ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

যাযাবর বেদে-জীবনে প্রশান্তির সৌরবিদ্যুৎ !

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৭
যাযাবর বেদে-জীবনে প্রশান্তির সৌরবিদ্যুৎ ! যাযাবর বেদে-জীবনে প্রশান্তির সৌরবিদ্যুৎ-ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা

ঢাকা: ডেমরায় শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়।তাবু টাঙ্গিয়ে অস্থায়ী আবাস গেড়েছে যাযাবর ৭ থেকে ৮ টি বেদে পরিবার।

বেদেদের অস্থায়ী আবাস তাঁবুর ভিতরে বনবন করে ঘুরছে টেবিল ফ্যান। মশারি টাঙ্গিয়ে আরামে ঘুমিয়ে রয়েছে বেদে পরিবার।

তাঁবুর উপরে ঝুলছে এর্নার্জি বাল্ব, বৈদ্যুতিক লাইন দিয়ে চলছে ক্যাসেট প্লেয়ারও।

ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর যাযাবর বেদেরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে সাপের খেলা ও ঔষধ বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে। দাঁতের পোকা তোলা, সিঙার ফুঁকে বাতের ব্যথা দূর করাসহ স্বপ্নদোষ,গিরার ব্যথা, কোমরের ব্যথার জন্য তাবিজ দেওয়ার পাশাপাশি গাছের ছাল-বাকল বিক্রি করে থাকে এরা।

নিজের পৈতৃক ভিটা বলে কিছু নেই। কখনও স্থায়ীও হয় না এরা। নদীর তীর, কোনো ধু-ধু প্রান্তর,নৌকায় থাকার জন্য জায়গা বেঁচে নেয় বেদেরা। তবে বেদেদের এই যাযাবর জীবনে একটু শান্তির পরশ এনে দিয়েছে সৌরবিদ্যুৎ। যাযাবর বেদে-জীবনে প্রশান্তির সৌরবিদ্যুৎ-ছবি: আনোয়ার হোসেন রানারোববার (০৯ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের ডেমরা এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে মন্সীগঞ্জের বেদেপল্লী থেকে আসা দলটির প্রতিটি তাঁবুর সামনে সারি সারি সৌরবিদ্যুতের লাইন বসানো দেখা যায়। যা বেদেদের এই যাযাবর জীবনে একটু শান্তির পরশ এনে দিয়েছে। ৩০ হাজার ভোল্টের সৌর বিদ্যুতের এই লাইন দিয়ে তারা চারটা লাইট, একটা ফ্যান ও টিভিও চালাতে পারে।

সৌর বিদ্যুতের কারণে নদীর কিনারে রাতের ঘুটঘুটে আধাঁর থেকে মুক্তি পেয়েছে এই বেদেরা। এসেছে বিনোদনের সুযোগও।

বেদে দলের সর্দার আব্দুল মোতালেব বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের জীবন হচ্ছে দৌড়ের উপর। আজ এখানে তো কাল ওখানে। ওষুধ বেছে দেশের মানুষের সেবা করে বেড়াই। আরাম আয়েশ নাই। নদীর তীরে অন্ধকারে রাত কাটাতে হয় আমাদের। সৌর বিদ্যুতের কারণে আলোর মুখ দেখছি। এখন রাতের অন্ধকারে বেদের তাঁবুতেও আলো জ্বলে। যাযাবর বেদে-জীবনে প্রশান্তির সৌরবিদ্যুৎ-ছবি: আনোয়ার হোসেন রানামুন্সীগঞ্জ বেদেপল্লীতে সরকারি একটি সংগঠন প্রথম আমাদের সৌর বিদ্যুত বিতরণ করে। তবে সেগুলোর পাওয়ার কম ছিলো। পরে নিজেরা টাকা খরচ করে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছি। সৌর বিদ্যুতের এই লাইন নিতে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়।

বেদেরা এক স্থানে বেশিদিন থাকতে পারে না; নৌকা করে বা নদীর ধারে তাবু টাঙ্গিয়ে থাকে ওরা। বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরেই দিন কাটে। এক স্থানে ১ থেকে ২ মাস বসবাস করার পর নতুন ডেরার খোঁজে ছোটে তারা। ভবঘুরে এই জীবনে বিদ্যুতের আলো অনেক অসুবিধা থেকে মুক্তি দিয়েছে তাদের। জানালেন বেদেনী মালেকা।

তিনি বলেন, আমাগো বাচ্চারা তো এলাকা ছাড়লে আর পড়তে বসে না। এখন লাইটের আলো থাকায় রাইতে বই নিয়ে বসে। মোবাইলে চার্জ দিতে হইলে আগে ঘুরে দোকান-টোকানে দিতে হইতো। এখন তাম্বুতে বইস্যা দিতে পারতেছি। তাবু কালো কাপড়ে ঢাকা বলে বাতাস ঢুকতে পারে না, এখন ফ্যান চালানো যায়। অনেক সুবিধা হইছে।  

বাংলাদেশে সময়: ০৭১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৭
এমসি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।