ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

স্মার্টরা বাঁচেন বেশিদিন

শুভ্রনীল সাগর, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৫
স্মার্টরা বাঁচেন বেশিদিন

ঢাকা: আপনি স্মার্ট? ভেবে বলবেন কিন্তু! কেননা এর উত্তরেই আপনার বাঁচা-মরা। ধন্দে পড়ে গেলেন তো! বিষয়টি হলো, বুদ্ধির দফতরে যারা একটু পিছিয়ে রয়েছেন, তাদের তুলনায় এগিয়ে থাকা মানে স্মার্টরা বাঁচবেন বেশিদিন।

কেন?

হ্যাঁ, সেই উত্তর নিয়েই এসেছে নতুন গবেষণা। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এপিডেমিওলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়, বুদ্ধিমত্তা ও বেশিদিন বাঁচার মধ্যকার সম্পর্কের প্রায় ৯৫ শতাংশ হচ্ছে জিনগত প্রভাবের কারণে।

বিভিন্ন বয়সীদের উপর জরিপ চালিয়ে একটি মজার তথ্যও দিয়েছে গবেষণা, অধিকাংশই কিশোর বা তরুণ বয়সের চেয়ে মধ্যবয়সে বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা বা আইকিউ টেস্ট দিয়ে থাকেন বা আগ্রহী। বুদ্ধি করে বুদ্ধি বাড়ানো নিশ্চিত করা আর কী!

আইকিউ টেস্টের বিষয়টি অবশ্য আমাদের দেশে একটু অপরিচিত ঠেকবে। কারণ, এখানে এ ধরনের কোনো বাধ্যতামূলক বা স্বউদ্যোগী ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। উন্নত দেশে অবশ্য শিশুদের স্কুলের উদ্যোগেই আইকিউ টেস্ট নেওয়া হয়। অন্য বয়সীরাও নিজ উদ্যোগে চাইলে টেস্ট দিতে পারেন। যাইহোক, এটি অন্য প্রসঙ্গ। বরং মূল বিষয়ে ফেরা যাক।

গবেষকরা বলছেন, কেবল সঠিক সিদ্ধান্ত বা আর্থিক সচ্ছলতার কারণেই স্মার্ট ব্যক্তিরা বেশিদিন বাঁচেন না। তারা বেশিদিন বাঁচেন কারণ, জিনগত গঠনই তাদের দীর্ঘজীবী করতে বড় ভূমিকা রাখে।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের সহযোগী গবেষক রোজালিন্ড ‍অর্ডেনের ভাষ্য, আমরা বুদ্ধিমত্তা ও দীর্ঘজীবীতার মধ্যে একটি জিনগত যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছি।

এর আগে, স্কটল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের উপর একইরকম একটি গবেষণা চালায় বৃটিশ মেডিকেল জার্নাল। ২০০১ সালে প্রকাশিত গবেষণাটিতে দেখা যায়, ১০ থেকে ১২ বছর বয়সে দেওয়া আইকিউ টেস্টে বেশি নম্বর পাওয়া ব্যক্তিদের প্রায় প্রত্যেকেই কমপক্ষে ৭৬ বছর বেঁচেছেন।

তবে অনেকেরই ধারণা, বেশি টাকা থাকলেই মানুষ বেশিদিন বাঁচে। কারণ, টাকা থাকলে ভালো থাকা-খাওয়া-চিকিৎসাসহ সবই সহজলভ্য হয়। দুর্ঘটনা ছাড়া এরকম স্বাস্থ্যকর আর সচ্ছল জীবন যাপনে থাকলে মানুষের আয়ু এমনিতেই বেড়ে যায়।

এ বিষয়ে ঠিক উল্টো কথা বলছে ২০০৭ সালে জার্নাল অব হেলথ ইকোনোমিক্সে প্রকাশিত একটি গবেষণা।

প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, নোবেল পুরস্কার বিজয়ীরা দীর্ঘজীবী হন। তার কারণ নিশ্চয়ই তারা পুরস্কার থেকে মোটা অংকের টাকা পান তা নয়। বরং মগজটা তাদের বরাবরই ধারালো বলেই বাঁচেন বেশিদিন।  

এবার বলুন, আলবার্ট আইনস্টাইন কত বছর বেঁচেছিলেন? আর মাথা চুলকাতে হবে না, ৭৬ বছর। ওনার আইকিউ স্কোর কত ছিল জানেন? ১৬০! এই একই আইকিউ স্কোর নিয়ে স্টিফেন হকিংয়ের চলছে ৭৩।  

গবেষকরা অবশ্য দীর্ঘদিন বাঁচা বা বুদ্ধিমান হওয়ার ক্ষেত্রে পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক সুযোগ-সুবিধার কথাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তবু এসব তাদের স্মার্ট তথা বুদ্ধিমত্তারই পুরস্কার ও প্রাপ্য বলে ধরছেন।

অর্ডেন বলছেন, হতে পারে কেউ বিত্তবান বা খুব শিক্ষিত পরিবারে জন্ম নিয়েছেন। কিন্তু তার পূর্বপুরুষ নিশ্চয় তার বুদ্ধিমত্তা দিয়েই এসব অর্জন করেছেন। আর সেই বুদ্ধিমত্তার জিন বংশগতির মধ্য দিয়ে তিনিও বহন করে চলেছেন।

‍আর বুদ্ধিমানরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার স্বাস্থ্য, লেখাপড়া, পেশা নির্বাচন, পরিবার পরিকল্পনাসহ সার্বিক বিষয়ে সঠিক ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এগুলো তাকে জীবনে অনেকদূর এগিয়ে দেয়। তিনি হয়ে ওঠেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী, কর্মঠ আর জীবনপ্রেমী। এসবই তাকে মানসিক-শারীরিক ব্যধিমুক্ত রাখে ও বেশিদিন বাঁচার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নিয়ামক হয়ে ওঠে।

বুঝলেন তো! এবার বলুন, বুদ্ধির পরীক্ষা একবার দিয়েই দেখবেন নাকি?

বাংলাদেশ সময়: ০২২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৫
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।