ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

মিথ্যা বলা হলো থিওরি অফ মাইন্ডের সাইড ইফেক্ট

ফারাহ্‌ মাহমুদ, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
মিথ্যা বলা হলো থিওরি অফ মাইন্ডের সাইড ইফেক্ট

মিথ্যা বলা বেশ পরিণত ধরনের ব্যবহার। কারণ একজন মানুষ তখনই মিথ্যা বলতে শেখে, যখন সে বুঝতে পারে যে তার বিশ্বাস এবং অন্যদের বিশ্বাস আলাদা।

নিজের বিশ্বাস সম্পর্কে জ্ঞান এবং অন্যের বিশ্বাস সম্পর্কে জ্ঞান—এই দুই ধরনের জ্ঞান আলাদা করতে পারা নিয়ে মনোবিজ্ঞানীদের বিস্তর গবেষণা আছে। এই গবেষণা ‘থিওরি অফ মাইন্ড’ নামে পরিচিত।

‘থিওরি অফ মাইন্ড’ হচ্ছে নিজের এবং অন্যের মানসিক অবস্থার পার্থক্য বুঝতে পারা। যেকোন পরিস্থিতিতে অন্য একজন মানুষ কী পদক্ষেপ নিতে পারে, তা অনুমান করতে পারার ক্ষমতা জন্মায় এই থিওরির মাধ্যমে।

সাধারণত চার বছরের কম বয়সের শিশুরা মিথ্যা বলতে পারে না। কারণ ‘থিওরি অফ মাইন্ড’ সম্পর্কে চার বছরের কম বয়সের শিশুদের কোনো ধারণা থাকে না।

মিথ্যা বলার সাথে ‘থিওরি অফ মাইন্ড’ এর সম্পর্ক বোঝার জন্য এই বছর চীনে একটি পরীক্ষা করা হয়। ৬০ জন প্রিস্কুলের বাচ্চা নিয়ে এই পরীক্ষাটি করা হয়। প্রথমে একটি লুকোচুরি খেলার আয়োজন করা হয়। একজন পরীক্ষক দুইটা ছোট কাপের একটার নিচে চকোলেট লুকিয়ে রাখেন। তখন বাচ্চারা চোখ বন্ধ করে রাখে। পরে চোখ খুলে দুইটা কাপের মধ্য থেকে একটা বাছাই করতে বলা হয় তাদের। বাছাই করা কাপের ভেতর চকলেট থাকলে, চকলেটটি তাদের উপহার হিসেবে দেয়া হয়। ভুল কাপ বাছাই করলে কোনো চকোলেট দেয়া হয় না।

এবার দ্বিতীয় একটি পরীক্ষায় বাচ্চাদের বলা হয় কাপের নিচে চকলেট লুকাতে। পরীক্ষক দুইটা কাপের মধ্যথেকে একটা বেছে নেবেন। বেছে নেয়া কাপের নিচে চকলেট থাকলে তিনি জিতে যাবেন। চকলেট খুঁজে পেতে ব্যর্থ হলে বাচ্চারা জিতে যাবে। পরীক্ষাটি করা হবে পরপর ১০ বার। যদি ১০ বারই পরীক্ষক চকলেট খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বাচ্চারা জিতে যাবে। পুরষ্কার হিসেবে তারা পাবে তাদের পছন্দ মতো স্টিকার। তবে, শর্ত হলো পরীক্ষক কাপ বাছাই করবেন চোখ বন্ধ করে। বাচ্চাদের বলতে হবে পরীক্ষকের বেছে নেয়া কাপের নিচে চকলেট আছে কি না। এক্ষেত্রে তাদের মিথ্যা বলার সুযোগ থাকছে।

দ্বিতীয় পরীক্ষাটি করার আগে পরীক্ষামূলক আরো একটি পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষায় যারা মিথ্যা বলেছে, তাদের বাদ দিয়ে বাকিদের দ্বিতীয় পরীক্ষার জন্য বাছাই করা হয়। বাছাইকৃত বাচ্চাদের দুইভাগ করা হয়। এর মধ্যে এক ভাগকে প্রায় ১২ দিন ধরে থিওরি অফ মাইন্ড সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ধীরে ধীরে তাদের বোঝানো হয় কিভাবে তাদের বিশ্বাস আর অন্যের বিশ্বাস ভিন্ন হতে পারে। অন্য এক ভাগকে সাধারণ যুক্তি তত্ত্ব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

প্রশিক্ষণের পর দ্বিতীয় পরীক্ষাটি আবার করা হয়। এবার দেখা যায় থিউরি অফ মাইন্ড ব্যাপারে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের ৬০% মিথ্যা বলে। বাকিদের মাত্র ১০% খেলায় জিতে যাবার জন্যে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। একই পরীক্ষা এক মাস পরে নিয়েও প্রায় একই ফল পাওয়া যায়।

বাচ্চারা যখন বুঝতে পারে অন্য মানুষের ধারণা বা বিশ্বাস তাদের নিজেদের ধারণা বা বিশ্বাসের চেয়ে ভিন্ন হওয়া সম্ভব, তখনই বাচ্চারা মিথ্যা বলতে শিখে। নিজের আর অন্যের মানসিক অবস্থার মধ্যে পার্থক্য করতে শেখাই ‘থিওরি অফ মাইন্ড’। তবে ‘থিওরি অফ মাইন্ড’ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে বাচ্চারা শুধু মিথ্যা বলতে শেখে তা নয়। এ সম্পর্কে ধারণা না থাকলে ভালো শিক্ষক হওয়া যায় না। কারণ শিক্ষক হতে হলে নিজের জ্ঞান ও অন্যের জ্ঞান ও বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য করতে জানতে হয়। একজন ভালো শিক্ষক জানেন যে তার বাস্তবতা অন্যদের বাস্তবতা থেকে ভিন্ন হতে পারে।

তবে, বলা যায়, মিথ্যা বলা হচ্ছে ‘থিওরি অফ মাইন্ড’ জানার সাইড ইফেক্ট!

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
এফএম/টিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।