ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

স্বপ্নজয়ী মিষ্টির কারিগর

জান্নাতুল ফেরদৌসী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৫
স্বপ্নজয়ী মিষ্টির কারিগর ছবি: কাশেম হারুন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঘুরে এসে: রাত ৩টায় ঘুম থেকে জেগে মিষ্টি প্রস্তুতকারকের বাড়ি গিয়ে বসে থাকতেন কৌতূহলী হুমায়‍ুন কবির। এজন্য বকাও শুনতে হয়েছে ঢের।

কিন্তু হাল ছাড়েননি। রাত জেগে ছানা থেকে শুরু করে মিষ্টি তৈরির প্রক্রিয়া দেখতেন। ভাবতেন, আমার তৈরি মিষ্টি কবে মানুষকে খাওয়াতে পারবো।
 
দেখতে দেখতে মিষ্টি তৈরির ইচ্ছা বাস্তবে পরিণত হলো। ওইসময় বাবা আব্দুল হামিদ দুধের ব্যবসা করতেন। বাবাকে সাহায্য করতে বিভিন্ন গ্রাম থেকে দুধ সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন হুমায়ন। আর সুযোগ পেলেই মিষ্টি তৈরি দেখতেন।
 
তারা তিন ভাই সাত বোন। দুধ বিক্রি করে যা আয় হতো তাই দিয়ে টেনেটুনে সংসার চলতো।
 
দুধ বিক্রি করে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা সঞ্চয় করে তিনভাই মিলে ছোট ছাউনির ঘর দিলেন। তাতে মুড়ির সাথে মাখিয়ে হুমায়ুন কবিরের তৈরি রসগোল্লা বিক্রি করা হতো। এভাবেই ক্রমে ক্রমে এলাকার মানুষ হুমায়ুনের মিষ্টির জাদুতে পড়ে গেলো। ধীরে ধীরে আশপাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়লো তার তৈরি মিষ্টির সুনাম।
Nice_Mishtanno_02
সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার পিরোজপুর গ্রামে ঘুরতে গিয়ে বাংলানিউজ সন্ধান পায় এই বিখ্যাত ‍মিষ্টির দোকানির।
 
তার ইচ্ছা জয়ের গল্পটি শুরু হয় ১৯ বছর আগের। বর্তমানে মিষ্টির দোকান ‘নাইস ইন্টারন্যাশনাল এর মালিক তিনি। উপরে টিনের চাল, চারপাশে বেড়ার ছাউনি দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এখানে এত সুস্বাদু মিষ্টি পাওয়া যায়।
 
স্মৃতিচারণ করে হুমায়ুন বলেন,  ম্যালা (অনেক) পরিশ্রম করে হামি এ দোকান গড়ে তুল্যাছি বুঝ্যাছেন। দিন রাত কারিগরের ছামনে বইছ্যা থাইক্যাছি। তারা তাড়হিয়ে (তাড়িয়ে) দিয়ালছি, হামি যাইনিকো। হামার ম্যালা কষ্ট আছে এই দোকানে বুজতে পাৠাছেন (পেরেছেন)।
 
রসকদম (কেজি প্রতি ৩শ’ টাকা), কাটারীভোগ (২শ’ ৫০ টাকা), স্পঞ্জ (৩শ’ টাকা), রাজভোগ (২শ’ টাকা), আনার কলি (২শ’ টাকা), কাঁচা গোল্লা (৩শ’ টাকা)সহ এই দোকানে পাওয়া যায় প্রায় ১০ পদের মিষ্টি।
Nice_Mishtanno_01
সন্দেশের মধ্যে রয়েছে- পেরা (একপ্রকার সন্দেশ ৩শ’ টাকা), ছানা সন্দেশ (৩শ’ টাকা)। এছাড়াও ছানা জিলাপী, ঝুরি, বাতাসা, গজা, দইসহ নানান রকম মিষ্টান্ন দ্রব্যের সমাহার রয়েছে তার দোকানে।

এতসব মিষ্টি নিজের হাতেই তৈরি করেন কিনা জানতে চাইলে হুমায়‍ুন কবির জানান, তার তদারকিতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন কর্মচারী কাজ করেন। দোকানের পেছনে বড় জায়গায় একটি ঘর রয়েছে। সেখানেই সকাল থেকে চলে নানা ধরনের মিষ্টি তৈরির প্রক্রিয়া।
 
Nice_Mishtanno_bgদুপুরের পর থেকে শুরু হয় কাস্টমারের আনাগোনা। দেশি-বিদেশি সব ধরনের কাস্টমার আসে এখানে। জানালেন ক্যাশে বসা হুমায়‍ুন কবিরের ছোট ভাই মো. ফারুক।
 
আঞ্চলিক ভাষায় ফারুক আরো বলেন, হামাদের দোকানে মিষ্টি খাইলে কেউ ভূলতে পারবে নাকো বুঝ্যাছেন। হামরা কোন ভেজাল দেই নাকো।

দোকানে বসে মিষ্টির অর্ডার দিচ্ছিলেন সাব্বির নামে এক ভদ্রলোক। তিনি বললেন, আমার মেয়ে এই দোকানের স্পঞ্জ থেতে খুব ভালোবাসে। বিকেলে গরম গরম মিষ্টি পাওয়া যায়। ‍ তাই সোনা মজসিদ থেকে এসেছি মিষ্টি কিনতে।
 
পিরোজপুর এলাকার সফল মিষ্টি ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন হুমায়‍ুন কবির। তিনি প্রমাণ করেছেন সফলতা অর্জনে ইচ্ছা, শ্রম, ধৈর্যই যথেষ্ট। তাই তো দুধ বিক্রেতা থেকে মিষ্টি ব্যবসায়ী হয়ে গ্রামের আদর্শ করেছেন নিজেকে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৫
জেডএফ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।