ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বরফ পাটায় চাপা জীবন!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৯ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৭
বরফ পাটায় চাপা জীবন! বরফ পাটায় চাপা জীবন-ছবি: ‍আরিফ জাহান

সিরাজগঞ্জের মাছের আড়ত ঘুরে: একের পর এক পলিথিনে মোড়ানো বরফ পাটা বাক্সের ভেতর থেকে বের করে আনছিলেন হোসেন আলী (২২)। ঠিক তার পেছনেই বড় একটি কাঠের বাক্সে পলিথিনে মুড়িয়ে রাখা বরফের পাটাগুলো। সামনে রয়েছে কাঠের আরেকটি ছোট বাক্স।

বাক্সের তিন দিক কাঠ দিয়ে আটকানো। ওপরের অংশ খোলা।

পাশেই বসার টুল। হাতে শোভা পাচ্ছিল মোটালাঠি। সেই ছোট বাক্সের ভেতর বরফের পাটা ফেলছেন আর উপর্যুপরি লাঠির আঘাতে ভেঙে চুরমার করছিলেন।

সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে চুরমার হওয়া বরফগুলো প্লেটে ভরে প্লাস্টিকের বালতিতে উঠিয়ে দেন। বালতি ভর্তি বরফ নিয়ে দৌঁড়াঝাপ শুরু করেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা মাছের ব্যাপারিরা। বরফ পাটায় চাপা জীবন-ছবি: ‍আরিফ জাহানক্রয় করা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাত্রে থরে থরে সাজিয়ে ভাঁজে ভাঁজে দ্রুত বরফ ছিটিয়ে দেন।  

সিরাজগঞ্জের মাছের আড়তের একটি অংশ জুড়ে দেখা গেলো হোসেন আলীদের বরফ ভাঙার কর্মযজ্ঞ। আড়তের ২৫টি স্থানে বরফ ভাঙার কাঠের বাক্স নিয়ে বসেছেন ৪৫ জন ব্যক্তি।

সবমিলিয়ে শতাধিক যুবকসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ এ পেশার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। বরফ পাটায় চাপা রয়েছে যাদের জীবন। প্রত্যহ ভোর ৪টা থেকে বরফ ভাঙা শ্রমিকদের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। একটানা বিকেল পর্যন্ত এ কর্মযজ্ঞ চলে। বিভিন্ন এলাকায় এসব শ্রমিকদের বসবাস। সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় বাস করেন হোসেন আলী। চার সদস্যের সংসার তার। অভাবের কারণে স্কুলে যাওয়া হয়ে ওঠেনি তার। তাই ছোট কাল থেকেই বাবার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। সামান্য আয় বাড়াতে বরফ ভাঙা শ্রমিকের খাতায় নাম লেখান তিনি।

সব খরচ বাদে দিন শেষে এ পেশা থেকে তার ৩৫০ টাকা আয় হয়। ওদিকে বাবা দিনমজুরের কাজ করেন। এভাবে ছেলে-বাবার মিলিত আয়ে চলে হোসেন আলীর অভাবের সংসার। বরফ পাটায় চাপা জীবন-ছবি: ‍আরিফ জাহানহোসেন আলী, রেজাউল হক, আব্দুর রাজ্জাকসহ একাধিক বরফ ভাঙা শ্রমিক বাংলানিউজকে জানান, এ আড়তে পাঁচটি বরফের মিল রয়েছে। এসব মিল থেকে বরফের পাটা কেনেন তারা।

প্রত্যেকটি পাটা ৫০ টাকা করে ক্রয় করেন। ভাঙার পর প্রত্যেক পাটা ৬০ টাকায় মাছের ব্যাপারিদের কাছে বিক্রি করেন তারা।

শ্রমিকরা জানান, বিভিন্ন প্রজাতির তাজা ও মরা মাছ আড়ত থেকে কেনার পরপরই ব্যাপারিরা তা বরফে মুড়িয়ে ফেলেন। বরফের কারণে মাছ দীর্ঘক্ষণ ভাল থাকে। গরমে তাদের কেনা-বেচা ভাল হয়। শীতকালে তুলনামূলক বেচাকেনা কম হয়।

সবমিলিয়ে এ পেশাকে আঁকড়ে ধরেই চলে যাচ্ছে তাদের জীবন, যোগ করেন এসব বরফ ভাঙা শ্রমিকরা।   

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৭
এমবিএইচ/এএটি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।