ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

অস্ত্রোপচারে আলাদা হলো জোড়া জমজ (ভিডিও)

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৫
অস্ত্রোপচারে আলাদা হলো জোড়া জমজ (ভিডিও)

ঢাকা: দুই সৌদি শিশু আব্দুল্লাহ ও আব্দুল রাহমান।   ফুটফুটে জমজ সহোদর তারা।

তবে আর দশটা স্বাভাবিক জমজ শিশুর মতো নয় তাদের জীবন।

কারণ জন্মগতভাবেই দু’জনের শরীর ছিলো একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত। বুক ও পেট ছিল একসঙ্গে জোড়া লাগানো। তবে তারা আলাদা মাথা ও  হাত-পা নিয়েই জন্মেছে।

জীবন এখানেই শেষ নয়। সবে মাত্র শুরু। বাকি জীবন অসহনীয় যন্ত্রণায় ভুগতে হবে আশঙ্কা করেই তাদের বাবা-মা সিদ্ধান্ত নেন, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আদরের পুত্রদের জোড়া শরীর আলাদা করার।

এ সিদ্ধান্তটি নেওয়া যতটা না জটিল, তারচেয়ে বেশি দুঃসাহসিক ব্যাপার। কারণ, এটি কোনো সাধারণ অস্ত্রোপচারের মতো নয়।



অস্ত্রোপচারের জন্য তাদের সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে রাজা আব্দুল আজিজ মেডিক্যাল সিটিতে আনা হয়।

প্রাথমিক পরীক্ষার পর দেখা যায়, জমজ শিশু দু’টির অন্ত্রসহ অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ একটি। অর্থাৎ একটি মাত্র অন্ত্র নিয়ে বেঁচে রয়েছে দু’টি শিশু। তবে বিশেষ উদ্যোগেই শুরু হয় তাদের অস্ত্রোপচার। টানা নয়ঘণ্টা দীর্ঘ সময় ধরে অস্ত্রোপচারের পর আলাদা করা হয় জোড়া জমজ এ সহোদরদের।

দেশটির প্রাক্তন স্বাস্থমন্ত্রী ডা. আব্দুল্লাহ আল রাবিয়াহর তত্বাবধানে কঠিন এ অস্ত্রোপচারটি সফলভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর শিশু দু’টি এখন ভালোই রয়েছে বলে জানা গেছে।



হাসপাতালের এক মুখপাত্র জানান, এ হাসপাতালের একটি বিশেষ টিম দীর্ঘ এ অস্ত্রোপচারে নয়টি জটিল ধাপ পেরিয়ে তাদের আলাদা করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের নাড়ি ও মূত্রনালীসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোও সুষ্ঠুভাবে আলাদা করা গেছে।
 
দেহ আলাদা করার পর দু’টি অভিজ্ঞ টিম জমজ শিশু দু’টির শরীর পুনরায় গঠন করছে। তাদের আশঙ্কা ছিলো, শিশু দু’টির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ  বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখন তারা সুস্থই রয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালটির নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে তাদের।


 
জানা যায়, হাসপাতালটিতে এ ধরনের অপারেশন এই নিয়ে ৩৫তম। ১৯৯০ সাল থেকে সুদান, ইয়েমেন, মিশর, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, মরক্কো ও ইরাকসহ ১৮টিরও বেশি দেশকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালটি।


জোড়া জমজ শিশুর জন্ম এর ‍আগেও বেশ কিছু জায়গায় ঘটেছে। ২০১৪ সালে ভারতের বর্ধমানে জন্ম নেয় এক জোড়া শিশু। তাদের যকৃৎ ছিলো একটাই।

আবার একই বছর হুগলীতে একটি যকৃৎ নিয়ে জন্মায় দুই জমজ কন্যা শিশু। আমাদের দেশেও সম্প্রতি ঘটেছে এমন ঘটনা। গত বছর নভেম্বরে পাবনা জেলায় জন্ম নেয় জোড়া জমজ শিশু। যাদের হৃৎপিণ্ড ছিল একটি কিন্তু ফুসফুস ছিল দু’টি।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, গর্ভবস্থায় একটি ডিম্বাণু যখন দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়, তখন জমজ শিশুর জন্ম হয়। সেক্ষেত্রে একটি ডিম্বাণুতে থাকে দু’টি ভ্রূণ। দু’টি ভ্রূণ নিয়ে বেড়ে ওঠা ডিম্বাণু দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার জন্য কয়েক সপ্তাহ সময় নেয়। আর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে মায়ের গর্ভে বেড়ে ওঠে জোড়া যমজ শিশু।



বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।