ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

আইনস্টাইনের প্রেমসূত্র!

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৫
আইনস্টাইনের প্রেমসূত্র! ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বিখ্যাত থিওরি অব রিলেটিভিটি তথা আপেক্ষিকতা তত্ত্বের কথা এলেই চোখে ভেসে ওঠে কাঁচাপাকা এলোমেলো চুলের এক বিশেষ ব্যক্তির কথা। হুম, বুঝতে দেরি হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না! তার নাম আলবার্ট আইনস্টাইন।



পদার্থ বিজ্ঞানের যেসব কঠিন সূত্র আমাদের তটস্থ করে ফেলে, অথচ সেগুলোর মাঝেই বসবাস ছিল এ বিজ্ঞানীর। তবে বিজ্ঞানী হলেও দুনিয়ার সবচেয়ে সুক্ষ্ম বিষয় ‘প্রেম’ থেকে দূরে ছিলেন না মোটেও।

হ্যাঁ, আইনস্টাইন ছিলেন একজন আপাদমস্তক প্রেমিক। চোখ কপালে উঠলো তো! মানুষ হিসেবে প্রেমে পড়া তার জন্য কঠিন কিছু নয়। তবে কথা হচ্ছে, এত ব্যস্ততার মাঝে প্রেম করার সময় কোথায় তার!

তবে সত্যিটা হচ্ছে, আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব আর নানান অভিনব আবিষ্কারের নিচে চাপা পড়ে গেছে তার প্রেমকাহিনী। জেনে নিই, প্রেমে তিনি কোন সূত্র প্রয়োগ করেছিলেন।


১৮৯৬ সাল। মাত্র একুশ বছর বয়সী মিলেভা ম্যারিচ সুইস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফেডারেল পলিটেকনিকে ভর্তি হন। তিনি আইনস্টাইনের বন্ধু ও সহকর্মী ছিলেন। ঠিক একই সময়ে আইনস্টাইনও সেখানে ভর্তি হন। তিনি বয়সে মিলেভার চেয়ে সাড়ে তিন বছরের ছোট ছিলেন।

সার্বিয়ান এ তরুণী ছিলেন সেসময়কার একমাত্র বিজ্ঞান ও গণিতের ছাত্রী । ১৯০৩ সালের ৬ জানুয়ারি আইনস্টাইন বিয়ে করেন মিলেভাকে। আইনস্টাইনের অনেক আবিষ্কারের পেছনে তার উৎসাহ ছিলো চরম পর্যায়ে। আর ছিল আইনস্টাইনের প্রতি তার গভীর প্রেম ও অপার আত্মত্যাগ।

নববিবাহিত আইনস্টাইন সপ্তাহে ছয়দিন পেটেন্ট অফিসে কাজ করতেন, আর বাকি সময় দিতেন পর্দার্থ বিজ্ঞান পড়াশোনা ও গবেষণায়। অন্যদিকে, মিলেভা তাকে যথেষ্ট সাহায্য করলেও, তাদের প্রথম সন্তানের মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে পড়েন। পরবর্তী বছর মিলেভার কোল জুড়ে জন্ম নেয় তাদের দ্বিতীয় সন্তান হ্যান্স আলবার্ট।

১৯০৫ সালে ২৬ বছর বয়সে আইনস্টাইন পদার্থ বিজ্ঞানের তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে মৌলিক অবদান রাখেন। এসব বিষয়ে দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য ১৯২২ সালে তিনি নোবেল প্রাইজ পান।

মিলেভা আইনস্টাইনের জীবনে আশীর্বাদ রূপেই এসেছিলেন। বলা যেতে পারে, তাদের দু’জনের সম্পর্কটি ছিল বুদ্ধিদীপ্ত ও সাফল্যময়। আইনস্টাইন মিলেভার স্বাধীনতা ও ধ্যান-ধারণাকে যথেষ্ট সম্মান দিতেন।

বন্ধুরা, ভালোবাসা মানেই তো মন দেওয়া-নেওয়া, আর প্রিয়জনকে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করা। আইনস্টাইনও তাই করেছিলেন। সেসময়ে মনের ভাব প্রিয়জনকে বলার একটাই মাধ্যম ছিল। তা হলো, চিঠির আদান-প্রদান। আইনস্টাইনও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। মিলেভাকে বিয়ের আগে তিনি চিঠিতে লেখেন, তোমাকে ছাড়া আমি সবার মাঝেও একা।

