ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

জুড়ীর সুস্বাদু বাতাবি লেবুর ‘খোসা ছোলানো’ সহজ

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২৩
জুড়ীর সুস্বাদু বাতাবি লেবুর ‘খোসা ছোলানো’ সহজ গোলাপি রঙের বাতাবি লেবু। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: কোনো কোনো পণ্যের এলাকাভিত্তিক সুনাম থাকেই। কৃষিজাত রসালো পণ্য বাতাবি লেবু।

গোলাকৃতি ধাচের এটি ফলপ্রেমীদের কাছে এতটাই গুরুত্ববহ যে, গাছে ঝুলে থাকলে দেখলেই তারা খাবার লোভে পড়ে যান।  

বাতাবি লেবুর স্থানীয় নাম ‘জাম্বুরা’। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে এ নামই বেশি ব্যবহৃত। এখানকার মানুষ ‘জাম্বুরা’ বলেই ফলটির নামকরণ করেছেন। গোলাপি রঙের শাঁসের ভেতর ভরপুর টক-মিষ্টি স্বাদ। ‘ভিটামিন সি’ সমৃদ্ধ এ ফলটির বেশ কদর রয়েছে মানুষের কাছে।

ভৌগলিক এবং প্রকৃতিগত কারণে মৌলভীবাজারের জুড়ীর উপজেলার বাতাবি লেবু স্বাদে-রসে পরিপূর্ণ। এছাড়াও এর ওপরে আবরণ বা খোসা ছোলানোও খুব সহজ। জুড়ী উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতি বছরের মতো এবারও বাতাবি লেবুর ভালো ফলন হয়েছে। ফলে আশানুরূপ দাম পাওয়ায় স্থানীয় চাষিদের মধ্যে বাড়ছে আগ্রহ। পাহাড়ি এলাকার টিলাতে এর ফলন খুব ভালো।

উপজেলায় সুনির্দিষ্ট এলাকায় এবং আশেপাশের বিস্তীর্ণ ও পতিত ভূমিতে বাণিজ্যিকভাবে জাম্বুরা চাষ হয়। কলম করে চারা রোপণ করলে দুই-তিন বছরের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়। বীজের চারা থেকে ফলন আসতে পাঁচ-ছয় বছর সময় লেগে যায়। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে প্রতি হেক্টরে ১৫-২০ টন ফলন পাওয়া সম্ভব বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জুড়ী উপজেলার হায়াছড়া, শুকনাছড়া, জামকান্দি, দুর্গাপুর, গোবিন্দপুর, বিনোদপুর, লালছড়া, রোপাছড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের টিলাবাড়ি বা বসতবাড়ির আশপাশের প্রায় ৬৬ হেক্টর জমিতে প্রায় ১০ হাজার জাম্বুরা গাছ।

তিন-চার একর জায়গায় বাতাবি লেবু চাষ করছেন কৃষক জামাল। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার ১১০টি জাম্বুরা গাছ আছে। বড় সাইজের জাম্বুরা ৫০-৬০ টাকা। মাঝারি সাইজের জাম্বুরা ৩০-৪০ টাকা এবং ছোট সাইজের জাম্বুরা ১৫- ২০ টাকায় বিক্রি করি। প্রতিবছর গড়ে প্রায় দুই লাখ টাকার জাম্বুরা বেচে আসছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ১১০টি গাছের মধ্যে সবগুলো এক বয়সের নয়। কোনো কোনোটা আমার আব্বার আমলের গাছও রয়েছে। সেগুলোর গড় বয়স ৪০ বছর। আর আমি যেগুলো লাগিয়েছি সেটার বয়স গড়ে ২০ বছর। আমি জুড়ী বাতাবি লেবু-১ এবং জুড়ী বাতাবি লেবু-২ জাতেরই বেশি গাছ লাগিয়েছি। এগুলোরই ফলন খুব ভালো।  

অতিরিক্ত বিপণন খরচের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাগান থেকে গাড়িতে নিতে প্রতিটি জাম্বুরার বাড়তি খরচ সাত টাকা গুনতে হচ্ছে। রাস্তা ভালো থাকলে এই বাড়তি খরচ আমাদের লাগতো না। এছাড়াও পানির সেচের সুব্যবস্থা থাকলে আরও বেশি জাম্বুরা উৎপাদন সম্ভব।  

আমাদের এখানকার জাম্বুরা সিলেট, চট্টগ্রাম, ভৈরব এবং ঢাকার কারওয়ান বাজারে যায়। সেখানে জাম্বুরার ভালো চাহিদা রয়েছে আর দামও ভালো পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।  

জুড়ী উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, সুস্বাদু ও রসালো বলে আমাদের জুড়ীর বাতাবি লেবুর অনেক কদর। বলা যেতে পারে সারা দেশেই এর চাহিদা। জুড়ী বাতাবি লেবু-১ এবং জুড়ী বাতাবি লেবু-২ এই দুই জাতের চাহিদা সব থেকে বেশি। এছাড়াও বারি বাতাবি লেবু-৫, বারি বাতাবি লেবু-৬ ও স্থানীয় উচ্চ জাতও চাষা হচ্ছে। লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় এ দুটো জাত এখানে বেশি চাষ হচ্ছে। এছাড়াও জাত দুটি কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে দেশব্যাপী সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

এলাকার কৃষক সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের আবাদ করা জমি প্রায় ৬৬ হেক্টর। ৪৫ কৃষক বাগান আকারে করছেন ২৫ হেক্টর। এছাড়া বিছিন্নভাবে ৪৬৭ কৃষক বাতাবি লেবু চাষ করছেন ৪১ হেক্টর জায়গাজুড়ে।  

জুড়ী বাতাবি লেবু-১ গোলাকৃতি এবং ভেতরটা টকটকে লাল হয়ে থাকে। আর জুড়ী বাতাবি লেবু-২ এর মাথার অংশটা একটু লম্বাটে এবং ভেতরটা গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। দুটো প্রজাতিরই ওপরের খোসা ছড়ানো অনেকটা সহজ।  

অন্যান্য বাতাবি লেবুর মতো জোর দিয়ে টানতে হয় না বলে জানান এ কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০২৩ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।