ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

পর্ব ১৮

ফুটি মসজিদ: নির্মাণের অপেক্ষায় ৩শ বছর

এরশাদুল আলম প্রিন্স, ল’ এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৭
ফুটি মসজিদ: নির্মাণের অপেক্ষায় ৩শ বছর মুর্শিদাবাদের পথে পথে

মুর্শিদাবাদ ঘুরে: মুর্শিদকুলি খাঁর জামাতা সুজা-উদ-দৌলা আর পৌত্র সারফরাজ খাঁ। মুর্শিদকুলির খাঁর পরে বাংলার মসনদে বসেন জামাতা সুজা-উদ-দৌলা বা সুজাউদ্দিন।

এরপর মসনদে বসেন সরফরাজ খাঁ। মুর্শিদকুলি খাঁর ইচ্ছা ছিলো সুজা-উদ-দৌলা নয়, সরফরাজ খাঁই হবেন তার মসনদের উত্তরাধিকার; বাংলার পরবর্তী নবাব।

দিল্লির সম্রাট ও মুর্শিদকুলি পরিবারের হস্তক্ষেপেই শেষ পর্যন্ত মুর্শিদকুলি, সুজা ও সরফরাজের মধ্যে এ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিরসন হয়। সে কাহিনী আরও দীর্ঘ।  

ফুটি মসজিদ / ছবি: লেখক

পিতার পরে সরফরাজ খাঁ নবাব হলেও নবাবি নিয়ে নতুন করে দ্বন্দ্ব শুরু হলো আলীবর্দির সঙ্গে। ক্ষমতা নিয়ে সরফরাজ খাঁ ও আলীবর্দি খাঁর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল বহুদিন ধরেই। সেই দ্বন্দ্বের ফয়সালা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের ময়দানেই হয়। সরফরাজ খাঁ ও আলীবর্দি খাঁর মধ্যে গিরিয়ার যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত আলীবর্দি খাঁ-ই জয়ী হন। আর যুদ্ধের ময়দানেই নিহত হন নবাব সরফরাজ খাঁ।  
  
মৃত্যুর আগে সরফরাজ খাঁ মুর্শিদাবাদে একটি মসজিদ নির্মাণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। নবাবের ইচ্ছানুযায়ী মসজিদের নির্মাণ কাজও শুরু হয়। কিন্তু মানুষের সব ইচ্ছা পুরণ হয় না- তা তিনি নবাবই হোন অথবা ফকির। কথায় বলে জন্ম-মৃত্যু উপরওয়ালার হাতে। ক্ষমতাও তাই। আজ যে রাজা, কাল সে ফকির। রাজা-বাদশা-নবাবি আমলে এ প্রবাদকে আরও বেশি সত্য বলে মনে হয়।  

ফুটি মসজিদ / ছবি: লেখক

হাকিম নড়লে হুকুমও বুঝি নড়ে যায়! সরফরাজ খাঁর ইচ্ছানুযায়ী মসজিদের নির্মাণ কাজ আর সম্পন্ন হলো না। থমকে গেলো মসজিদের নির্মাণ কাজ।  

মসজিদের মূল কাজের প্রায় শতভাগই সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিলো শুধু একটি গম্বুজের কাজ। দুইটি গম্বুজ সম্পন্ন হলেও তৃতীয় গম্বুজটি আর তৈরি হয়নি। নির্মিত দুইটি গম্বুজও আজ ভেঙে পড়েছে।  

ফুটি মসজিদ / ছবি: লেখক

সরফরাজ খাঁর পর আরও অন্তত ১৬ জন নবাব বাংলা মসনদে বসলেও সরফরাজ খাঁর স্বপ্নের মসজিদটির শেষ গম্বুজটি আর নির্মিত হয়নি। সরফরাজ খাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হলো তার ইচ্ছার।  
 
