ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

‘বিলীন হবে না মৃৎশিল্প’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৭
‘বিলীন হবে না মৃৎশিল্প’ দক্ষ হাতে মাটি থেকে পাত্র। ছবিও ভিডিও: দীপু মালাকার

ঢাকা: মাটির বাসনের ব্যবহার এখন আর খুব একটা দেখা যায় না। শুধু বৈশাখ এলেই বিভিন্ন জায়গায় বাঙালিয়ানা পরিবেশ তৈরিতে দেখা যায় মাটির থালা, বাহারী গ্লাসের ব্যবহার। অথচ এক সময় এই মাটির বাসনের কতোই না কদর ছিলো গ্রামগঞ্জে। মাটির ঢাকনা, হাঁড়ি, পাতিল, পানির কলশী সবই দেখা যেতো লাল পোড়া মাটির।

মেলামাইন, সিরামিক আর অ্যালুমিনিয়ামে দখল করেছে মাটির পণ্যের বাজার। একসময় এই মাটির বাসন তৈরি করেই জীবন চলতো এক সম্প্রদায়ের।

যারা মাটির বাসন তৈরি করতো, তাদের পাল বলেই জানতো সবাই। সেই পালদের জীবনাচার এখন পরিবর্তন হচ্ছে।
 
মাটির বাসন বানানো থেকে এখন কে‌উ সোনার কারিগর, কেউ মোবাইলের কারিগর। এভাবেই পেশার পরিবর্তন হচ্ছে। চাহিদার সঙ্গে কমছে পেশার লোক। তবে এই শিল্প একেবারে বিলীন হবে না বলে দাবি বিশ্বনাথ পাল’র। ছোট্ট বেলা বাবার হাত ধরে মাটির কাজে যুক্ত হয়েছেন। এখন বয়স ৬৭ বছর। এখনও মনের আনন্দে তৈরি করে যাচ্ছেন খেলনাপাতি। মৃৎশিল্পী বিশ্বনাথ।  ছবি: দীপু মালাকার
 
সেদিন ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) মেলায় প্রদর্শনীর জন্য মাটির খেলনা তৈরির ফাঁকে কথা হচ্ছিল প্রবীণ এই পালের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আজ যেখানে নিউমার্কেট, ওইসব জায়গায় যে গাতা-গুতা ছিলো, সেই মাটি দিয়ে কত বাসন বানাইছি। অহন তো মাটি পাওয়া যায় না। আর এর চাহিদাও নাই, তাই অহন আর ঢাকনা- হাড়ি-পাতিল বানাই না। যা একটু কাজ করি- সেটা ছোটদের খেলনা পাতি বানাই, আর বিভিন্ন মেলায় প্রদর্শনীতে ভাড়ায় আসি।
 
নিজের ঠাকুর দাদাও ছিলেন পাল, বাবাও কাজ করতেন মাটির। তবে বিশ্বনাথ পালের ‍দুই সন্তান এখন আর এই দিকে নেই। বড় ছেলে সোনার কারিগর, আর ছোট ছেলে ওয়ালটন মোবাইল কোম্পানির ‍কারিগর। মৃৎপাত্র তৈরি দেখছে শিক্ষার্থীরা।  ছবি: দীপু মালাকার
 
‍বিশ্বনাথ পাল বলেন, এই কাজ অহন আর নাই, থাকবো কেমনে চাহিদা নেই, মাটিও পাওয়া যায় না। কমে গেছে মাটির ব্যবহার, তবে এই পেশা একেবারে বিলীন হবে না। কারণ পৃথিবী যতদিন থাকবে বাচ্চা, কাচ্চা আইবো, খেলনার চাহিদাও থাকব বিশ্বাস তার।
 
বিশ্বনাথ পালের বাড়ি রাজধানীর রায়ের বাজার এলাকায়। মাটির বাসন বানানো এখন তার শখও বটে। বিভিন্ন মেলা ও উৎসবে প্রদশর্নীতেই ব্যস্ত থাকতে হয় তাকে। তবে তার তৈরি খেলনা এখনও রাজধানীর দোয়েল চত্বরে বিক্রি হচ্ছে সুনামের সঙ্গে।
 
সেদিন মেলার মাঠে চরকি ঘুরাচ্ছেন, আর একের পর এক বিভিন্ন আকৃতির খেলনা তৈরি করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, মন যা চায়, তাই বানাতে পারি। এখানে কোন মেশিন লাগে না, শুধু হাত আর চোখের কাজ। যতদিন ‍বাঁচবো এই কাজ করেই যাব। এই শিল্প কখনোই বিলীন হবে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৭
এসএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।