ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

সবুজ পাতার ফাঁকে স্বপ্নের দোল

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৭
সবুজ পাতার ফাঁকে স্বপ্নের দোল সবুজ পাতার ফাঁকে স্বপ্নের দোল। ছবি: বাংলানিউজ

বাঘার মনিগ্রাম (রাজশাহী) থেকে ফিরে: পথের পাশেই সারি সারি আমগাছ। ফিরে তাকালেই ঘন সবুজ প্রকৃতির রূপের সতেজতায় নয়ন জুড়িয়ে যাবে।

ঝোপ ঝোপ প্রতিটি গাছেই ধরে আছে থোকা থোকা আম। নুইয়ে না পড়লেও গাছের চিকন ডালে বেশ ভার ধরেছে।

মাঝে মাঝে বয়ে আসা গ্রীষ্মের তপ্ত বাতাসে ক্লান্তি ভেঙে দোল দিয়ে উঠছে সেই আম। পাতার মড় মড় শব্দ নীরবতা ভাঙছে নির্জনতার।

রাজশাহীর সুস্বাদু মিষ্টি আমের কথা উঠলেই প্রথমে আসে বাঘা ও চারঘাটের নাম। আর বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম তেমনই সবুজ পল্লী। প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসতি। সবুজের স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে যেই ছোট্ট গ্রামের কাঁচা-পাকা সড়কের দুধারের আম গাছগুলো এখন নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে এভাবেই।

গ্রাম ঘুরেই মালুম হয়ে যাচ্ছে সেখানে বিশাল আমযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। বাগানে বাগানে এখন কৃষকের সোনালি স্বপ্নগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। সবুজ পাতার ফাঁকে কদিন আগের কুঁড়ি থেকে জন্ম নেওয়া গুটিগুলো সদ্যই পূর্ণতা পেয়েছে আমে। তাই আমময় হয়ে উঠেছে সেখানকার প্রকৃতি। এরই সঙ্গে রঙিন হয়ে উঠছে প্রান্তিক চাষিদের স্বপ্ন। আমবাগান জুড়ে তাই এখন কেবল সোনালি স্বপ্নের ছড়াছড়ি। সবুজ পাতার ফাঁকে স্বপ্নের দোল।  ছবি: বাংলানিউজমনিগ্রামের পুরনো আমচাষি ও ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, তার সেই স্বপ্নেরই কথা। এ বছর ২০ বিঘা জমিতে আমের বাগান রয়েছে তার। এছাড়া গ্রামের বিভিন্ন স্থানে আরো ১৭শ’ আম গাছ কিনে রেখেছেন। আর বারো মাস ধরেই যত্ন ও পরিচর্যা চলছে তার বাগানের প্রতিটি গাছের।

প্রকৃতিও বিমুখ করেনি তাকে। প্রতিটি গাছেই আশানুরূপ ফলন এসেছে। এরই মধ্যে তাই আমে আমে ভরে উঠেছে তার প্রতিটি বাগান। যা দেখে বাম্পার ফলনের ব্যাপারে এবার প্রচণ্ড আশাবাদী হয়ে উঠেছেন তিনি। আবহাওয়া বিরূপ না হয়ে উঠলে এবছর আমের ব্যবসায় প্রায় দ্বিগুণ লাভ হবে। আমের ফলন এমন সম্ভাবনারই হাতছানি দিচ্ছে বলে জানান উপজেলার মনিগ্রামের এই আম চাষি ও ব্যবসায়ী।

তিনি বলেন, কেবল মনিগ্রামই নয় উপজেলার চণ্ডিপুর, নারায়ণপুর, তেপুকুরিয়া, তেঁতুলিয়া, বাজুবাঘা, জোদরাঘব, পাকুরিয়া, বাওসা ও বলিহারসহ আশপাশের গ্রামগুলোয় এবার আমের ভালো ফলন হয়েছে। প্রায় প্রতিটি গ্রামেই এখন গাছভরা আম। ডালের ছোট ছোট ঝুলন্ত আমগুলো বাগানের শোভা দ্বিগুণ বাড়িতে তুলেছে। বড় ঝড়-ঝঞ্ঝা ও শিলাবৃষ্টি না হওয়ায় বেশি মুকুল ঝরেনি। আম বেশি ধরেছে।

বাঘা উপজেলার বিনোদপুর বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মামুনুল হক বাংলানিউজকে বলেন- মার্চ মাসের শেষে এবং এপ্রিলের শুরুতে এই অঞ্চলে হালকা বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে আমবাগানে সেচের কাজটি প্রাকৃতিকভাবেই হয়ে গেছে। বাড়তি সেচের প্রয়োজন পড়েনি। তবে দ্বিতীয় দফা বৃষ্টির পর তার বাগানের কিছু আমগাছে হপার (শোষক) পোকার আক্রমণ হয়েছে। এজন্য ছত্রাকনাশকও স্প্রে করতে হয়েছে। সবুজ পাতার ফাঁকে স্বপ্নের দোল।  ছবি: বাংলানিউজ

তবে এখন পরিস্থিতি ভালো। এবার তিনি ব্যক্তিগত নয়বিঘা জমিতে আমের আবাদ করেছেন। এছাড়া তার আরও সাড়ে ৪শ’টি আমগাছ কেনা রয়েছে। বৈশাখে ঝড়-বৃষ্টি না হলে আমের বাম্পার ফলন হবে। রাজশাহীর বাজার ছাড়া ঢাকাতেও আমের ব্যবসা করতে পারবেন বলে জানান মামুনুল হক।

এদিকে, রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এবছর আবহাওয়া আমের জন্য অনেকটাই অনুকূল। যে কারণে গাছে খুব একটা কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। তবে বৃষ্টির পানিতে অনেক গাছ ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

এ ক্ষেত্রে ম্যানকোজেট গ্রুপের ছত্রাকনাশক দুই গ্রাম অথবা ইমাডোক্লোরিড গ্রুপের দানাদার প্রতিলিটার পানিতে দশমিক দুই গ্রাম, তরল দশমিক ২৫ মিলিলিটার ও সাইপারম্যাক্সিন গ্রুপের কীটনাশক প্রতিলিটার পানিতে এক মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। তবে এর আগে অবশ্যই নিকটস্থ কৃষি কর্মকর্তাকে দিয়ে গাছ দেখিয়ে নিতে হবে। তার পরই স্প্রে করতে হবে বলে জানান এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক (ডিডি) দেব দুলাল ঢালী বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহীতে গত বছর ১৬ হাজার ৫৮৩ হেক্টর জমিতে আমের বাগান ছিল। কিন্তু বিভিন্ন উপজেলায় প্রতি বছরই নতুন নতুন আম বাগান গড়ে উঠছে। তাই এবার আবাদের পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে।

তিনি বলেন- রাজশাহী ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ আশপাশের প্রায় সব জেলাতেই এখন বড় বড় আমবাগান রয়েছে। লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই আম বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। তবে নতুনভাবে গড়ে ওঠা নতুন আমবাগানগুলোর অধিকাংশই বনেদি জাতের। বিশেষ করে নিয়মিত জাত গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ক্ষিরসাপাত ও আশ্বিনা জাতেরই গাছ বেশি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়:  ২২২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৭
এসএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।