এ দ্বৈত পরশটুকুই চা শিল্পকে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে সগৌরবে। সেই তামাটে হাতের নারীদের হাত দিয়ে উত্তোলন করা চা পাতাগুলো কারখানার বৈদ্যুতিক যন্ত্রে ক্রমঘূর্ণামান হতে থাকে শিল্পে রূপান্তিত হবার জন্যে।
দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি উঠে আসে যে নারীদের হাত স্পর্শ করে সেই নারীদের অনেকেই আজ রয়েছে গেছেন ছোট ছোট অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে। কর্মক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধার অভাব, আবাসন সংকট, সঠিক মুজুরি দেওয়া- প্রভৃতি সমস্যাগুলো অদ্যাবধি দূর হয়নি।
সকালটা ফুটে উঠতেই কাজের তাগিদ পড়ে যায় তাদের। প্রথমে সংসারের টুকিটাকি কাজ। তারপর পাতা উত্তোলনের কাজে চলে যাওয়া। ঘরের নানা কাজগুলো সেরে দ্রুত বেরিয়ে পড়তে হয় তাদের।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, নারী-পুরুষের মজুরি এখন একই। এ, বি এবং সি ক্যাটাগরির চা বাগানের জন্য যথাক্রমে ৮৫/- টাকা, ৮৩/- টাকা এবং ৮২/- টাকা। ৭০% বাগান হলো ‘এ’ ক্যাটাগরির বাগান। বাংলাদেশে মোট চা বাগানের সংখ্যা ২৪০টি (ফাঁড়ি বাগানসহ)। আর ফাঁড়ি বাগান ব্যতীত মূল বাগান রয়েছে ১৫৮টি। সারাদেশে কর্মরত চা শ্রমিকদের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার। এর মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ ভাগের উপরে নারী চা শ্রমিক রয়েছেন।
‘কেমন আছেন চায়ের নারীরা’ এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বুধবার (০৮ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টায় ফুলছড়া চা বাগানে গিয়ে কথা হলো পূর্ণিমা বাকতি, সন্ধ্যা ভূমিজ, শিলা গোয়ালা, অলকা বাকতি এবং শোভা নায়েকের সঙ্গে।
পূর্ণিমা বাকতি ও সন্ধ্যা ভূমিজ বলেন, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আমরা পাতা তোলার কাজ করি। সিজনে সকাল ৭টার দিকে যেতে হয়। আমরা দৈনিক মজুরি ৮৫ টাকা করে পাই। সে হিসেবে কেজি প্রতি দাম ৩টা ৬ পয়সা।
তারা আরো বলেন, আমাদের নিরিখ (পাতা উত্তোলনের নির্ধারিত পরিমাণ) জনপ্রতি ২৩ কেজি করে বাধ্যতামূলক করে বেঁধে দেয়া আছে। অতিরিক্ত পাতা উত্তোলন করলে কেজি প্রতি দ্বিগুণ অর্থাৎ ৭/- টাকা দেয়ার কথা থাকলেও তা আমাদের কখনো দেওয়া হচ্ছে না।
সিজনে আমরা সারাদিনে ২৩ কেজি নির্ধারণ করা থাকলেও ৩০ থেকে ৫০ কেজি পর্যন্ত চা পাতা তুলতে পারি বলে জানান পূর্ণিমা বাকতি।
অলকা বাকতি এবং শোভা নায়েক বলেন, উৎসব ছুটির সময় কাজ করতে আমাদের দৈনিক মজুরি দ্বিগুণ দেয়ার কথা থাকলেও তাও দেয়া হয় না বলে জানান তারা। ঠিকা দফা এবং স্থায়ী দফার শ্রমিকদের মজুরি এক হওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়না। বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সদস্য এবং চা শ্রমিক সন্ধ্যা ভূমিজ বলেন, এখন আমাদের বড় সমস্যা হলো কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে বিভিন্ন বাঁধার মুখে পড়তে হয়। একেকটি সেকশনে (পৃথক পৃথক আবাদ) বৃষ্টির সময় ছাউনি থাকে না। ফলে বৃষ্টি গায়ে মেখেই কাজ করাতে গিয়ে ঠাণ্ডাজনিত রোগ হয়।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চা শ্রমিকদের অধিকার এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আসছি।
নারীদের আমাদের স্পেশাল যে বিষয়টি রয়েছে সেটি হলো, আমরা চা বাগানের নম্বরগুলোতে নারী চা শ্রমিকদের জন্য শৌচাগার এবং প্রক্ষালন কক্ষ নেই। ফলে কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে মারাত্মক অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয়। বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি দেবার জন্য বাগান কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা জোর দাবি জানিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, নারী চা শ্রমিকদের ক্ষমতায়নের জন্য আমরা প্রতিটি বাগানে ‘মহিলা টিলা ক্লার্ক’ এবং ‘মহিলা সর্দার’ নিয়োগের আবেদন জানিয়েছি। কিছু বাগানে অবশ্য মহিলা সর্দার রয়েছে। কিন্তু মহিলা টিলা ক্লার্ক কোনো বাগানেই এখন পর্যন্ত নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৭
বিবিবি/এসএইচ