তবে বিয়ের পর আইনস্টানের কর্মমুখর জীবনে ধীরে ধীরে একা হয়ে যেতে লাগলেন মিলেভা নিজেই। এ নিয়ে তিনি তার এক বন্ধুকে চিঠিতে লেখেন, আইনস্টাইন একমাত্র বিজ্ঞানের জন্যই বেঁচে রয়েছে। সেটাই তার প্রথম প্রেম। আমি আর আমাদের সন্তানের কোনো গুরুত্বই তার কাছে নেই। আমরা রয়েছি দ্বিতীয় অবস্থানে।

শুরু হয় দাপত্য কলহ। আইনস্টাইন তখন ব্যস্ত সমগ্র পৃথিবী নিয়ে। তাই তিনি মিলেভাকে বিচ্ছেদের প্রস্তাব দেন। কিন্তু মিলেভা তার প্রেমে অন্ধ। তিনি প্রস্তাব নাকচ করে দিলেন।

আইনস্টাইন মিলেভাকে জানালেন, একটি শর্ত মানলেই তিনি কেবল তার সঙ্গে থাকতে রাজি হবেন। তা হলো, মিলেভাকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, সে পুরো বাড়ি পরিষ্কার করবে, কাপড় ধোবে ও আইনস্টাইনের ঘরে তিনবেলা খাবার পৌঁছে দেবে। তবে তাদের মাঝে থাকবে না কোনো শারীরিক অন্তরঙ্গতা।

এত কঠিন শর্তও মেনে নিয়েছিলেন মিলেভা। তবে তা টেকেনি শেষ পর্যন্ত। ১৯১৯ সালে বিচ্ছেদ হয় আইনস্টাইন ও মিলেভার। তবে গল্প এখানেই শেষ নয়।

মিলেভার সাথে ছাড়াছাড়ি হলেও তার প্রতি আইনস্টানের যথেষ্ট ভালোবাসা ছিল। আর তাই হয়তো তিনি নোবেল প্রাইজের সব টাকা তিনি মিলেভার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন। সময়টা ১৯২৩ সালের কিছুটা আগে। ১৯২২ সালে আইনস্টাইন নোবেল প্রাইজ পান। তিনি অবলীলায় সমস্ত টাকা মিলেভাকে পাঠান। প্রাইজের টাকার পরিমাণ ছিল তিন লক্ষ ৪৮ হাজার ইউএস ডলার। যার বাংলাদেশি মূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা।


এর মধ্যে আইনস্টাইন জড়ালেন তার চাচাতো বোন এলসা আইনস্টাইনের সঙ্গে। আট বছরের সম্পর্কে মধ্যে চার বছর ধরেই চিঠির আদান-প্রদান হয়। মিলেভার সঙ্গে বিচ্ছেদের চার মাস পরই তিনি এলসাকে বিয়ে করেন। তবে এলসাও দিনে দিনে বিরক্ত হয়ে যেতে লাগলেন পদার্থ বিজ্ঞানের প্রতি স্বামীর এ আত্মনিমগ্নতায়।

এলসা আইনস্টাইন সম্পর্কে বলেছেন, সে অসাধারণ। যদিও তার জীবন পদ্ধতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া রীতিমতো বিরক্তিকর ও জটিল।

এদিকে আইনস্টাইন তার বন্ধুকে লেখা এক চিঠিতে বলছেন, আমি আমার শরীর ও আত্মাকে বিজ্ঞানের কাছে সঁপে দিয়েছি।


১৯৩৬ সালের ডিসেম্বরে এলসা মারা যান। আইনস্টানের শেষ জীবন কাটে জোহানা ফ্যানটোভার সাথে। তার সঙ্গে আইনস্টাইনের সর্বপ্রথম পরিচয় হয় ১৯২৯ সালে বার্লিনে। আইনস্টাইনের চেয়ে ২২ বছরের ছোট হলেও বয়সের দূরত্ব তাদের ঘনিষ্টতাকে আড়াল করতে পারেনি।

১৯৪০ সালে তাদের প্রণয় হয়। আইনস্টানের মৃত্যু পর্যন্ত জোহানাই ছিলেন তার সঙ্গী। ১৯৫৫ সালের এপ্রিলে ৭৬ বছর বয়সে আইনস্টাইন মারা যান। অন্যদিকে, ১৯৮১ সালে ৮০ বছর বয়সে জোহানাও দেহত্যাগ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।