ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বিদেহী আত্মা ভর করা তোপেং নৃত্যনাট্য!

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৪ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৫
বিদেহী আত্মা ভর করা তোপেং নৃত্যনাট্য!

ঢাকা: প্রতিটি নাচেরই নিজস্ব মুদ্রা রয়েছে। নাচের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা যায় নানারকম গল্পকথা আর  চরিত্র।

আর এ দু’টির সম্মিলিত রূপই হলো নৃত্যনাট্য। বলা যেতে পারে, নাচ গল্প বলার এক পরিশীলিত মাধ্যমও। এ গেল নাটক আর গল্পের কথা। এবার আসি মূল প্রসঙ্গে।

বিশ্বে বিভিন্ন অঞ্চলে নৃত্যনাট্য বেশ জনপ্রিয়। অঞ্চলভেদে নৃত্যনাট্য নানা ধরনের। ঐতিহ্যবাহী তোপেং নাচের নাম অনেকেরই জানা। তোপেং মুখোশনাচ হিসেবে ইন্দোনেশিয়া ও এর আশেপাশের অঞ্চলে বেশ প্রসিদ্ধ।

তোপেং নাচে রহস্যময় মুখোশ আর অলঙ্কারসহ রঙিন পোশাক পরে, ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতের তালে তালে ফুটিয়ে তোলা হয় কাল্পনিক নানা চরিত্র ও গল্প।

তোপেং নাচের জন্ম ইন্দোনেশিয়ার বালি ও জাভা দ্বীপে। পরবর্তীতে ইন্দোনেশিয়ার আরও কয়েকটি দ্বীপে ছড়িয়ে পড়ে এ নাচ।

তোপেং নাচ ইন্দোনেশিয়ার আদিবাসীদের প্রাচীন নাচ থেকে উদ্ভব হয়েছে। তারা নিজেদের স্বর্গবাসী পূর্বপুরুষদের প্রতি সম্মান দেখাতেই এ নাচ করে থাকেন। নাচে তারা মুখোশ পরে ঈশ্বরের দূতের ভূমিকায় নাটক করেন। আগে তোপেং নাচের মূল বিষয়বস্তু ছিল দু’টি, প্রকৃতি ও পূর্বপুরুষের আত্মা।

পরবর্তীতে বিষয়বস্তুর ব্যাপক পরিবর্তন ও প্রসার ঘটে। এর মধ্যে ‘রাজকুমার প্রণবের দুঃসাহসিক অভিযান’ উল্লেখযোগ্য। পরবর্তীতে এ নাচে হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়। তোপেং নাচের চরিত্রগুলোতে স্থান পায় মহাভারত ও রামায়ণের প্রধান চরিত্রগুলো।

সাধারণত তোপেং নাচ বালির ওদালান উৎসবের সময় আয়োজন করা হয়। বালির হিন্দু সম্প্রদায় প্রতি ২শ’ ১০ দিন পর পর স্থানীয় মন্দিরে এ উৎসব পালন করে। জুলিয়েন ক্যালেন্ডারে যেমন ত্রিশ দিনে এক মাস। কিন্তু বালির পাবুকোন ক্যালেন্ডারে সেটা ২শ’ ১০ দিন দীর্ঘ। যা জুলিয়েন ক্যালেন্ডারে প্রায় সাতমাস। সেই অনুযায়ী, তারা মন্দিরে এ নাচের উৎসব আয়োজন করে থাকেন। এদিন তারা মঞ্চে বিভিন্ন চরিত্র সম্বলিত মুখোশ পরে হাজির হন।

এ নৃত্যনাট্যের কলাকুশলীরা কেউ মুখে সংলাপ বলেন না। সবাই তাদের অঙ্গভঙ্গি দিয়েই বুঝিয়ে দেন নাটকের মুল গল্প। তাদের সাহায্য করার জন্য আশেপাশেই কিছু বক্তা থাকেন। যারা অর্ধেক মুখোশ পরিহিত থাকেন। মূলত তাদের চোখ ঢাকা থাকে মুখোশে আর বাকিটা উন্মুক্ত। তারাই ম‍ূল গল্পটি ধারাবাহিকভাবে বলতে থাকেন। আর সেই অনুসারে তোপেং কলাকুশলীরা নাচ পরিবেশন করেন। মূল বক্তার  পাশাপাশি আরও কয়েকজন ধারাভাষ্য দেন ও দর্শকদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন। এর মধ্য দিয়ে নাটকটিকে হাস্যরসাত্বকও করে তোলা হয়।

পৌরাণিক গল্প ছাড়াও উন্নত চরিত্রগুলোর ক্ষেত্রে অভিনয় শিল্পীরা বিশেষত সাদা ও সোনালি মুখোশ পরে থাকেন। সেসময় ধারাভাষ্যকার পরে থাকেন কিম্ভূতকিমাকার সব মুখোশ। বিভিন্ন ঈশ্বরের মুখোশ ছাড়াও রয়েছে নানারকম দৈত্যদানব ও প্রাণীর মুখোশ। এক্ষেত্রে মুখোশের ছাঁচগুলো স্থানীয় ঐতিহ্য বহন করে। শক্তিশালী চরিত্রগুলোকে করা হয় লাল রঙ। মধ্য জাভার মুখোশগুলো ত্রিভূজাকৃতির হয়ে থাকে। যেখানে পূর্ব জাভার মুখোশগুলো একটু অদ্ভুতুড়ে ও ইন্দোনেশিয়ার উত্তর উপকূলের সাইরেবনের মুখোশগুলোর সবগুলোই প্রায় প্রতীকী।

তোপেং নৃত্যনাট্যে গোটা নাটকটাই কয়েকজন কলাকুশলী নিয়ে করা হয়। অনেক সময় একজনই একইসঙ্গে কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করেন।

প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, তোপেং মুখোশের সঙ্গে অভিনয় শিল্পীর মনের গভীর যোগাযোগ রয়েছে। যার ফলে অভিনয়কারী সেসব চরিত্রগুলোতে সহজেই অনুপ্রবেশ করতে পারেন।

আবার অনেকেই মনে করেন, তোপেং মুখোশ পরার সঙ্গে সঙ্গে কলাকুশলীরা বিদেহী আত্মার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হন।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৫ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৫
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।