ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

জিরো থেকে হিরো বদরগঞ্জের জগাই কুণ্ডু

সাইফুর রহমান রানা, ডিভিশনাল স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৭
জিরো থেকে হিরো বদরগঞ্জের জগাই কুণ্ডু দই তৈরি করছেন জগাই কুণ্ডু। ছবি-সাইফুর রহমান রানা

রংপুর: জগাই কুণ্ডু (৬৫), পেশায় দই বিক্রেতা। দুধ দিয়ে তৈরি ছানা আর দই বিক্রি করেই কোটিপতি হয়েছেন তিনি। জগাই কুণ্ডুর বাবা দরিদ্র হারাণ কুণ্ডু পাবনা জেলা থেকে ৫ ছেলে ও ২ মেয়েকে নিয়ে সপরিবারে রংপুরের বদরগঞ্জের সি.ও রোডে চলে আসেন।

ছোট একটি কুঁড়ে ঘর তৈরি করে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। ওই সময় পরিবারের ভরণ-পোষণ নিয়ে বিপাকে পড়েন হারান কুণ্ডু।

কীভাবে এতো বড় সংসার চলবেন, এ নিয়ে তার চিন্তার অন্ত ছিল না। এ অবস্থা দেখে বাবাকে সহযোগিতা করতে জগাইয়ের অন্য ৪ ভাই অন্যের মিষ্টির দোকানে কাজে যোগ দেন। এভাবেই শুরু হয় তাদের জীবন।

ধীরে ধীরে জগাইয়ের অন্যান্য ভাইয়েরা বদরগঞ্জে ছোট ছোট মিষ্টির দোকান দেন। হারাণ কুণ্ডুর ছোট ছেলে জগাই একটু ডানপিটে ও কাজে অমনোযোগী হওয়ায় তাকে নিয়ে তার বাবা-মায়ের চিন্তার অন্ত ছিল না।

এদিকে জগাইয়ের অন্য ভাইয়েরা মিষ্টির ব্যবসায় এগিয়ে যেতে থাকেন। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে অনেকটা জোর করেই হারাণ কুণ্ডু ছেলেকে দুধ দিয়ে ছানা আর দই তৈরির কাজে লাগিয়ে দেন। জগাই প্রথমে তার ভাইদের দোকানে তার তৈরি ছানা ও দই সরবরাহ করতো। ব্যবসায় লাভ হতে থাকলে তিনি ধীরে ধীরে গোটা উপজেলায় দই ও ছানা সরবরাহ করতে থাকেন।

বর্তমানে জগাই তার দই ও ছানা গোটা রংপুর জেলায় সরবরাহ করছেন। এছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে তার দই ও ছানা নিয়ে যান। প্রতিদিন তিনি ২ মণ দই বিক্রি করেন। প্রতি কেজি দই বিক্রি করেন ২শ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা করে। শুধু দই ও ছানা বিক্রি করেই তিনি হয়েছেন কোটিপতি।

জগাই কুণ্ডুর তৈরি দই।  ছবি-সাইফুর রহমান রানাসরেজমিন বদরগঞ্জ পৌর শহরের সিও রোড মহল্লায় তার বাড়ি সংলগ্ন দই ও ছানা তৈরির কারখানায় গিয়ে কথা হয় জগাই কুণ্ডুর সঙ্গে।

জীবনে সফলতার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জীবনে খুব কষ্ট করেছি। তাই আজ এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি। আমার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে ডিগ্রি পাশ করে আমার ব্যবসায় সহযোগিতা করছে। মেয়ে রংপুরের কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অর্নাসে পড়ছে।
 
তিনি আরও বলেন, দক্ষ কারিগর ছাড়া ভাল দই কেউ তৈরি করতে পারবে না। পরিশ্রম করে ব্যবসায় সফল হয়েছি বলেই ভালো লাগে। আরও ভালো লাগে আমার কারখানায় অনেক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। বর্তমান সময়ের ছেলেদের বলবো অহেতুক স‘ময় নষ্ট না করে নিজ নিজ কাজে মনযোগী হলে সফলতা একদিন আসবেই।
 
কারখানায় গিয়ে কথা হয় দিনাজপুর জেলা থেকে দই নিতে আসা পাইকার অমল রায়ের সঙ্গে।

তিনি বলেন, জগাই কাকার দই অত্যন্ত ভালো ও মানসম্মত। আমি একটু কম দামে একান থেকে দই কিনে দিনাজপুরে নিয়ে বিক্রি করি। তাতে আমারও ভালো রোজগার হয়।
 
পৌর শহরের সি.ও রোড মহল্লার বাসিন্দা ও বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বিমলেন্দু সরকার বলেন, জগাইয়ের দই এতটাই মজাদার যে একবার খেলে বার বার খেতে ইচ্ছে করে। তার মত পরিশ্রমী মানুষ আমি কম দেখেছি। পরিশ্রম করেই তিনি এত দূর এসেছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।