ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বিদেশে গিয়ে যে কাজ ভুলেও করবেন না!

আতাউর রহমান রাইহান, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৫
বিদেশে গিয়ে যে কাজ ভুলেও করবেন না!

বিভিন্ন প্রয়োজনে দেশের বাইরে যেতেই পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, একেকটি দেশের সংস্কৃতি কিন্তু একেকরকম।

প্রথা মানার শেষ নেই তাদের। আপনার অঙ্গের প্রতিটা ভঙ্গি কিংবা সম্বোধনের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ। কোনো কোনো দেশে এসবের বিরূপ অর্থও থাকতে পারে। ‘এক দেশের বুলি, অন্য দেশের গালি’ প্রবাদটির মতোই। এজন্য যে বেশ কয়েকটি ‘না’ আপনাকে মাথায় রাখতে হবে:

জাপানি রেস্তরাঁয় বকশিস দেবেন না
হোটেল, রেস্তরাঁয় খেয়ে বয়দের বকশিস দেয়ার অভ্যাসটা কমবেশি আমাদের রয়েছে। বাংলাদেশে বিল পরিশোধের সময় রেস্তরাঁর পরিচারকও বকশিস নেয়ার জন্য আশপাশে ঘুরঘুর করে। তবে জাপানে গিয়ে এমনটা করবেন না। দেশটির হোটেল, রেস্তরাঁয় সেবা ভালো এবং ব্যতিক্রমও। কিন্তু হোটেল বয় কিংবা কর্মচারীদের ভুলেও বকশিস দিতে যাবেন না। এই প্রথাটি সেখানে অমার্জিত ও অশোভন বলে মনে করা হয়। কাজের বিনিময়ে নির্দিষ্ট অর্থের অতিরিক্ত পয়সা নেয়ার প্রথা জাপানে নেই।

রাশিয়ায় অচেনাকে দেখে হাসলে আপনি কপট
পথে-ঘাটে অপরিচিতদের দিকে তাকিয়ে কেউ হাসলে, সেটা আমরা খুব একটা খারাপভাবে নেই না। বাসে-ট্রেনে জানাশোনা নেই এমন কারও সঙ্গে গপ্পও জমিয়ে ফেলি। তবে কখনো রাশিয়ায় গেলে এমনটা করবেন না। রুশরা সাধারণত হাসেন না। তবে তারা যখন হাসেন, তখন তার একটা নির্দিষ্ট অর্থ দাঁড়ায়। কারও দিকে তাকিয়ে হাসাটা সেখানে অন্তরঙ্গ আচরণ বলে মনে করা হয়। মানে একান্তই ঘনিষ্ঠ ও পরিচিতদের দিকে তাকিয়ে তারা হাসেন। যদি আপনি না চিনেই কোনো রুশ নাগরিকের দিকে তাকিয়ে হাসেন, তাহলে তিনি আপনাকে কপট ভাববেন।

ভারতে বাঁ হাত নয়
বাংলাদেশিরাও বাঁ হাত দিয়ে কিছু দেয়া-নেয়া অমার্জিত ভাবেন। এতে ধর্মীয় সংস্কৃতির কিছুটা প্রভাব আছে। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারতে গিয়েও এই অভ্যাস বহাল রাখবেন না। সেখানে বাঁ হাতকে অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন ভাবা হয়। কাজেই ভারতে গিয়ে কাউকে শুভেচ্ছা, অর্থবিনিময়, পণ্যদ্রব্য তুলতে বা হাতটি ব্যবহার না করলেই ভালো।


চীনে গিয়ে চপস্টিক দোলাবেন না
খাবার টেবিলে ছুরি ও কাঁটার নড়ন চড়ন অনেকটা ঢাক-ঢোল পেটানোর মতো লাগে। চীনারা এমনটা অপছন্দ করেন। তাই সেখানে গিয়ে চপস্টিক না দোলানোই ভালো। এছাড়া চীনে গিয়ে ঘড়ি কিংবা ছাতা উপহার দেবেন না।

