ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

একটি বাড়ি থেকে এখন দশ গ্রামে গোলাপ বাগান

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭
একটি বাড়ি থেকে এখন দশ গ্রামে গোলাপ বাগান একটি বাড়ি থেকে এখন দশ গ্রামে গোলাপ বাগান- ছবি: দীপু মালাকার

বিরুলিয়া থেকে ফিরে: তিন দশক আগের কথা। ঢাকা চিড়িয়াখানার মাস্টাররোলের কর্মী আবেদ আলী পাশের বোটানিক্যাল গার্ডেনে গোলাপ চারা তৈরি কাজ শিখে ফেলেন অনেকটা জোর করেই। দু’চারটা চোখ নিয়ে বাসায় ফেরেন, তৈরি করেন চোখ কলম। এখন প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে তার গোলাপ বাগান।

মাঝখানে কিছু ‘ঝড়-ঝঞ্জা’ গেলেও ফিরে তাকাননি, আবেদ আলীর গোলাপ চারা এখন পুরো বিরুলিয়ার এক ডজনের বেশি গ্রামের বাগানে। এসব গ্রামের প্রায় নব্বই ভাগ মানুষ চাষ করছেন গোলাপ।

বিরুলিয়ার গোলাপ এখন প্রধান চাহিদা মেটাচ্ছে ঢাকার।

বাবা কৃষি কাজ করতেন, ছোট বেলায় অর্থকষ্টে বেশি দূর লেখাপড়া করা হয়নি। চিড়িয়াখানার বিপরীতে নবাববাড়ী এলাকার আবেদ আলী ও তার বড় ভাই সাবেদ আলীও কাজ করতেন চিড়িয়াখানায়।
গোলাপ বাগানের পরিচর্যায় স্প্রে করা হচ্ছে- ছবি: দীপু মালাকার
বিরুলিয়ায় নিজের গোলাপ বাগানের কাছে দাঁড়িয়ে শুরুর গল্পটা বলতে গিয়ে চোখ মোছেন আবেদ আলী। বলেন, টাকার কষ্টে বেশি দূর পড়তে পারিনি। দুই ভাই চিড়িয়াখানায় মাস্টাররোলে কাজ শুরু করি। দুপুরে কাজ শেষে বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে সেখানকার কর্মীদের কাছে মিরান্ডি জাতের গোলাপের চোখ কলম করার কাজটা শেখার চেষ্টা করি। অনেক বাধা দিলেও শিখে ফেলি কাজটা।

“চোখ কলম দিয়ে একশ’ থেকে দেড়শ’ চারা তৈরি করি। বাসার ছাদে টবে বাগান শুরু। সেই ফুল শাহবাগ, ফার্মগেটে বিক্রি করতাম। একটু লাভ দেখে চাষ
বাড়ালাম। নবাববাড়ী থেকে চাষ এলো তুরাগ নদীর এপারের এই বিরুরিয়ায়। ”

১৯৮৫ সালে দুই ভাই শুরু করলেও সঙ্গে যোগ হন অ‍াবেদ আলীর খালাতো ভাই জমসের, বন্ধু খালেক। এই চার-পাঁচ জন জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন গোলাপ বাগান। সময়টা বেশ ভালোই চলছিলো। কিন্তু ১৯৮৮ সালের বন্যায় ভেসে যায় সব। পানি জমে নষ্ট হয় কয়েক বিঘা গোলাপ বাগান।
কুশির গোড়ায় চাকুর ধারালো মাথা দিয়ে ফেঁড়ে সবুজ অংশ দুই পাশে আলাদা করা হচ্ছে- ছবি: বাংলানিউজ
তবে বন্যায় ভেসে যায়নি আবেদ আলীর স্বপ্ন। আবার শুরু করেন। চিড়িয়াখানায় কাজ শেষে বিকেল এবং ছুটির দিনগুলোতে গোলাপ বাগানে সময় দেন। নিজে চোখ কলম তৈরি করে চারা রোপণ করতেন। এভাবে তিনি চাষ বাড়ান। তাদের সফলতা দেখে আশপাশের লোকজনও উদ্বুদ্ধ হন।

আবেদ আলী জানালেন, আমার এক খেতে দেড়শ’ চারার টব ছিলো। তিন দশক পর এখন আমরাই ২৫ বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করছি। প্রতি বছর ৬০ হাজার টাকা লিজ বাবদ দিতে হয়।
ফুল চাষ করে পরিবারের খরচ চলছে- ছবি: দীপু মালাকার
শুধু বিরুলিয়ায় সাদুল্যাপুর ছাড়াও বাগ্নীবাড়ী, মোস্তাপাড়া, আকরান, নয়াপাড়া, সারুলিয়া, চন্ডা, হোমারচর, শ্যামপুরসহ আরও কয়েকটি গ্রামে মাঠের পর মাঠ চাষ হচ্ছে গোলাপ এবং উৎপাদন হচ্ছে গোলাপ চারা।

গোলাপ চাষে খরচ এবং লাভ প্রসঙ্গে আবেদ আলী বলেন, প্রতিটি চারা পাইকারি দামে ১৫-২০ টাকায় কেনা হয়। এক বিঘা জমিতে ছয় হাজার চারা রোপন করলে প্রথম কয়েক বছর ফলন ভালো আসে, নিয়মিত পরিচর্যা করলে ফলন বাড়ে। এক বিঘা জমিতে দিনে চার থেকে সাড়ে চার হাজার ফুল পাওয়া যায়।
সাদুল্যাপুরে ভালোবাসার চাষ- ছবি: দীপু মালাকার
প্রতিদিন বিকেলে ফুল তুলে সন্ধ্যা থেকে বিক্রি শুরু হয়। সামনে কয়েকটি উৎসবকে কেন্দ্র করে পাইকারি বিক্রি হয় প্রতি বান্ডেল (৩০০টি) এক থেকে দেড় হাজার টাকায়। তবে অন্য সময় দামটা কিছু কম।

ফুল চাষ করে পরিবারের সদস্যদের খরচ চলছে। নিজে বাড়ি করেছেন। লাভটা বেশ ভালোই। এখন আর কষ্ট নেই, হাসিমুখে সে কথাগুলোই বললেন আবেদ আলী।

***‘জংলা’ জাত থেকে বাহারী ‘মিরান্ডি’

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭
এসআরএস/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।