ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

হাওরাঞ্চলে সোনালি মাছের অভাব

জিয়া উদ্দিন দুলাল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৫
হাওরাঞ্চলে সোনালি মাছের অভাব ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হবিগঞ্জ: হাওরাঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির সোনালি মাছ। জেলে অথবা সৌখিন মাছ শিকারিদের জালে আগের মতো আর চোখ ধাঁধানো এসব মাছের দেখা মেলে না।



নদী খনন না করা, বর্ষা মৌসুমে সময় মতো পানি না আসা, জলাশয় দখল, অপরিকল্পিতভাবে ডিমওয়ালা মাছ শিকার এবং মাছের প্রজননে বাধা দেওয়ায় হাওরে এসব মাছ না থাকার প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সরেজমিন হবিগঞ্জের বানিয়াচং, নবীগঞ্জ, বাহুবল ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাওরাঞ্চল ঘুরে স্থানীয় লোকজন, জেলে ও সৌখিন মাছ শিকারিদের সঙ্গে আলাপকালে এবং জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

১০ বছর আগেও বর্ষা মৌসুমে সোনালি গুতুম, বাইন মাছ, রাণী ভবানী (স্থানীয় ভাষায় এক প্রকার সোনালি ছোট মাছ), পাবদা ও বাঘা গুতুম মাছের দেখা মিলতো। এসব মাছ এখন আর তেমন দেখা যায় না।

এ ছাড়া বাঘা আইর, কইয়া, পোডা, ছেলা, কাজলা, ঘাঘট, কটি, বেত গুইঙ্গা, চিকরা বাইনসহ বিভিন্ন ছোট-বড় আকৃতির মাছ হারিয়ে গেছে হাওর থেকে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, শুকনো মৌসুমে বিভিন্ন নদীর স্থানে স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ আহরণ, কোণা জাল ও কারেন্ট জালসহ মাছ নিধনকারী বিভিন্ন জালের ব্যবহারের ফলে মাছের প্রজনন ঠিকমতো হচ্ছে না।

স্থানীয়রা আরও জানান, বর্ষার শেষ দিকে কতিপয় মাছ শিকারি হাওরে মাছ ধরতে কম পানির এলাকায় ইঁদুর মারার বিষ ছিটিয়ে দেয়। ফলে কম পানির সমস্ত মাছ বেশি পানির দিকে ছুটতে থাকে। পরে বেশি পানির এলাকায় বাঁধ দিয়ে ছোট-বড় সমস্ত মাছ শিকার করা হয়। আর যে মাছগুলি কম পানির এলাকায় থাকে সেগুলো বিষক্রিয়ায় মারা যায়।

বানিয়াচং উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের জেলে লাল মোহন দাশ (৫৫) বাংলানিউজকে বলেন, আগের মতো হাওরে পানি আয় না। পানি না আইলে মাছ আইবো কইথ থিকা (কোথা থেকে)।

তিনি স্মৃতিচারণ করে জানান, আগে হাওরে রেথ, রাণী ভবানী, কটিসহ বিভিন্ন আকৃতির ছোট ও সুন্দর মাছ পাওয়া যেত। এখন আর ওইসব মাছের দেখা পাওয়া যায় না।

এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, সুনির্দিষ্ট কয়েক প্রজাতির মাছ ছাড়া হাওরে আর আগের মতো দৃষ্টিনন্দন মাছ পাওয়া যায় না।

তিনি জানান, জেলায় ৪২ হাজার ৫১২ হেক্টর আয়তনের ৫৪টি হাওর, ২ হাজার ৯৭৬.৫৮ হেক্টর আয়তনের ৬৭৫টি সরকারি বিল, ১১৭ হেক্টর আয়তনের ৫৩৭টি বেসরকারি বিল, ৫ হাজার ৫৩৬ হেক্টর আয়তনের ১৪টি এবং ৫৪৯.৭৬ হেক্টর আয়তনের ৭৪টি খাল রয়েছে।

এ সব হাওর, নদী ও বিলগুলোতে ১৫ হাজার ২৭৯ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। মাছের বৃদ্ধির জন্য দ্রুত এসব নদী ও খাল খনন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৫
আরএ/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।