দেখি ঢোপকলটা রং করা। এখান থেকে পানি খেলাম, সবজিতে পানি দিলাম। রাস্তার পাশে এমন বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছি, আমাদের মতো সাধারণ পথচারীদের জন্য অনেক সুবিধা হলো। আগে শহরের বিভিন্ন মোড়ে ঢোপকল ছিল। এখন তো মাত্র কয়েকটা টিকে আছে।

বিউটিফুল দিনাজপুর গ্রুপের সদস্য সিফাত বলেন, ঢোপকলগুলো মহারাজার আমলের প্রাচীন নিদর্শন। এগুলো দীর্ঘদিন ধরে অযত্নে আর অবহেলায় পড়েছিল। দেখতে খুব খারাপ লাগত। তাই আমরা গ্রুপের সদস্যরা মিলে ঢোপকলগুলো পরিষ্কার করে রং করে দিয়েছি। এখন সবাই এ ঢোপকলগুলো ব্যবহার করতে পারবে।

‘বিউটিফুল দিনাজপুর’ গ্রুপের অ্যাডমিন মাজেদুল ইসলাম বলেন, সুপেয় পানির জন্য মহারাজার আমলে ২৫টির মতো ঢোপকল নির্মাণ করা হয়। সময়ের ব্যবধানে বর্তমানে হাতেগোনা চার থেকে পাঁচটি ঢোপকল আছে। সেগুলোও ব্যবহার উপযোগী না থাকায় গ্রুপের সদস্যরা মিলে ঢোপকলগুলো রং করে দিয়েছি। আমরা চেষ্টা করেছি, ঐতিহ্য ধরে রাখতে।  

উল্লেখ্য বাংলাদেশের মাত্র দুটি জেলায় ঢোপকল নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৩৭ সঙ্গে  মহারানি হেমন্ত কুমারীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে রাজশাহী শহরে প্রথম ঢোপকল নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৪০ সালে তৎকালীন মহারাজার আমলে দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা হয় ২৫টি ঢোপকল।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।