ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

কেওড়ায় চুই ঝালে চীনাহাঁসের মাংস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৭
কেওড়ায় চুই ঝালে চীনাহাঁসের মাংস চীনাহাঁসের মাংস-ছবি: মানজারুল ইসলাম

খুলনা: খুলনার বিখ্যাত খাবার চুই ঝালে রান্না মাংস। বিশেষ করে গরুর মাংস রান্নায় বিকল্প নেই চুইয়ের। তবে জনপ্রিয় এই মসলা এখন ব্যবহার হয় সব ধরনের মাংসে। সেখানে বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছে রেস্টুরেন্ট কেওড়া। মহানগরীতে অনেক নামি দামি হোটেল-রেস্টুরেন্ট থাকলেও সেসব স্থানে শুধু গরু, খাসি, মুরগি ও পাতিহাঁসের মাংস পাওয়া গেলেও কোথাও পাওয়া যেত না চীনাহাঁসের মাংস।

ভোজনরসিকদের কাছে চুই ঝালে রান্না চীনাহাঁসের মাংসের রেসিপি এনে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে কেওড়া।

কেওড়া ক্যাফে অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের স্পেশাল আইটেম চুই ঝালে রান্না চীনাহাঁসের মাংস হলেও সেখানে পাওয়া যায় বাহারি সব খাবার।

খুলনা বিশ্বাবদ্যালয়ের প্রধান গেটের বিপরীতে সুন্দরবনের বিখ্যাত কেওড়া ফলের নামানুসারে রাখা কেওড়া ক্যাফে অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের অবস্থান। রেস্টুরেন্টটি ভোজনরসিকদের যে কোনো খাবারের চাহিদা পূরণ করে চছেছে। যে কোনো হোটেলের চেয়ে দাম কম হওয়ায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর কাছে এখানের খাবার খুব জনপ্রিয়।

চীনাহাঁসের মাংস-ছবি: মানজারুল ইসলামরোববার (৯ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, খোলামেলা, ছিমছাম পরিবেশে ছোট এ রেস্টুরেন্টের ভেতরে সবমিলিয়ে প্রায় ৩০-৪০ জনের বসার ব্যবস্থা আছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে রয়েছে কাঠের বিভিন্ন অক্ষর দিয়ে খুলনার ম্যাপ, রয়েছে সুন্দরবনের নানা গাছ-পালার ছবি, বিভিন্ন ধরনের নান্দনিক আলোকসজ্জা। ঘরোয়া পরিবেশ ছাড়াও রেস্টুরেন্টের সামনে রয়েছে ছাতার নিচে বসে চা, কফি খাওয়ার সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার ব্যবস্থা।

কেওড়ায় আসা একটি ওষুধ কোম্পানির খুলনার এরিয়া ম্যানেজার এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, অনেক দিন থেকে কেওড়ার স্পেশাল চুই ঝালের সঙ্গে চীনাহাঁসের মাংসের সুনাম শুনেছি। আজ অফিসের একটি আয়োজনে ১৭ জন একসেঙ্গ যার স্বাদ নেবো। আগে থেকে অর্ডার দেওয়া ছিলো এখন নিতে এলাম।

বন্ধুদের নিয়ে খেতে আসা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফাহিম জানান, খুলনাঞ্চলের মানুষ চুই ঝাল ছাড়া মাংস খাওয়ার কথা ভাবতেই পারেন না। তা যদি হয় চীনাহাঁসের সঙ্গে। তার তো জুড়িই নেই। যে কারণে চুই ঝালের সুঘ্রাণে অতুলনীয় সুস্বাদু চীনাহাঁসের মাংস খেতে দল বেঁধে এসেছেন।

তিনি আরও জানান, কম টাকায় ভালো খাবার পাওয়া যায় কেওড়ায়। রান্নাও চমৎকার।
কেওড়া ক্যাফে অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে ভোজন বিলাসীরা-ছবি: মানজারুল ইসলামকেওড়া ক্যাফে অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক সাইক্লিস্ট শরিফুল ইসলাম হিরণ। যিনি ২০১৪ সালে সাইকেলে করে সমগ্র বাংলাদেশ ঘুরেছেন। ২০১৭ সালের মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে (২১ ফেব্রুয়ারি) সাইকেলে করে বরযাত্রী নিয়ে এসে বিয়ে করে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। কথা হয় সেই হিরণের সঙ্গে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, একঝাঁক শিক্ষিত তরুণ এ হোটেলটি চালাই। আমরা নিজেরাই রান্না করে পরিবেশন করি। কেওড়া ক্যাফে অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক সাইক্লিস্ট শরিফুল ইসলাম হিরণ-ছবি: মানজারুল ইসলামতিনি জানান, এখানে দু’টি স্পেশাল খাবার রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চুই ঝালের চীনাহাঁসের মাংস। আর অন্যটি কেওড়ার শাহী পানি। এছাড়াও এ হোটেলে সাদা ভাত, পরোটা, ভুনা খিচুড়ি, বিরিয়ানি, চুই ঝালের গরু ও খাসি, বাগদা ও গলদা চিংড়ি মাছের মালাইকারি, ভর্তার মধ্যে (থানকুনি, ধনিয়া, চিংড়ি, কলা, আলু, কালি জিরা), লেবু ও বেলের শরবত, লাচ্ছি, ফালুদা, আইসক্রিম, চা, কফি, কোল্ড ড্রিংস, চিকেন, ফিস ফ্রাই, বারবি কিউ, মোগলাই, নুডলস পাওয়া যায়।

হিরণ বলেন, আমরা প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বেপারির মাধ্যমে চীনাহাঁস কিনি। যা খুলনার অন্য কোনো হোটেলে পাওয়া যায় না। যে কারণে প্রতিদিনই ভোজনবিলাসীরা খেতে আসেন এবং নিয়ে যান। কেউ কেউ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য আগে থেকে অর্ডার দেন। কেওড়া ক্যাফে অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট-ছবি: মানজারুল ইসলামদাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চীনাহাঁসের মাংসের প্লেট (৪-৫ পিস) ১২০ টাকা, চিংড়ি ১২০ টাকা পিস, গরুর মাংস ৯৫ টাকা প্রতি পিস, খাসির পিস ১১০ টাকা, লাচ্ছি ৫০ টাকা, শাহী পানি ৪০ টাকা, ফিস ফ্রাই কেজি ৭৫০ টাকা, ফালুদা ১০০ টাকা, চা ১০ টাকা ও কফি ২৫ টাকা।  

পহেলা বৈশাখের আয়োজন সম্পর্কে তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখে পান্তা, ইলিশ, বেগুন ভাজি, শুকনা মরিচ ভাজা ও বিভিন্ন ধরনের ভর্তা পাওয়া সুলভ মূল্যে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৭
এমআরএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।