ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

নারীর জয়গাথা

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১০ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৫
নারীর জয়গাথা

ঢাকা: ঘরের সুনিপুণ কাজ হোক বা পর্বতজয়, সবখানেই রয়েছে নারীর বীরত্বগাথা।

নারী একাধারে মেয়ে, বোন, স্ত্রী ও কোমলময়ী মা।

কিন্তু তার সবচেয়ে বড় পরিচয়, ‘মানুষ’। বর্তমান বিশ্বে বহুল আলোচিত ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ ও ‘নারী-পুরুষ সমানাধিকার’, এ দুই শব্দবন্ধে আমরা নাই বা গেলাম। এখন পর্যন্ত মানুষ হিসেবেই পুরোপুরি স্বীকৃতি মেলেনি তাদের। বিশ্বের বহু সমাজে তাদেরকে কেবল সন্তান জন্মদান, পালন ও গৃহস্থালি কাজের যন্ত্র হিসেবে দেখা হয়।

কিন্তু আদিপর্বে নারীর হাত দিয়েই কৃষি ব্যবস্থা তথা সভ্যতার যাত্রা শুরু হয়। তারপর সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে সেই যে নারীর গৃহপ্রবেশ, তারপর থেকেই তারা স্বস্থানচ্যুত। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে অদ্যবধি চলছে হারানো অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। যদিও প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বের সব জয়গাঁথার সঙ্গে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও রয়েছে সমান অবদান।



নারীর রসুইঘর থেকে এভাবে উন্মুক্ত বিশ্বে প্রবেশের পথ যে এত সহজ ছিলো না, তা বলাই বাহুল্য। সাহস, একাগ্রতা ও মানসিক শক্তির বলে আজ তারা এসেছেন প্রশস্ত কর্ম পরিসরে। আদায় করে নিচ্ছেন নিজেদের ন্যায্য অধিকার। তবে যাদের জন্য নারীরা নির্বিঘ্নে কর্মস্থলসহ সব জায়গায় নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করতে সক্ষম হচ্ছে, তাদের কথা স্মরণ না করলেই নয়।

বিংশ শতাব্দীর কিছু আগে ১৮৫৭ সালের ০৮ মার্চ উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে নারীরা তাদের কাজের সময় ১২ ঘণ্টা থেকে আটঘণ্টায় কমিয়ে আনা ও ন্যায্য মজুরি আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করেন। সেসময় এ আন্দোলনে আটক হন অনেক নারী।



পরবর্তীতে ১৯০৮ সালে নিউইয়র্কে বস্ত্রশিল্পের নারী শ্রমিকরা কাজের সুস্থ পরিবেশ, সময় ও যোগ্য মজুরির দাবিতে আন্দোলন করেন। তাদের সম্মানেই যুক্তরাষ্ট্রের সমাজতান্ত্রিক দল পরের বছর অর্থাৎ ১৯০৯ সালে সব দাবি মিটিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয়ভাবে নারী দিবস পালন করে।

এরপর ১৯১০ সালে আলোর মুখ দেখেন বিশ্বের নারীরা। সেবছর ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলন। এ সম্মেলনে নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে ০৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন। ক্লারা ছিলেন জার্মান সমাজতান্ত্রিক দলের একজন সদস্য। ০৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস করার প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে উপস্থিত ১৭টি দেশের ১শ’ জন নারীর অনুমোদন পায়।



কোপেনহেগেনের এ পদক্ষেপ আলোড়িত হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ১৯১১ সালের ১৯ মার্চ প্রথমবারের মতো অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের ১০ লাখেরও বেশি নারী যোগ দেন নারী দিবসের র্যালিতে। একই সঙ্গে এগিয়ে আসেন পুরুষেরাও। তারা নারীদের ভোট দেওয়া ও সরকারি অফিসে কাজ করার অধিকার আদায়ের দাবি তোলেন। ধীরে ধীরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে যেতে থাকে নারী অধিকারের সচেতনতা।



১৯১৩ সাল থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে রাশিয়া ফেব্রুয়ারির শেষ রোববার পালন করে আন্তির্জাতিক নারী দিবস। ১৯১৪ সালের ০৮ মার্চ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়ার দাবিতে ইউরোপে নারীরা র্যালি বের করেন। সেবছর বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশেই নারী দিবস হিসেবে দিনটিকে পালন করা হয়।

এদিকে, ১৯৭১ সালে ০৮ মার্চ বাংলাদেশেও পালিত হয় দিনটি। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায় নারী দিবস। সেই থেকে ০৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।



২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জাতসংঘ স্থাপন করবে এক নতুন মাইলফলক। ২০ বছর আগে ১শ’ ৮৯ দেশের স্বাক্ষর করা এজেন্ডাকে (নারী অধিকার আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি) পুণরায় উপস্থাপন করার লক্ষ্যে চীনে আয়োজিত হবে ‘বেইজিং ডিকলারেশন অ্যান্ড প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন’ সম্মেলন।

যদিও বর্তমান সময়ে নারীরা পুরুষের থেকে পিছিয়ে নেই, তারপরও রয়ে গেছে নারী-পুরুষ বৈষম্য। আর সেই বৈষম্য ও কাজের ক্ষেত্রে সব বাধা সরিয়ে নারীর বিকাশের পথ উন্মোচন করতেই এ সম্মেলনের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।