ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

তালের ডিঙিতে ৫০ বছরের জীবিকা

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৫
তালের ডিঙিতে ৫০ বছরের জীবিকা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

যশোর: বয়স ৮০ বই কম নয়। বছর চারেক আগে ব্রেইনস্ট্রোক হয়েছিল।

চিকিৎসকের পরামর্শ বাকি জীবনটা বিশ্রামে থাকতে হবে। কিন্তু ছয় মাসের বেশি বিছানায় থাকতে পারেননি সুবোল মণ্ডল।

প্রায় ৫০ বছরের পেশা তাকে আবার টেনে নিয়ে আসে বাড়ির বাইরে। তবে আগের মতো ‘বেলি’ (কাঠ কাটার এক ধরনের যন্ত্র) হাতে বাহুর শক্তি দেখাতে না পারলেও ছেলে খুদিরাম মণ্ডলকে তালের ডিঙি নৌকা তৈরিতে সাহায্য করেন।

খুদিরামও বাবার সঙ্গে খালে-বিলে ভেসে বেড়ানো ডিঙি নৌকা তৈরি করে ১৫/১৬ বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

যশোরের অভয়নগর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের প্রবীণ ডিঙি কারিগর সুবোল রায় বাংলানিউজকে জানান, স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই তিনি এ পেশায় জড়িত। তার বাবা হরিনাথ মণ্ডল গরুর গাড়ির চাকা তৈরি করতেন। বাবার সঙ্গে কাজ করতে করতে গরুর গাড়ির চাকা তৈরি করতে শেখেন তিনি। তবে গরুর গাড়ির ব্যবহার কমে যাওয়া ও ডিঙির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পেশায় কিছুটা পরিবর্তন আনেন তিনি। শুরু করেন তাল গাছ দিয়ে ডিঙি নৌকা তৈরির কাজ। যদিও এ কাজ শিখতে কোনো গুরুর কাছে যেতে হয়নি তাকে। নিজে নিজেই শিখেছেন।

তার ছেলে খুদিরাম বাংলানিউজকে জানান, বাবার মতো তিনিও ১৫/১৬ বছর ধরে নৌকা তৈরি করে আসছেন। আশেপাশের গ্রামে তার বাবার সুনাম থাকায় ভালোই আয় হয় তাদের।

তিনি বলেন, এবার ভারি বৃষ্টির কারণে ডিঙির চাহিদা বেশি। এজন্য এবার একটু বেশি আয় হবে। আশা করছি, এবার আমাদের ঘরে হাজার ২০ টাকা আসবে।

তিনি আরো জানান, এ কাজ করেই তিনি ছেলে অভিজিৎ মণ্ডলকে উচ্চ শিক্ষিত করেছেন। অভিজিৎ এবার খুলনার বিএল কলেজ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষা দেবেন। আর এক মেয়ে শ্রাবণী নওয়াপাড়া ডিগ্রি কলেজে বিকম পড়ছেন।

তবে সুবোল, খুদিরামরা নিজেরা ডিঙির ব্যবসা করেন না। তারা মজুরির বিনিময়ে অন্যের নৌকা বানিয়ে দেন। বর্তমানে একটি তালগাছ থেকে দু’টি ডিঙি তৈরির জন্য তারা মজুরি নেন এক হাজার ৫০০ টাকা। যা দুই জনের সারা দিনের শ্রমে তৈরি হয়ে যায়। সুবোল শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় অসিত ধর নামে এক যুবক তাদের সঙ্গে কাজ করেন।

সম্প্রতি নওয়াপাড়া-মণিরামপুর সড়কে গিয়ে সুবল, খুদিরাম আর অসিত ধরকে কাজ করতে দেখা গেল। তারা বর্তমানে ডোঙা ব্যবসায়ী অভয়নগর উপজেলার সড়াডাঙ্গি গ্রামের অশোক রায়ের কাজ করছেন।

অশোক রায় জানান, তিনি ১৬ বছর আগে এই ব্যবসা শুরু করেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে তাল গাছ কিনে তা দিয়ে মিস্ত্রিদের দিয়ে ডোঙা তৈরি করিয়ে বিক্রি করেন। তিনি জানান, এবার বৃষ্টি বেশি হওয়ায় বিলে, ঝিলে আর খালে পানি জমেছে বেশি।

এজন্য ডোঙার চাহিদাও বেশি। চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার একটি তাল গাছ দুইটি ভাল মানের ডোঙা হয়। যা বর্তমানে আট থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৫ ঘন্টা,  আগস্ট ১৩, ২০১৫
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।