নরওয়েতে ভেঁপু বাজাবেন না
ঢাকার রাস্তায় গাড়ির হর্ন বাজানোতে কোনো বিধিনিষেধ নেই। রাস্তায় নামার পর যে যেখানে, যেভাবে পারে গাড়ির ভেঁপু বাজিয়ে শব্দ দূষণ তৈরি করে। তবে নরওয়েতে গিয়ে কখনো গাড়ির হর্ন বা ভেঁপু বাজাবেন না। দেশটিতে কেবল অত্যন্ত জরুরি ক্ষেত্রে গাড়ির ভেঁপু বাজানো হয়। আপনি যদি অবিরত ভেঁপু বাজাতে থাকেন, তাহলে চালকদের মধ্যে তা আতঙ্ক ছড়াবে।

ফ্রান্সে গেলে ‘হ্যালো’ বলুন
দেশটিতে কখনো গেলে এই প্রথাটি অবশ্যই মেনে চলবেন। কারও সঙ্গে দেখা হলে প্রথমেই তাকে হ্যালো বলবেন। হ্যালো ইংরেজি হলেও ফরাসিতে বলা হয় বনজুর (Bonjour)। বন মানে শুভ, আর জুর হলো দিন। অর্থাৎ, শুভদিন। তাই কোনো ফরাসির সঙ্গে দেখা হলে এতটুকু সৌজন্য অবশ্যই দেখাবেন। কথার শুরুতেই বলুন, হ্যালো।

জার্মানিতে হাত পকেটের বাইরে রাখুন
এই প্রথাটির প্রচলন বাংলাদেশেও কিছুটা আছে। অধস্তনরা পকেটে দুই হাত রেখে কথা বললে জ্যেষ্ঠরা অপমান বোধ করেন। এসব ক্ষেত্রে জার্মানদের কৃষ্টিও আমাদের মতো। পকেটে দুই হাত ভরে কথা বললে তারা অশোভন আচরণ বলে ধরে নেন। এমনকি দেশটিতে গিয়ে যখন খেতে বসবেন, তখন হাত খাবার টেবিলে রাখবেন। এটাও তাদের প্রথা।

সিঙ্গাপুরে গিয়ে চুইংগাম খাবেন না
দেশটিতে গিয়ে ক্রমাগত চিবাতে হয় এমন লজেন্স অর্থাৎ, চুইংগাম খাবেন না। জিনিসটি চিবানোর প্রবল অভ্যাস থাকার পরেও সিঙ্গাপুরের মাটিতে পা রাখার পর তা ছাড়তে হবে। কারণ দুই হাজার চার সাল থেকে সিঙ্গাপুরে চুইংগাম আমদানি নিষিদ্ধ করেছে সে দেশের সরকার। তবে চিকিৎসকের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে আপনি জিনিসটি খেতে পারবেন। সেটা ভিন্ন কথা।

ভিয়েতনামে দুই হাতে উপহার নেবেন
এক হাতে উপহার নেয়াকে বাংলাদেশিরা খুব একটা অশোভন আচরণ মনে করেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুই হাত বাড়িয়ে উপহার নিতে দেখা যায়। তবে ভিয়েতনামে প্রথাটি একটু ব্যতিক্রম। সেখানে কেউ উপহার দিলে দুই হাত বাড়িয়ে সাদরে তা নিতে হয়। এক হাতে নেয়াকে তারা অভদ্রতা মনে করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে বকশিস দেবেন
জাপানিদের মতো আমেরিকার নাগরিকরা অতটা বেরসিক নন। তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে বকশিস আদায় করে ছাড়েন। দেশটিতে বকশিস দেয়ার ব্যাপক প্রচলন আছে। হোটেল, রেস্তরাঁয় পরিচারক, পরিচারিকা ছাড়াও ট্যাক্সি চালক যদি আপনার মালামাল ওঠাতে নামাতে সহায়তা করেন, তবে বকশিস দিতে হয়। যুক্তিযুক্ত কারণ দেখাতে না পারলে আপনার বিল থেকেও বকশিস কেটে রাখা হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০২১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।