মসজিদটি অসম্পূর্ণ রয়ে যাওয়ার কারণেই এটি ফৌতি মসজিদ বা ফুটি মসজিদ বলে পরিচিতি পায়। মসজিদটি যেহেতু সম্পন্ন হয়নি তাই এর রক্ষণাবেক্ষণও ঠিক মতো হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদটি আজ প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত।  

সরফরাজ খাঁ মসনদে ছিলেন মাত্র পাঁচ বছর। পিতার মৃত্যুর পর ১৭৩৯ সালে তিনি নবাব ও ১৭৪০ সালে আলীবর্দি খাঁর সঙ্গে যুদ্ধে মারা নিহত হন।

ফুটি মসজিদ / ছবি: লেখক

মুর্শিদকুলি খাঁর সমাধিতে যেতে লালগোলা-শিয়ালদহ রেলক্রসিংটি পার হলেই মূল সড়ক থেকে হাতের বা দিকেই চোখে পড়বে এই মসজিদটি। রাস্তা থেকে নেমে নিচু পথ ধরে যেতে হয় মসজিদটিতে। মসজিদটি অনেক উ‍ঁচু ঢিবির উপর অবস্থিত। মসজিদে ওঠার কোনো সিঁড়ি নেই। বেশ কষ্ট করেই মসজিদে উঠতে হয়। চারদিকে ইট-সুরকির দেয়াল, অসম্পূর্ণ ছাদ, মাটির মেঝে। বয়সের ভারে পড়ো পড়ো অবস্থা। শেওলা, আগাছা, পরগাছায় ছেয়ে গেছে অনেক জায়গা।  

ফুটি মসজিদ / ছবি: লেখক

মসজিদ সংলগ্ন জায়গা অনেক আগেই বেদখল হয়ে গেছে। তবু মসজিদের দেওয়ালে কিছু কারুকাজ আজও চোখে পড়ে।  

অবহেলিত ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী হয়ে নির্জন অন্ধকারে প্রহর গুনছে যেনো এ মসজিদটি। এভাবে প্রায় ৩শ বছর নির্মাণের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সরফরাজ খাঁর নবাবি মসজিদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৭
এসএনএস 

আরও পড়ুন
** ১ম পর্ব: এক যে ছিলো মুর্শিদাবাদ

** ২য় পর্ব: কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ
** ৩য় পর্ব: মানুষ যে হায় ভুলে গেছে চির মধুর ভালোবাসা
** ৪র্থ পর্ব: চার ভাইয়ের বাগান বিলাস ও একটি গুপ্তপথ
** ৫ম পর্ব: জগৎশেঠকে সপরিবারে হত্যা করা হয় যে প্রাসাদে
** ৬ষ্ঠ পর্ব: নুরলদীনের ‘জাগো বাহে’ শোনা যায় নসীপুর প্রাসাদে
** ৭ম পর্ব: কিরীটেশ্বরী মন্দির ও জগদ্বন্ধু সুন্দরের আশ্রম
** ৮ম পর্ব: মুর্শিদকুলি খাঁর কলিজাখেকো মেয়ের সমাধি!
** ৯ম পর্ব: হেস্টিংসের স্ত্রী, মেয়ের সমাধি ও একটি আর্মেনিয়ান চার্চ
** ১০ম পর্ব: মুজিবনগর ও পলাশী: বাংলার ইতিহাসের দুই আম্রকানন 

** ১১তম পর্ব: ৩শ বছরের ডাচ সিমেট্রি ও যোগেন্দ্র নারায়ণের মন্দির
** ১২তম পর্ব: সতীদাহ ঘাটের পাতালেশ্বর মন্দির

** ১৩তম পর্ব : আশি টাকার গাড়ি ও সোনার রথ
** ১৪তম পর্ব : ষড়যন্ত্রের গ্রিনরুম ছিল কাসিম বাজার

** ১৫তম পর্ব: কাসিম বাজার ছোট রাজবাড়ির বড় আয়োজন
** ১৬তম পর্ব: মুর্শিদকুলি খাঁর জগৎজয়ী কামান
** ১৭তম পর্ব: মুর্শিদকুলি খাঁর সমাধি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।