ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

সোফিয়া আমার পকেট প্রিন্সেস!

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০১ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৫
সোফিয়া আমার পকেট প্রিন্সেস!

ঢাকা: সিডনির নিউ সাউথ ওয়েলস সুপার মার্কেটের ক্যাশিয়ার আমার জিনিসপত্রগুলো স্ক্যান করতে করতে বললেন, আপনার মেয়েটা দেখতে ছোট্ট পুতুলের মতো। ওর বয়স কত? আমি বললাম, আড়াই বছর।

ক্যাশিয়ার অবাক হয়ে তাকালেন আমার দিকে। তিনি ভেবেছিলেন, আমার সোফিয়া একেবারেই ছোট।
 
কথাগুলো বলছিলেন, এফি প্যানিওচি। থাকেন নিউ সাউথ ওয়েলসের ম্যাককুরিতে। ছোট্ট সোফিয়াকে নিয়ে বাইরে বের হলেই মা এফিকে সামলাতে হয় ঠিক এ জাতীয় বাক্যবিনিময়। কারণ, সোফিয়ার বয়স অনুযায়ী তার উচ্চতা ও ওজন যথেষ্ট কম। আড়াই বছর বয়সে সে মাত্র আড়াই ফুট লম্বা। আর ওজন মাত্র সাড়ে সাত কেজি। যা কিনা সাতমাসের শিশুর হয়ে থাকে।


২৮ বছর বয়সী এফি জানান, সোফিয়া গর্ভে থাকা অবস্থায়ও আকারে অনেক ছোট ছিল। মাত্র সোয়া আটমাসে সোফিয়ার জন্ম হয়।

সোফিয়া জন্মের সময় মাত্র দুই কেজি ওজনের ছিল। ফলে তাকে ইনটেনসিভ কেয়ারে রাখা হয়, যোগ করেন এফি।

আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলে উঠলেন, আমি সেই মুহূর্তটির কথা কখনও ভুলবো না, যখন ইনটেনসিভ কেয়ারে আমি তাকে দেখতে যাই। কী নরম তুলতুলে, ছোট ছোট আঙুল। উফ! অামি আমার স্বামী মার্ককে (৩৮) বলেছিলাম, সোফিয়া  একদম পারফেক্ট!



তবে জীবনের প্রথম দিন থেকেই সোফিয়াকে নানা ধকল সামলাতে হয়েছে। সে ঠিকমতো খেতে পারতো না আর বেড়েও উঠছিল না সেভাবে। তার জন্মের কুড়িদিন পর তাকে বাড়ি নিয়ে আসেন প্যানিওচি দম্পতি।

পরবর্তীতে সোফিয়া খেতে পারলেও বেশকিছু সপ্তাহ পর এফি বুঝলেন, তার ছোট্ট রাজকুমারী সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। বয়স অনুযায়ী তার ওজন ও দৈর্ঘ্য ছিল অসামঞ্জস্য।

অামরা তাকে হাই ক্যালরি ট্রিটমেন্ট দিয়েছি কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। এটা সত্যিই খুব কষ্টদায়ক, জানান এফি।

আট মাস বয়সে সোফিয়ার দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় দুই ফুট আর ওজন ছিল মাত্র পাঁচ কেজি। পরে ডাক্তার এফিকে বলেন, ওজন বাড়ছে না কেন তা দেখার জন্য সোফিয়ার কিছু শারীরিক পরীক্ষা করাতে হবে। পরীক্ষার পর ডাক্তার জানান সোফিয়া রবিনাউ সিনড্রমে আক্রান্ত। এটি সঠিকভাবে হাঁড়ের বিকাশ না হওয়ার একটি দুর্লভ রোগ। বিশ্বে দুইশজনেরও কম ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত হন।



এফি দেখলেন, এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মুখের আদল ও সোফিয়ার মুখের আদল একই রকম। প্রশস্ত কপাল, বড় বড় চোখ ও থেবড়ো নাক।

স্ক্যানে দেখা গেছে, সোফিয়ার হাঁড় ছয়মাস শিশুর হাঁড়ের মতোই।

তবে বেশ স্বাভাবিকভাবেই কাটছে সোফিয়ার জীবন। এমনিতে সে ভীষণ বুদ্ধিমতী। এখন রীতিমতো গণিত ও বর্ণমালা শিখছে। এমনকি ঘরে ঢুকে লাইটও জ্বালাতে পারে সে।

এ নিয়ে এফির ভাষ্য, আমি আমার পকেট সাইজ রাজকুমারীকে নিয়ে গর্বিত।

তবে ডাক্তার জানিয়েছেন, সোফিয়ার এ অস্বাভাবিক গড়নের জন্য জেনেটিক কারণও রয়েছে। এফি শুধু চান, তার ছোট্ট রাজকুমারী সুস্থভাবে একটি সুখী জীবন কাটাক।

বাংলাদেশ সময়: ০৪০১ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।