ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

ক্যামেরা-হাতে পশুপাখিপ্রেমী রুয়েটের দুই মেধাবী বন্ধু!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৭
ক্যামেরা-হাতে পশুপাখিপ্রেমী রুয়েটের দুই মেধাবী বন্ধু! পশুপাখিপ্রেমী রুয়েটের দুই বন্ধু

বৈচিত্র্যময় জগতে ভালোবাসার কতো না রূপরেখা ছড়ানো! আকর্ষণীয় বস্তু বা বিষয় নিয়ে যুগযুগ ধরে মানুষের কতোই না আগ্রহ, উৎসাহ আর উদ্দীপনা।

কতো বিচিত্র মানুষ আর বিচিত্র তাদের মন, আবেগ, পছন্দ ও রুচিবোধ। কতো বিচিত্র আর অদ্ভুত ধরনের মোহ বা খেয়াল রয়েছে মানুষের।

অবশ্য মোহ, খেয়াল বা বিশেষ ধরনের ভাবাবেগ সবার থাকে না। তবে সংবেদনশীল আর সৃজনশীল যারা তাদের ব্যাপারটা আলাদা। তারা গড়পড়তা অন্য দশজনের চেয়ে ব্যতিক্রম। তাদের ভালোবাসার, আবেগের বা প্যাশনের তীব্রতাও বেশি। তাদের এই ভালোবাসার গভীরতা বা তীব্রতা ঈশ্বরের অবদান বললে ভুল হবে না।

এমনও কিছু মানুষ আছেন, দিবানিশি যারা পশু-পাখির পেছনে সময় কাটান। পশুপাখির প্রতি ভালোবাসা  তাদের মন ছুঁয়ে যায়। এই ভালোবাসা তাদের ছুটিয়ে নিয়ে বেড়ায় প্রত্যহের চেনা গণ্ডির বাইরে। গড়পড়তা মানুষের চোখে যা নিতান্তই ‘অপ্রয়োজনীয় স্থান’। সেসব স্থানের অজানা সৌন্দর্য ও গরিমাকে, সেখানকার জীব ও প্রাণবৈচিত্র্যকে তুলে আনা সম্ভব। আগের চেয়ে অনেক অবিকলভাবেই সম্ভব। কেননা উন্নত প্রযুক্তির এই ডিজিট্যাল যুগে উন্নতমানের ক্যামেরা দিয়ে পশুপাখির জীবনকে, নানা প্রাণবৈচিত্যকে নান্দনিকভাবে তুলে আনা খুবই সম্ভব। নতুন মাত্রা  দেওয়াও সম্ভব।  

তবে ক্যামেরায় পেছনে যিনি থাকেন তার থাকা চাই তেমন মন ও প্রখর অনুসন্ধানী চোখ। মোদ্দাকথা তাদের হতে হবে পশুপাখিপ্রেমী, প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। সমাজে এমন মানুষ বিরল। কিন্তু এমনই দুজন মানুষ হলেন রিফাত ইকবাল ও দিপু দত্ত। হঠাৎ করেই তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় রাজশাহী শহরের পাশ ঘেঁষে চলা পদ্মানদীর মাঝ বরাবর একটা জায়গায়। শীতল আর অল্প-স্বল্প পানি আছে এমন এক বালুচরের কাছে। দুজনেই পরস্পরের বন্ধু। প্রকৃতিপ্রেম তাদের এই বন্ধুত্বকে দিয়েছে অন্যরকম গভীরতা ও নতুন মাত্রা। দুজনে এককথায় যাকে বলে মাণিকজোড়।  

যখন তাদের দেখা মেলে তখন তারা দুজনে গভীর পানিতে নেমে রাইফেলের মতো ক্যামেরার লেন্স তাক করে মৃদু পায়ে উড়ন্ত পাখিকে টার্গেট করছেন। মাছ ধরে পাখি কখন বালুচরে পানির কিনারা ঘেঁষে দু'দণ্ড অবস্থান করবে তারই প্রহর গুনছিলেন তারা। আবার সৈনিকের মতো হামাগুড়ি দিয়ে অসম্ভব ঠাণ্ডা বালুচরে ঘন্টা পর ঘন্টা শুয়ে থেকে তবেই পাখিকে ক্যামেরাবন্দি করতে হয়। বলা সহজ করাটা অনেক কঠিন। সেটাই পশুপাখিকে ভালোবেসে তারা করে চলেছেন।  

পশুপাখিপ্রেমী রুয়েটের দুই বন্ধু

এক সময় তাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলাপ জমে যায়। কথা বলার ফাঁকে জানা হয়ে যায় তাদের কথা, তাদের পরিবার পরিজনের কথা। তাদের কাজকর্মের কথা এবং শখের কথাও।  
রিফাত ইকবাল ও দিপু দত্ত রুয়েট ফাইনাল ইয়ারের মেধাবী ছাত্র। রাজশাহীর তালাইমারীতে দু'বন্ধু একই সঙ্গে থাকেন। চমৎকার সুদর্শন, মাথায় ক্যাপ পরা রিফাত ইকবালের জন্ম ঢাকায়। আর মুখে খোঁচা খোঁচা সুন্দর দাড়ি মুখের দিপু দত্তের জন্ম খুলনায়। তারা উন্নত প্রযুক্তির নিজস্ব ক্যামেরা দিয়ে সাড়ে চার বছর ধরে ফ্রেমেবন্দী করে চলেছেন বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি, এদের জীবনচক্র, খাদ্য, আবাসস্থল ও জীবনযাত্রার নান্দনিক ছবি।  

