ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

পাইরেসি হিড়িকে আমদানিকারকের মাথায় হাত

নাজমুল হাসান, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৫
পাইরেসি হিড়িকে আমদানিকারকের মাথায় হাত

ঢাকা: ঢাকা শহরে বই বিকিকিনির জন্য নীলক্ষেত প্রসিদ্ধস্থান। এজন্য নীলক্ষেতকে সবাই বইপাড়া হিসেবে চেনে।

এখানে বই কেনা-বেচা শুরু হয় ১৯৭৬ সাল থেকে। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যবই থেকে শুরু করে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, কী নেই সেখানে! চাকরি সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি থেকে শুরু করে লেখাপড়ার সব মুশকিলে ‍আসান- নীলক্ষেত।

নীলক্ষেতে পা রাখতেই দেখা যায়, রাস্তার দু’পাশে ক্রেতা-বিক্রেতার ব্যস্ততা। এ অঞ্চলে প্রায় এক হাজারেরও বেশি বইয়ের দোকান রয়েছে। একেক দোকানে একেক ধরনের বই বিক্রি হয়ে থাকে। বেশিরভাগ দোকানেই স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যবই বিক্রির হার বেশি।

এই সীমাহীন বইয়ের চাহিদাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আরও একশ্রেণীর দোকান। তাদের কাজ হলো, মূল বইয়ের ফটোকপি করে নকল কপি তৈরি করা। যাকে পাইরেসি বলা হয়। পাইরেসি ব্যাপারটি নীলক্ষেতের জন্য অতি মামুলি বিষয়। কারণ, এখানে গড়ে ওঠা অধিকাংশ বই ব্যবসায়ী এখন পাইরেসির সঙ্গে জড়িত।  

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নীলক্ষেতে এসব বই ব্যবসায়ীদের মধ্যে হাতেগোনা ১০ থেকে ১৫ জন বিদেশ থেকে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বইয়ের আসল কপি আমদানি করেন। দেশি বইয়ের আসল কপি তো থাকছেই।

এদিকে, নীলক্ষেতে গড়ে ওঠা পাইরেসি সিন্ডিকেট মূলবই সংগ্রহ করে নকল কপি ছাপিয়ে কমমূল্যে বাজারে ছাড়ে। আর এভাবেই নীলক্ষেতে বই পাইরেসি হয়ে আসছে।

এ বিষয়ে স্বনামধন্য বইয়ের দোকান ফ্রেন্ডস বুক কর্নার ও এলবার্ট রোচ পাবলিকেশনের স্বত্বাধিকারী শফিকুল আলমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবছর বিদেশ থেকে দুই থেকে তিন লাখ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ থেকে দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা) মূল্যের বই আমদানি করতে হয়। কিন্তু পাইরেসির কারণে আমাদের অনেক লোকসান গুণতে হয়। এছাড়া ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করি। কিন্তু পাইরেসি সিন্ডিকেটরা সরকারি সব নিয়মনীতি ভঙ্গ করছে ও সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।

অন্যদিকে, অসংখ্য শিক্ষার্থী পাইরেসিকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন।   কারণ, উচ্চশিক্ষার জন্য যেসব বই রয়েছে, তার আসল কপি কিনতে গেলে গুণতে হয় মোটা অংকের টাকা। অনেকের পক্ষে এত বেশি দাম দিয়ে বই কেনা সম্ভব হয়ে ওঠে না।  

দেখা যায়, একটি বইয়ের আসল কপি কিনতে গেলে দুই থেকে তিন হাজার টাকা গুণতে হয়। পাশাপাশি পাইরেসি করা একই বই শিক্ষার্থীরা পেয়ে যাচ্ছেন এক হাজার বা তার চেয়েও কম দামে।

বই পাইরেসির বিষয়ে জানতে চাইলে আফজাল বুক ডিপোর কর্নধার শরীফ মিয়া (৩৮) বলেন, পাইরেসি করা ছাড়া কিছু করার নেই। নীলক্ষেতের বই ব্যবসা মানে পাইরেসি ব্যবসা। কারণ, সব ব্যবসায়ীদের পক্ষে বই আমদানি করা সম্ভব নয়। বই আমদানি করতে সবার কাছে সে পরিমাণ পুঁজিও থাকে না।

নিজের দোকানের নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক বই পাইরেসি ব্যবসায়ী জহির তানভির (৩৫) বলেন, নীলক্ষেতে দুই ধরনের সিন্ডিকেট রয়েছে। এক পক্ষ, দেশ-বিদেশের বইয়ের বাজার থেকে নানা ধরনের বই সংগ্রহ করে নীলক্ষেতে আনে। এরপর দ্বিতীয় পক্ষ, এই বইগুলো থেকে তাদের চাহিদা মতো কপি করে বাজারে ছাড়ে। এজন্য প্রথম পক্ষকে বই বিক্রির লাভ থেকে তাদের কিছু কমিশন দিতে হয়।

এ বিষয়ে ইসলামিয়া ও নীলক্ষেত মার্কেট মালিক সমিতির সেক্রেটারি আলি আক্কাস বলেন, এখানে বই পাইরেসি হয়, এটা সাধারণ ব্যাপার। পর্যাপ্ত পরিমাণ বই বাজারে নেই তাই বই পাইরেসি হয়।

তবে পাইরেসি করা বৈধ কি-না তা জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকার থেকে তাদের অনুমোদন নেওয়া রয়েছে।

তবে সরকারের এই অনুমোদনের প্রমাণ চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৫
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।