ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

পান পাতার বাঁশি রেজাউল করিম শাহ্’র হাতে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৭
পান পাতার বাঁশি রেজাউল করিম শাহ্’র হাতে পান পাতার বাঁশি রেজাউল করিম শাহ্’র হাতে

পটুয়াখালী: মিলন হবে কতোদিনে... এই গানের সুরে আজো কি খুঁজে বেড়ান মনের মানুষকে। সেই প্রশ্নের উত্তর হয়তো পাওয়া যাবে না কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ৫৯ বছরের রেজাউল করিম শাহ্’র কাছে।

তবে পানপাতা দিয়ে বাঁশি বাজিয়ে একের পর এক গান করছেন তিনি। শুধু পানপাতা বাজিয়ে গান করেন তাও নয়, খালি গলায় তার চায়ের দোকানেই বসিয়েছেন গানের আসর।

আবার কখনো কুয়াকাটা শিল্পীগোষ্ঠীর একাডেমিতে বাদ্যযন্ত্রের তালেও গান করেন তিনি।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও গান করার ডাক পান তিনি। কিন্তু তার এ মেধাকে টাকার কাছে কখনোই বিক্রি করতে চান না।
পান পাতার বাঁশি রেজাউল করিম শাহ্’র হাতে
লালন ভক্ত এই রেজাউল করিম শাহ নিজেই কন্ঠশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, পাতার বাঁশি বাদক, যাত্রাপালার কুশীলব ও লাঠি খেলোয়াড় হিসেবে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সন্ধ্যার পরে তার আপন মনের গানের সুরে পর্যটকের ভিড় জমে। হাতে থাকে তার বহু কল্পনার চরিত্রের ধারক রূপটি।
আবার কখনো তিনি একতারা হাতে নিয়েও দরদী কন্ঠে গেয়ে যান সাঁইজির গান-“মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি, মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি” নয়তো “সমুদ্রের কিনারায় থেকে জল বিনে চাতকী মলো, হায়রে বিধি ওরে বিধি, তোর মনে কি ইহাই ছিল” কিংবা “ওই চরণে দাসের যোগ্য নই, নইলে মোর দশা কি এমন হয়”।
পান পাতার বাঁশি রেজাউল করিম শাহ্’র হাতে
গেয়ে থাকেন নিজের লেখা “আমায় থুইয়া নিঠুর বন্ধু ক্যামনে রইলা বৈদ্যাশে, তোমার লাইগা প্রাণ কাঁদে রইতে নারি ঘরে” অথবা “চল বন্ধু চল যাই কুয়াকাটা ঘুইরা আই সাগর কন্যা কুয়াকাটা চল ঘুইরা আই” এরকম বহু গান।

বাউলদের ও নিজের স্বরচিত গানের কথা ও সুরে কখন যে সাগরপাড়ে বসে শ্রোতারা হারিয়ে যাচ্ছে গানের মাঝে তা কেউ বলতে পারবে না।

তিনি সাগর পাড়ে চায়ের দোকান পরিচালনার পাশাপাশি কুয়াকাটা শিল্পীগোষ্ঠীর একাডেমিতে স্বেচ্ছাসেবী হয়ে শিক্ষকতা করার কাজ করেন। পরিচিতরা ডাকে ওস্তাদ কিংবা গুরুভাই বলে। ওস্তাদ শেখ মোতালেব বাউল’র কাছে নিজের ১২/১৩ বছর বয়সে সংগীতে তার হাতেখড়ি। তখন থেকেই তার সংগীত সাধনা চলতে থাকে।

আড়াই বছর আগে মিষ্টিভাষী বাকপটু এই মানুষটি বাগেরহাট জেলার মংলা থানার গোয়ালির মেঠ থেকে ভাগ্যান্বেষণে চলে আসেন পর্যটন নগরী সাগর কন্যা কুয়াকাটায়।

কুয়াকাটা শিল্পীগোষ্ঠীর একাডেমির একজন পরিচালক হোসাইন আমির বাংলানিউজকে বলেন, কুয়াকাটা শিল্পীগোষ্ঠী এবং স্থানীয় শুভাকাঙ্খীরা ভালোবাসায় আপ্লুত হয়ে তাকে সহযোগীতা করতে থাকেন। অন্যের জায়গায় থাকার জায়গা করে দিয়েছেন। ২৩ শত টাকা দিয়ে কুয়াকাটা সৈকতে শুরু হওয়া চায়ের দোকান থেকেও ভালো আয় হয়ে থাকে তার, প্রচণ্ড গরমে ডাব বিক্রিও করেন তিনি। পাশাপাশি বিভিন্ন হোটেলে বা অনুষ্ঠানে গান গেয়ে ক্ষুদ্র সন্মানীও পাচ্ছেন, যা চলে তার দরিদ্র পরিবার।

বর্তমানে রেজাউল করিম শাহ ছেলের চাকরির চেষ্টায় খুলনায় গেছেন বলে জানিয়ে হোসাইন আমির বলেন, সংসার জীবনে দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে তার। বড় ছেলে সবুজ খুলনায় অনার্সে পড়ে। ছোট ছেলে সজিব এসএসসি পরীক্ষার্থী। কন্যা সাথীকে বিয়ে দিয়ে এখন বেশ ফুরফুরা মেজাজেই থাকেন তিনি। তারপরও সন্তানদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে লিপ্ত রয়েছেন এখনো।
পান পাতার বাঁশি রেজাউল করিম শাহ্’র হাতে
রেজাউল করিম শাহ্ বাংলানিউজকে বলেন, শ্রোতাদের দেওয়া সকল অনুপ্রেরণা নিয়ে এ পর্যন্ত নিজের লেখা গানের সংখ্যা কয়েক’শ। যৌতুক ঠেকাও, প্রগতির পথে ও বিপদ সংকেত নামে তিনটি মঞ্চ নাটকও লিখেছেন। ইচ্ছে থাকলেও টাকার কারণে গান, নাটক, বাঁশির সুর কিছুই ছাপানো গেলো না। যেটুকু ধরে রাখার চেষ্টা করছি তা নিজের ইচ্ছায়।

এ সাগর পাড়ে অনেকেই গান করেন তবে সুর-তাল ছাড়াই, অনেক ভুল হয়। রুটি-রুজির কারণে নিরবে সহ্য করতে হচ্ছে। তবে কুয়াকাটা শিল্পীগোষ্ঠীর মাধ্যমে তরুণদের আজ শেখাতে পেরেছি এটা অনেক কিছু।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৭
এমএস/এএটি/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।