প্রাণিজগতের বিচিত্র রূপ, পরিচয়, প্রাণীদের নাম সংগ্রহের নেশা তারা ছড়িয়ে দিতে চান লক্ষ প্রাণে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের, সব শ্রেণীর মানুষের কাছে। সবাই তাদের কাজকে পছন্দ করেন, উৎসাহিত করেন  বলে দিনকে দিন তাদের নেশা আরো তীব্র হয়েছে। মনের মধ্যে তৈরি হয়েছে এক ধরনের ভাবাবেশ। পশু-পাখির ছবি তোলার ব্যাপারে তাদের নিজস্ব দক্ষতা ও কৌশলও দেখবার মতো। তারা যে খাটুনি দেন, পরিশ্রম করে তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি পশু-পাখির অদ্ভুত কাণ্ডকীর্তি নিয়ে ছবি তুলে ব্যস্ত সময় পার করেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই কাজটার পেছনে লেগে থেকে তারা পেয়ে থাকেন বিনোদন, এক ধরনের মানসিক তৃপ্তি আর পরম প্রশান্তি।

পশু-পাখির প্রতি, প্রাণীজগতের প্রতি তাদের মনে এমন বিরল ভালোবাসা জাগিয়ে তুলেছিলেন তাদেরই এক বড় ভাই। ভদ্রলোকের নাম কুদরাতী খুদা। তার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছিলেন দুই বন্ধু।

তারা বলেন, এমন কাজের জন্য প্রথমেই জরুরি পশু-পাখির প্রতি মমত্ববোধ। এক সময় ফুল-পাখি পশুর সঙ্গে ভালোবাসার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিবিড় সখ্য গড়ে ওঠে। যারা এমন তাদের মানসিক বিকাশটাও হয় সুন্দর। তাদের আচরণে অন্তত অনাবশ্যক রূঢ়তা প্রকাশ পায় না। কিন্তু নাগরিক জীবনে প্রাকৃতিক পরিবেশ, একটু সবুজের ছোঁয়া ক্রমশ দুর্লভ হয়ে উঠছে। শহরাঞ্চলে আজকাল কাক ছাড়া অন্য কোনো পাখি খুব একটা চোখেই পড়ে না।  

আসলে তারা দুই বন্ধু দেশ, মাটি, মানুষ ও প্রকৃতিকে ভালোবাসেন। আর প্রকৃতির মাঝে ওঠাবসা করতে গিয়ে পাখির প্রতি ভালোবাসাটাও নিবিড়, গভীর হয়েছে তাদের।
 
দীপু দত্ত বলেন, বাংলাদেশের অপরূপ প্রকৃতির এক অপূর্ব উপহার পশু-পাখি। এদেশের মানুষ পাখির ডাকে ঘুমিয়ে পড়ে আবার পাখির কলকাকলিতে জাগে। পশু-পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বাড়াতে পশু-পাখি নিয়ে মানুষের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি করতে এবং বাংলাদেশের পশু-পাখি সম্পর্কে জানতে ও জানাতে আমি ও  আমার বন্ধু রিফাত ইকবাল কাজ করে যাচ্ছি।
জানা গেল, ছোটবেলা থেকেই তারা মেধাবী ছাত্র। সেইসঙ্গে পশু-পাখিপ্রেমীও ছিলেন। এদেশের সবুজ-শ্যামল  বৃক্ষের মাঝে হাজারো পশু-পাখির প্রতি তাদের আলাদা ভালোলাগা অজান্তেই জন্ম নেয়। তবে বর্তমানে গাছপালার সংখ্যা অনেকটা কমে এসেছে। আগের মতো হরেক রকমের পাখির আনাগোনা এখন অনেক কমে এসেছে। শহুরে জীবনে তো আজকাল এগুলোর দেখাই পাওয়া যায় না। তাই অনেক খারাপ লাগে। এমনটাই অভিমত রিফাত ইকবালের।

রিফাত জানান, একটি ভাল ছবির পেছনে থাকে অনেক অনেক হতাশা, অপেক্ষা, ভাগ্য, চেষ্টা। সব শেষে ধরা দেয় সফলতা। অধিকাংশ মানুষ শুধু ছবিটাই দেখে Behind the scene কী হয়, কতো কষ্ট আর একাগ্রো সাধনা জড়িয়ে থাকে সেটা খতিয়ে দেখে না।

অনেকেই তার/তাদের কাছে জানতে চান, কোন লেন্সে বা কোন ক্যামেরায় ওঠানো হয়েছে ছবি। কিন্তু খুব কম মানুষই জানার চেষ্টা করেন ছবিটা কিভাবে তোলা হয়েছে। আসলে সবাই ভাল ছবি তুলতে চায়। কিন্তু সময় দিতে চায় না। সঠিক স্থান নির্ধারণ করতে চায় না। ক্যামেরার গিয়ার-এর বাইরেও যে কিছু থাকে অধিকাংশই তা আয়ত্ব করতে চায় না।

পশু-পাখির সংরক্ষণ বিষয়ে মন্ত্রিসভায় একটি যুগোপযোগী আইনের খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নীতিগতভাবে এই আইনটি ‘প্রাণীকল্যাণ আইন ২০১৬’। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক আগেই এমন আইন হয়েছে। এদেশে তা কতটুকু বাস্তবায়িত হবে তা ভাববার বিষয়। আইন যেহেতু হয়েছে সেহেতু আমাদের সবার উচিত এটি যথাযথভাবে মেনে চলা।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৭
এসএনএস/জেএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।