ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

গ্রিক দেব-দেবীর উপাখ্যান-১

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৫
গ্রিক দেব-দেবীর উপাখ্যান-১

ঢাকা: সবসময়ই গ্রিক পুরাণের দেবতারা মানুষের আগ্রহের বিষয়। দেব-দেবীদের মায়াবী অবয়ব ও রোমাঞ্চকর গল্প সবাইকে বিমোহিত করে।



কখনও কখনও কল্পকাহিনীও হয়ে ওঠে জীবন্ত। আর তা যদি হয় গ্রিক পুরাণের পাতা থেকে উঠে আসা, তবে তো কথাই নেই!

তাদের চমকপ্রদ গল্প নিয়েই এবার বিশেষ ধারাবাহিক আয়োজন। প্রথম পর্বে থাকছে আফ্রোদিতি ও অ্যাপোলোর গল্পকথা!

আফ্রোদিতি

আফ্রোদিতি গ্রীকদের সৌন্দর্য ও প্রেমের দেবী। তাকে জলের দেবীও বলা হয়। কারণ, তার জন্ম হয়েছে সমুদ্রের ফেনা থেকে। দেবী হিসেবে আফ্রোদিতির উপাসনা গ্রিক থেকে উদ্ভব হয়নি। মূলত ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চলে তাকে দেবমাতা হিসেবে পূজা করা হতো। এছাড়া সাইপ্রাস, সিথেরা ও কস অঞ্চলেও তাকে ভীষণ মানা হয়।

অন্যান্য দেবদেবীর মতোই আফ্রোদিতির জন্ম ও তার জীবনচরিত সম্পর্কে নানা গল্প রয়েছে। তবে ধারণা করা হয়, আফ্রোদিতি পূর্ণবয়স্কা দেবী রূপেই সমুদ্রের ফেনা থেকে জন্ম নিয়েছিলেন। মহাদেবতা ক্রোনাসের কন্যা ছিলেন তিনি। আফ্রোদিতি হেফাইস্তুসকে বিয়ে করলেও, তার বেশ কয়েকজন প্রেমিক ছিল। এদের মধ্যে যুদ্ধের দেবতা অ্যারেস ও অ্যাডোনিস উল্লেখযোগ্য। আফ্রোদিতি ছিলেন অপার সৌন্দর্যের অধিকারী, তাই তিনি সহজেই অন্যান্য পুরুষ দেবতাদের আকৃষ্ট করতে পারতেন। তবে তার কিছু নেতিবাচক বৈশিষ্ঠ্যও ছিল। তিনি ছিলেন ভীষণ রাগী ও বদমেজাজি। তার মন ছিল হিংসাপূর্ণ। একইসঙ্গে তিনি ছিলেন অবিশ্বাসী।

অনেক সময় আফ্রোদিতির আয়না সম্বলিত মূর্তি দেখা যায়। এর অর্থ হলো, তাকে যিনি দেখবেন, সেই তার প্রেমে পড়ে যাবেন। আবার অনেক মূর্তিতেই দেখা যায়, প্রেমের অধিষ্ঠাত্রী এ দেবী বিশাল ঝিনুকের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন আর তার পায়ের কাছে ছড়িয়ে রয়েছে মুক্তোর রাশি।

আফ্রোদিতির প্রতীক ডলফিন ও ঘুঘু পাখি। এছাড়াও আপেল, গোলাপ, নাসপাতি গাছও তার প্রতীক বহন করে। রোমান পুরাণে আফ্রোদিতি ভেনাস হিসেবে পরিচিত। ভালোবাসার দেবতা কিউপিডের মা ছিলেন ভেনাস।  

অ্যাপোলো

গ্রিক দেবতা অ্যাপোলোর নাম আমাদের সবারই জানা। তিনি ছিলেন জিউস ও লেটোর ছেলে এবং আর্টেমিসের যমজ ভাই। অ্যাপোলো কবিতা, ইতিহাস, ধনুর্বিদ্যা ও সঙ্গীতের দেবতা। অ্যাপোলো নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে, অপরূপ সুন্দর-সুঠাম এক দেবতা মনের আনন্দে সোনালি তারের লাইরিতে (প্রাচীন গ্রীসে ব্যবহৃত এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র) সুর তুলছেন। আবার বেশকিছু জায়গায় দেখা গেছে, তিনি রুপালি ধনুতে সোনালি তীর তাক করে রয়েছেন।

অ্যাপোলো ছিলেন একইসঙ্গে প্লেগ ও অন্যান্য রোগ এবং রোগ নিরাময়ের দেবতা। আরোগ্যের এ দেবতা মানুষকে দিয়েছেন দুরারোগ্যের ওষুধ। একই সঙ্গে তিনি আলো ও সত্যের দেবতা। পুরাণ অনুযায়ী, সূর্যদেব অ্যাপোলো রোজ তার সুসজ্জিত সাদাঘোড়ার গাড়িতে চেপে আকাশপথে সূর্যের বাড়ি গমন করেন। অলিম্পিয়ান এ দেবতার ভবিষ্যতবাণীর ক্ষমতা ছিল অসীম। দীর্ঘকেশী অ্যাপোলোর প্রতীক হলো দাঁড়কাক, তীর-ধনুক ও লাইরি।

অ্যাপোলো গ্রিসের এজিয়ান সমুদ্রের ছোট্ট দ্বীপ ডেলোসে জন্ম নেন। তিনি তার মা লেটোর গর্ভে থাকা অবস্থায় জিউসের স্ত্রী দেবী হেরার দ্বারা বিতাড়িত হন। তখন লেটো ডেলোস দ্বীপে আত্মগোপন করেন আর সেখানেই জন্ম হয় সূর্য দেবতা অ্যাপোলোর। তিনি ও আর্টেমিস ছিলেন যমজ ভাইবোন। আর্টেমিস অ্যাপোলোর জন্মের একদিন আগে জন্ম নেন। আর তিনিই লোটোকে সাহায্য করেন তার ভাই অ্যাপোলোর জন্ম দেওয়ায়।

অ্যাপোলো ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর লেটো ডেলোস দ্বীপের জনগণকে প্রতিজ্ঞা করেন, তাকে আশ্রয় দেওয়ার উপহার স্বরূপ অ্যাপোলো ডেলিয়ানদের সাহায্যে সবসময় পাশে থাকবেন। অ্যাপোলোর পবিত্র চিহ্ন হলো লরেল লতাগুল্ম ও ডলফিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৫
এসএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।