ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

মুখোশ কীভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রার অংশ হলো

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৭
মুখোশ কীভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রার অংশ হলো মঙ্গল শোভাযাত্রার মুখোশ / ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর

রাজা-রানি পাশাপাশি বসে। তাদের পাশে আরও এক অতিথি রাজা। তবে অতিথি রাজার রানি স্বর্গলোক থেকে শরীরে তুলির শেষ আঁচড়টুকু মেখে নিয়ে এখনও মর্ত্যে এসে পৌঁছায়নি।

তাইতো অধীর আগ্রহে সবাই অপেক্ষমান। তিনি এসে পৌঁছালেই যে শুরু হবে মঙ্গলের জয়জয়কার।

প্রজারা এসে তাদের পালকিতে তুলে নিয়ে ছুটবে মঙ্গল শোভাযাত্রায়।

কী ভাবছেন! এই একুশ শতকের যুগে রাজা-রানি কোথায় পেলাম? বলছিলাম মঙ্গল শোভাযাত্রা উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের তৈরি রাজা-রানির মুখোশের কথা।  

মঙ্গল শোভাযাত্রার মুখোশ

বাংলা বর্ষ শুরু হবে, আর রাজা-রানি থাকবে না, তাই কখনও হয় নাকি! তবে শুধু কী রাজা-রানি; শোভাযাত্রায় থাকে বাঘ, ট্যাপা পুতুল, বেড়াল, লক্ষ্মী পেঁচা, মাছ সহ আরও অনেক কিছু। যা বাঙালির বাঙালিয়ানাকে তুলে ধরে শতভাগ।

বাংলা বর্ষ বরণের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। আর এই মঙ্গল শোভাযাত্রার অন্যতম উপাদান বিভিন্ন ধরনের মুখোশ, যা প্রকাশ করে বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যকে। কিন্তু এই মুখোশগুলো কীভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রার অংশ হলো? 

মঙ্গল শোভাযাত্রার মুখোশ

উত্তর দেন ঢাবির চারুকলা বিভাগের ছাত্র রাজু ইসলাম, মঙ্গল শোভাযাত্রা মূলত বাঙালিয়ানাকে প্রকাশ করে। আর তাকে আরও প্রাঞ্জল করে ফুটিয়ে তুলতেই মুখোশের ব্যবহার করা হয়। প্রথম দিকে রাজা-রানি বা অনান্য প্রাণীর সম্পূর্ণ অবয়ব তৈরি করা হলেও পরে বহন করার সুবিধার্থে তা মুখোশের আকৃতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এই মুখোশগুলোর মাধ্যমে সাধারণত বাঙালির দেশীয় ঐতিহ্যকেই ফুটিয়ে তোলা হয়, যেগুলোর আগমন ঘটেছে বিভিন্ন মিথ থেকে।

ছোট-বড়-মাঝারি বিভিন্ন রকমের মুখোশের ডিজাইন বিভিন্ন রকম। তৈরির প্রকরণও আলাদা। তবে সাধারণ মুখোশ তৈরি করা হয় দু’ভাবে। পেপার ম্যাশ এবং পেপার কাটিং। পেপার ম্যাশ হচ্ছে কাগজের মন্ড দিয়ে যে মুখোশগুলো তৈরি হয় সেগুলো। আর কাগজ কেটে ডিজাইন করে তাতে রঙ লাগিয়ে যে মুখোশগুলো তৈরি হয়, সেগুলো পেপার কাটিং বলে, জানান চারুকলার শিক্ষার্থী সবুজ দাস।  

মঙ্গল শোভাযাত্রার মুখোশ

আরেক শিক্ষার্থী অন্তরা মেহরুক জানান, বর্তমানে ককশিট বা শোলা দিয়েও তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন রকমের মুখোশ। আর রকমফের অনুযায়ী এই মুখোশগুলো বানাতে সময় লাগে প্রায় তিন থেকে ১৫ দিন।

ঢাবির চারুকলা অনুষদ আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ দেশের সব মঙ্গল শোভাযাত্রাতেই মুখোশ বহন করে এক অনন্য ভূমিকা। তবে এবারে ঠিক কতো রকমের ডিজাইন করা মুখোশ অংশ নিয়েছে ঢাবির মঙ্গল শোভাযাত্রায়, তা জানতে চাইলে চারুকলার মুর্তজা মাহমুদ বলেন- মুখোশ তৈরিতে এখানে কাজ করেছে প্রায় ৫শ শিক্ষার্থী। আর তাদের সবাই এক বা একাধিক নিজস্ব ডিজাইনের মুখোশ তৈরি করেছেন।

মঙ্গল শোভাযাত্রার মুখোশ

এবারের শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছে বাঘ, লক্ষ্মী পেঁচা আর ট্যাপা পুতুল। অতিথি রানিও হাজির হন মর্ত্যলোকে। প্রজারা তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে শুরু হলো নববর্ষের মঙ্গল যাত্রা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৭
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।