ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

হাওরের ঐতিহ্য কুড়মুড়ে মজাদার মুরালি 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৮ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৭
হাওরের ঐতিহ্য কুড়মুড়ে মজাদার মুরালি  ঐতিহ্যবাহী কুড়মুড়ে মুরালি / ছবি-ভিডিও: অনিক খান

অষ্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ থেকে ফিরে: সারা দেশে ছোট আকারের গজা তৈরি ও বিক্রি হয়। তবে হাওরের হাট-বাজারে ব্যতিক্রমী এক গজা মেলে। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে স্থানীয়ভাবে তৈরি এ মিষ্টান্ন অবশ্য পরিচিত মুরালি নামে। 

আকারেও সাধারণ গজার চেয়ে একটু বড়। প্রতিটি মুরালি কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়।

স্বাদে অতুলনীয়, দামেও সস্তা।  

অষ্টগ্রাম বড় বাজার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ইকুরদিয়া লঞ্চঘাট বাজার। স্থানীয় এ বাজারেই বিক্রি হয় মুরালি। এ মুরালি তৈরির দুই কারিগর গোলাম হোসেন ও শহীদ মিয়া।  

বাজারের সড়কের পাশে চালা ঘরে তারা তৈরি করেন সুস্বাদু মচমচে মুরালি। প্রতি কেজি মুরালির দাম মাত্র ১শ টাকা।  

স্থানীয়রা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া, বিয়ে, আকিকা, উৎসব আয়োজনের সর্বত্রই এ বিশেষ মিষ্টান্নের চাহিদা রয়েছে। এমন অনেক ক্রেতাও রয়েছেন যারা এ লম্বা মুরালির টানেই এ বাজারে আসেন।  

ঐতিহ্যবাহী কুড়মুড়ে মুরালি / ছবি-ভিডিও: অনিক খান

হাওরের গন্ডি ছাপিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে মচমচে মুরালি, এমনটি জানান স্থানীয় পূর্ব অষ্টগ্রামের ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম।  

স্থানীয়রা জানায়, একসময় ছোট আকারের মুরালি তৈরি হতো। কিন্তু ওই মুরালির খুব একটা কদর ছিলো না। এরপর প্রায় ৫০ বছর আগে শহীদ মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী প্রথম মুরালি তৈরি করেন। তার হাতে তৈরি মুরালি স্থানীয়ভাবে বিশেষ সুনামও কুড়ায়।  

বছরের বারো মাস হাওরের এ বাজারে মুরালি তৈরি হয়। বাবার মতোই মুরালি তৈরির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন প্রয়াত শহীদ মিয়ার সন্তান সালাহউদ্দিন।  

তিনি জানান, মুরালি শব্দের অর্থ বাঁশি। প্রতিটি বাঁশি সাধারণত ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি লম্বা হয়। ফলে বাঁশির মতোই একই আকারের তৈরি লম্বা মুরালির কদর রয়েছে হাওরজুড়ে।  

ঐতিহ্যবাহী কুড়মুড়ে মুরালি / ছবি-ভিডিও: অনিক খান

অষ্টগ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ইকুরদিয়া লঞ্চঘাটের বাজারের এসব হোটেলে মুরালি কিনতে ভিড় লেগেই রয়েছে। প্রতিদিন এসব দোকানে ২শ থেকে ৩শ কেজি মুরালি বিক্রি হয়।  

সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার চাহিদা অনুযায়ী মুরালি সরবরাহ করতে গলদঘর্ম হতে হয় ‍কারিগরকে। সারা বছরই ব্যবসা ভালো চলে বলে তাদের মত।  

সম্প্রতি ওই বাজারে গিয়ে আলাপ হয় মুরালির আরেক কারিগর গোলাম হোসেনের সঙ্গে।  

তিনি জানান, প্রতিদিন তার দোকানে মুরালি বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ কেজি। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বেড়ে যায় বেচা-বিক্রি। যার বাজারমূল্য প্রায় নয় হাজার টাকা।  

মুরালি তৈরির প্রক্রিয়া জানিয়ে এ কারিগর জানান, প্রথমে ময়দা গুলিয়ে রুটি তৈরি করা হয়। ঘণ্টাখানেক পর মোটা করে রুটি বেলে ছুরি দিয়ে আঙ্গুলের মতো করে কেটে  নিতে হয়। পরে গরম ডুবো তেলে কম আঁচে ভাজতে হয়।  

এরপর পাটা গুড় ও অল্প পানি দিয়ে ঘন সিরা তৈরি করা হয়। সেখানে মচমচে করে ভাজা মুরালী ঘন সিরায় ফেলে নাড়তে হয়। এভাবেই তৈরি হয় কুড়মুড়ে মুরালি।  

মুরালির কদর প্রসঙ্গে স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা ও সরকারি রোটারি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দা নাসিমা আক্তার বাংলানিউজকে জানান, মচমচে মুরালি বেশ মুখরোচক। আর গরম গরম মুরালির স্বাদই আলাদা।  

বাংলাদেশ সময়: ১২১৭ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৭ 
এমএএএম/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।