ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বৈশাখের পসরা বানাতে ব্যস্ত কুমারপাড়া

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৭
বৈশাখের পসরা বানাতে ব্যস্ত কুমারপাড়া ছবি: ডিএইচ বাদল-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরেই মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা। উপজেলার ষোলঘর এলাকায় ১০/১২টি পরিবার নিয়ে কুমারপাড়া। যাদের আদি পেশা মাটি দিয়ে হাড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, কলসসহ সব রকমের খেলনা যেমন পুতুল, হাতি, ঘোড়া, হাঁস, পাখি, টাকা-পয়সা রাখার ব্যাংক ইত্যাদি তৈরি করা। পরিবারগুলো বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এ পেশাকে আকড়ে ধরেছেন।

ছবি: ডিএইচ বাদল-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
কাসা-পিতল, সিলভার, প্লাস্টিকের থালা-বাসন, হাড়ি-পাতিলসহ আসবাবপত্র বাজারে আসার কারণে এখন আর মাটির জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ নেই বলে জানান কুমারপাড়ার পাল পরিবারের কর্তা ধীরেন পালের স্ত্রী রাধা পাল।

 

তিনি জানান, এখন যা আয় হয় তা দিয়ে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া, বিয়ে শাদি তো দূরের কথা দু’বেলা খাবারও জোটে না।

তাই, অনেকেই তাদের পৈতৃক এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন ঢাকায় কাজ করেন তারা।

 

ছবি: ডিএইচ বাদল-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আর কয়েকদিন পরেই পহেলা বৈশাখ। বাংলা বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিন। কুমারপাড়ার বাসিন্দারা এখন অনেক ব্যস্ত। কারণ তাদের তৈরি মাটির তৈজসপত্র, খেলনা দিয়েই বরণ করা হবে পহেলা বৈশাখকে।

ছবি: ডিএইচ বাদল-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পহেলা বৈশাখের কাজ নিয়ে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছে কুমারপাড়ার ছোট-বড় সবাই। সকালের সূর্যোদয়ের সঙ্গে শুরু হয় বিভিন্ন তৈজসপত্র, খেলনা বানানো এবং আর শুকানোর কাজ। দুপুর হলেই বাড়ির অন্য সদস্যরা উঠানে বিছানা পেতে শুরু করেন বানানো জিনিসে রঙ করা।

ছবি: ডিএইচ বাদল-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কেউ রঙ করছে মাটির তৈরি আম, কাঠাল, কলা। আবার কেউ করছে ছোটদের খেলনা পুতুল, হাতি-ঘোড়া, কে কার থেকে বেশি জিনিসে রঙ করতে পারেন এ নিয়ে চলে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা। এ খেলা চলে মধ্যরাত পযর্ন্ত।

ছবি: ডিএইচ বাদল-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাবা-মাকে সাহায্য করতে ঘরের শিশুরাও পিছিয়ে নেই। মা-বাবার কাজ দেখে শিখেছে কিভাবে খেলনা, আসবাবপত্রে রঙ করতে হয়। কিন্তু, বাবা-মা চান না ছেলে-মেয়েরা এ পেশায় আসুক। তাদের চাওয়া সন্তানরা লেখাপড়া করুক। এছাড়া ছেলে-মেয়েদের বিদেশ পাঠানোর ইচ্ছার কথাও জানালেন নির্মল পাল।

ছবি: ডিএইচ বাদল-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বছরের শুধু বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় কুমারপাড়ার বাসিন্দারা। পুজায় আগের মতো ঠাকুর দেবতাদের মূর্তি তেমন বিক্রি হয় না। এখন যাদের টাকা আছে তারা পিতলের ঠাকুর দেবতাদের মূর্তি বানিয়ে নেন। শুধু বৈশাখী মেলাগুলোতে কম-বেশি বিক্রি হয়। তাই, বৈশাখ মাসটি তাদের কাছে খুবই গুরত্বপূর্ণ।

ছবি: ডিএইচ বাদল-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মাটির চাকা ঘুরলেও ঘোরে না নরেশ কুমারের ভাগ্যের চাকা। ৪০ বছর ধরে এ কাজ করছেন তিনি। ধার-দেনা করে চার মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। সেই টাকা পরিশোধ করতে না পেরে বাপের ভিটি ছেড়ে দিতে হয়েছে তাকে। আক্ষেপ করে নরেশ কুমার বলেন, ভগবান যা করেন ভালোর জন্যই করেন। কোনো ছেলে নেই আমার। থাকলে এ কাজে কখনোই লাগাতাম না। বংশের পেশা ছাড়তে পারবো না। বাকি যে ক’দিন বেঁচে আছে, কোনোভাবে পার করে দিতে পারলেই হলো।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৭
ওএইচ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।