ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

রিকশা চালিয়ে মা-বোনের মুখে খাবার দেয় শিশু রনি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৭
রিকশা চালিয়ে মা-বোনের মুখে খাবার দেয় শিশু রনি! রিকশা চালিয়ে মা-বোনের মুখে খাবার দেয় শিশু রনি

লক্ষ্মীপুর: সাইফুল ইসলাম রনি। বয়স বারো। ওর বেড়ে ওঠা অন্য শিশুদের মত নয়। ওর মুখে কোনো হাসি নেই। মনে আনন্দ নেই।ভাগ্য তাকে স্কুল থেকেও ফিরিয়ে এনেছে সংসারের ঘানি টানার নরকে। এখন আর শিক্ষক হওয়া স্বপ্ন দেখে না রনি। কেবল বিধবা মা আর দুই বোনকে নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা তার।

শিশু রনি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রুহিতা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মো. বাবুল হোসেনের ছেলে। স্থানীয় চর রুহিতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রনি ঝরে পড়েছে অভাবের নির্মম কষাঘাতে।

দু’বছর আগে রনি যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছিল তখন তার বাবা রং মিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে হয় শিশু রনিকে। পড়ালেখা ছেড়ে জীবিকার জন্য রিকশা চালাতে শুরু করে দেয় সে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে জীবিকার সন্ধানে রিকশা নিয়ে বের হতে হয় রনিকে। রাতে তার ঘরে ফেরা। সারাদিন রোদে পুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজে রিকশা টানতে হয় তাকে। এভাবেই প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে রিকশা চালায়। তবেই ঘরে চাল-ডাল-নুনের যোগান আসে। দু’ বেলা পেটে দুটো ডাল-ভাত পড়ে। মা-বোন আর নিজের জঠরের ক্ষুধা মেটে তাতে।

যে বয়সে বই-খাতা হাতে স্কুলে যাবে, আনন্দে-উৎসবে বেড়ে উঠবে শৈশব, সেই ছোট্ট বয়সে তাকে ধরতে হয়েছে সংসারের কঠিন হাল। মা-বোনদের মুখে ভাত দিতে চলছে তার জীবনসংগ্রাম। এমন সংগ্রামে হয়তো বেঁচে যাবে প্রাণ; কিন্তু শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পুরণ হবে কি আর? ছোট্ট শরীরটা কি পারবে এতো ধকল সইতে? পারলে কতোদিনইবা পারবে?

করুণ স্বরে রনি বলতে থাকে,  ‘স্বপ্ন ছিলো লেখাপড়া শিখে শিক্ষক হবো। বোনদের ডাক্তার-পুলিশ বানাবো। বাবার মৃত্যুর পর সব স্বপ্ন হারিয়ে গেছে। এখন আর স্বপ্ন দেখি না। কেবল মা-বোনদের নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। ’

রনির মা হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘রনির বাবার মৃত্যুতে সংসারে অভাব দেখা দেয়। বেঁচে থাকা যেন কঠিন হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে পড়ালেখা ছেড়ে রনিকে রিকশা চালতে হয়। ছোট্ট ছেলেটির রোজগারে এখন আমাদের জীবন চলে। ওর বাবা বেঁচে থাকলে ছেলেটির পড়ালেখা বন্ধ হতো না। ’  

কোনো বিত্তবান যদি রনি ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ান, তাহলে  হয়তো শিশু রনি নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করবে। পড়ালেখার সুযোগ পাবে। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক হয়ে উঠবে একদিন। বোনরা হবে ডাক্তার-পুলিশ। কেউ কি ওর দিকে বাড়িয়ে দেবে হাত?
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬০৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।