ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

নরসুন্দার পাড়ে ঘুড়ি উড়ানো বিকেল 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০১ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৭
নরসুন্দার পাড়ে ঘুড়ি উড়ানো বিকেল  নরসুন্দার পাড়ে ঘুড়ি উড়ানো-ছবি: অনিক খান- বাংলানিউজ

কিশোরগঞ্জ ঘুরে এসে: দূর দিগন্ত পাড়ি দিয়েছে কালো মেঘের দল। ধূসর মেঘের আড়ালে পশ্চিম আকাশে সূর্যটা ছড়াচ্ছে শেষ আভা। আকাশজুড়ে উড়ছে রং-বেরংয়ের ঘুড়ি। 

সবার নজর অসীম আকাশে। লাল, নীল, সাদা আর হলুদ রাঙা কাগুজে ঘুড়ি সেখানে যেন ভাসছে দুলে দুলে।

 

ছোট-বড় নাটাই হাতে পাড়ায় পাড়ায় ভাগ হয়ে চলছে কাটাকাটির লড়াই। আহা! কী আনন্দ কিশোর-তরুণদের উচ্ছ্বল মনে।  

গ্রাম বাংলার চিরায়ত ঘুড়ি নিয়ে মেতে ওঠার এমন দৃশ্য চোখে পড়ে ধীরে বয়ে চলা নরসুন্দার নদীর পাড়ে। ঘুড়ি উড়ানোর বিকেলে কাটাকুটির মজা নিচ্ছেন আগত বিভিন্ন বয়সী মানুষও।  

মেঘহীন প্রতিটি বিকেলেই কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক সড়কের কাজিয়ারচর হারুয়া সেতুর দু’পাশের দৃশ্যপট এমনই।  

বাঙালির ঐতিহ্য ঘুড়ি উড়ানোর এ উৎসব নিত্যদিনই অনন্য এক বিনোদনের খোরাক স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাদের পাশাপাশি রঙের ছটায় কিশোর-তরুণদের উচ্ছ্বাসে মুখর নরসুন্দার পাড়।  

নরসুন্দার পাড়ে ঘুড়ি উড়ানো-ছবি: অনিক খান- বাংলানিউজপ্রযুক্তির দাপটে এখন ঘুড়ি উড়ানোর চল নেই বললেই চলে। ব্যস্ততার যাতাকলে পিষ্ট নাগরিক জীবনে বাড়ির ছাদেও ঘুড়ি উড়ানোর প্রবণতা কমেছে।  

কিন্তু বছরের এ সময়ে রোজকার বিকেলেই ঘুড়ি উড়ানোর রঙিন উৎসবে মেতে উঠে কিশোর-তরুণরা। প্রতিটি ঘুড়ির সঙ্গে যেন উড়ে বেড়ায় তাদের উচ্ছ্বল মনও।  

আলাপ হলো পলাশ ও জুয়েল নামে দু’তরুণের সঙ্গে। নতুন জেলখানা মোড়ে তাদের বাড়ি। ঘুড়ির সুতো ধারালো করতে কাঁচের গুঁড়া আর আঠার মিশ্রণে ‘মাঞ্জা’ দিয়েছে ওরা। তারা জানায়, ধারালো সুতো দিয়ে প্যাঁচ খেলে আরেকজনের ঘুড়ি কেটে দেওয়ার আনন্দই আলাদা।  

ক’দিন বাদেই তরুণের দল দু’ভাগে ভাগ হয়ে ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। এক গ্রুপের হয়ে খেলে সামাদ ও রশিদ। তারা জানান, প্রতিদিন তারা একেকজন ১০ থেকে ১২টি ঘুড়ি কেনেন। ঘুড়ি উড়ানোর পর কেটে গেলে অনেক ঘুড়ি যেন আকাশে মিশে যায়।  

ঘুড়ি উড়ানোর আনন্দের চিত্রপট তুলে ধরে সোবহান জানান, প্রতিদিন বিকেলে বয়সের বিভেদ ভুলে অনেকেই ঘুড়ি উড়াতে এ নদীর পাড়ে জড়ো হন।  

মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে তাদের ঘুড়ি। রঙিন ঘুড়ির সুতোয় অনেকেই কৈশোরের উন্মাদনায় ফিরে যান। পাক খেয়ে ঘুড়ি ওপরে ওঠে যাওয়ার দৃশ্য পথচারীরাও উপভোগ করেন।

নরসুন্দার পাড়ে ঘুড়ি উড়ানো-ছবি: অনিক খান- বাংলানিউজবাঙালির অনেক উৎসবের মতো ঘুড়ি উড়ানো একটি প্রাচীন অনুষঙ্গ। নানা টানাপোড়নে শহুরে জীবনে হারিয়ে যাচ্ছে এ উৎসব।  

তবে নির্মল আনন্দের বার্তা নিয়ে এখনো গ্রাম বাংলায় টিকে রয়েছে ঘুড়ি উড়ানো। গ্রাম-বাংলার চিরায়ত এ উৎসব অনুপ্রাণিত করে ঘুড়ি উড্ডয়নকারীদেরও।  

কাটাকাটির খেলায় অনেক ঘুড়ির সুতোর বাঁধন ছিড়ে উড়ে যায় দূর-দূরান্তে। রঙের মেলা থেকে খসে পড়ে একেকটি রঙ। সেই ঘুড়ি আবার নিজেদের কব্জায় নিতে বাঁশ-কঞ্চি নিয়ে আবার অবুঝ শিশুদের ভোঁ-দৌড়।  

কখনো পা হড়কে আলপথে কাঁদামাটিতে একাকার হয় ওদের শরীর। তবুও মুক্ত প্রান্তরে ওরাও নেয় ঘুড়ি ধরার স্বাদ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৭ 
এমএএএম/আরআর/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।