ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

চা বাগানে হরিণের সাথে দেখা! 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২৪
চা বাগানে হরিণের সাথে দেখা!  চা বাগানে ঘুরে বেড়ানো মায়াহরিণ। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: হরিণ প্রতীকের এক নির্বাচনের কথা মনে পড়ে গেল! বহু বছর আগের কথা। তবু স্মৃতিতে আজও উজ্জ্বল।

সময়টাকে তুলে ধরতে হলে ফিরে যেতে হবে প্রায় দুই ১০ পেছনে। তখন আমাদের এলাকায় চলছিল পৌরসভা নির্বাচন। আমাদের এলাকার এক শুভানুধ্যায়ী জনপ্রতিনিধির প্রতীক ছিল ‘হরিণ’!

যথারীতি নির্বাচন হলো তিনি জয়ী হলেন। সেদিন তার তাৎক্ষণিক অভিব্যক্তি প্রকাশে তিনি বলেছিলেন, ‘...হরিণ যেভাবে দৌঁড়ঝাপ দিয়ে ছুটে চলে আপনাদের সবার সহযোগিতায় আমার এ বিজয়টিও সেভাবে ছুটে এসেছে। ...’ অর্থাৎ তিনি সেদিন বুঝাতে চলেছিলেন হরিণের দ্রুতবেগে ছুটে চলার গতি। হরিণের গতি, সাফল্যের গতি আর নির্বাচনের গতি সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল ভোটাধিকারের প্রতিটি পর্বে।

স্থানীয়দের কাছে বহুদিন ধরেই শুনে আসছিলাম চা বাগানের ওই এলাকাটাতে খুব ভোরে হরিণ নামে। হরিণ মনে মায়া হরিণ। চা বাগানে মায়া হরিণ এক দুস্প্রাপ্য বন্যপ্রাণী। কিছুতেই সহজে দেখা যায় না। পাহাড়ি বনে হয়তো মাঝে মাঝে দেখা যায়। বহুদিন বহুবার চা বাগানের ওই বিশেষ স্থানটিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলাম প্রাকৃতিক চিরসজীব সম্ভার ‘হরিণকে’ একপলক দেখার জন্য। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি।



শীতঋতু প্রকৃতিতে প্রভাব বিস্তার করে আছে এখন। এই শীতের বাস্তব প্রেক্ষাপট কুয়াশা চা বাগানের এক অতি বিরক্তিকর ঝামেলা এখন। ভোরের মৃদু আলোয় বা পাখিডাকা সকালে বনপ্রান্তরে বন্যপ্রাণীদের দেখতে বের হলেই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এই কুয়াশার আবরণ। চা বাগানে কুয়াশা পড়লেই পাখি এবং বন্যপ্রাণীরা বের হয় না। ফলে অরণ্যভ্রমণ বৃথা হয়।
সেদিনটি ছিল ২০২৩ সালের সমাপ্তি-দিবস। সকালটি ঘিরে কুয়াশা বেশি পড়েনি। বেশিরভাগ দিনের মতো বন্যপ্রাণীদের দেখতে বের হলাম। বহুদিন যেহেতু হরিণ দেখার আশা নিয়ে বের হওয়েও হরিণের দেখা পাইনি। তাই হরিণের আশা ছেড়েই বের হলাম। মনের কোণে আশায় বুক বেঁধেছিলাম বুনো খরগোশ, বন্যশূকর আর শীতের পরিযায়ী পাখিদের নিয়ে। যদি সৌভাগ্যক্রমে মিলে যায়! তখনই সার্থক হবে প্রাণভরে দেখার পালা।

কী আশ্চর্য! সেদিন ওই প্রান্তরে পা রাখা মাত্রই দেখলাম চা বাগানের এক কোণে মায়া হরিণ! সবুজ প্রকৃতিতে এমন দুষ্প্রাপ্য দৃশ্য দেখে হৃদয় ভরে উঠল! মৃদু কুয়াশার চাদরের ভেতর এক মায়ামৃগ আপন মনে গভীর সঙ্গোপনে ঘাস খেয়ে চলেছে। আহা! কী অপরূপ সেই সৌন্দর্য! এমন দৃশ্য দেখার জন্যই অপেক্ষমাণ ছিলাম দিনের পর দিন।

দুর্ভাগ্য যে, আমার অপ্রত্যাশিত উপস্থিতি সে দ্রুতই টের পেয়ে গেছে। এখানেই বন্যপ্রাণীদের দারুণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। নিজের অবস্থানটি এখানে ধরে রাখতে সেই মায়ামৃগটি আর দেরি করিনি! একঝলক একপলক দেখা দিয়েই সে উধাও! চা গাছের মাঝে সেদিন হারিয়ে গেল চির ভালোলাগার অপ্রত্যাশিত আরণ্যক বস্তু ‘মায়া হরিণ’।     

মায়া হরিণের ইংরেজি নাম Barking Deer এবং বৈজ্ঞানিক নাম Muntiacus muntjak। এদের দেহ লালচে বাদামী রঙের। লেজের শেষাংশে সাদা রঙের আবরণ রয়েছে। যা দূর থেকে অপূর্ব শোভায় ফুটে ওঠে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন), বাংলাদেশের তালিকায় এই প্রজাতিটিকে ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা-২০১২ আইনে উল্লেখ করা রয়েছে এ ধরনের বন্যপ্রাণীদের ধরা, বিক্রয় করা, হত্যা করা এবং তাদের মাংস ভক্ষণ করার অপরাধের জন্য অপরাধী সর্বোচ্চ দুই বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটলে সর্বোচ্চ চার বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে সেই অপরাধী দণ্ডিত হবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২৪
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।