ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বগুড়ায় ৪২ বছরের পুরনো সানাউল্লাহর শিক কাবাব

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২২ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৭
বগুড়ায় ৪২ বছরের পুরনো সানাউল্লাহর শিক কাবাব ৪২ বছরের পুরনো সানাউল্লাহর শিক কাবাব

বগুড়া থেকে ফিরে: দেশে এতো ব্যস্ত সড়ক নিশ্চয়ই হাতে গোনা। বগুড়া শহরের সাতটি রাস্তা এসে যে মোড়ে মিশেছে সেটাও যে খুব প্রশস্ত বলা যাবে না। সাতমাথা মোড় থেকে শেরপুর সড়ক ধরে কিছুটা এগোলেই কলোনি। সন্ধ্যার পর থেকে এই পথের ধারেই কাবাবের মনমাতানো গন্ধ। যা জিভে জল এনে দিতে বাধ্য। 

এখানে পথের দু'পাশে গড়ে উঠেছে বেশকিছু কাবাব আর চাপের দোকান। তবে পথের উপর বহনকারী কয়লার চুল্লীঘেরা বেঞ্চগুলোতেই আগ্রহ বেশি মানুষের।

সন্ধ্যার পর এখানে অন্যসব ব্যবসার গতি স্থির দেখা যায়। বরং কাবাব আর চাপের স্বাদ নিতে আসা মানুষের ভিড় চোখে পড়ে বেশি।  
 
বগুড়া বরাবরই ট্রানজিটের একটি শহর। দেশের উত্তর থেকে রাজধানীতে আসা মানুষেরা সুযোগ পেলেই থামেন বগুড়াতে। এই শহরের দই মানুষের জিভকে টেনে নিয়ে যায় মিষ্টান্ন আর দইয়ের দোকানগুলোতে। হাতে আরেকটু সময় নিয়ে যদি কলোনি বাজারে কাবাব খেতে বেঞ্চে বসে যাওয়া যায়, তবে ষোলকলাই পূর্ণ। রোববার (০৭ মে) রাতে দিনাজপুর থেকে ঢাকা ফেরার পথে যাত্রা বিরতিতে যাওয়া হলো সানাউল্লাহর কাবাব খেতে।  

রুটিগুলোকে সরিষা আর কাবারের মশলায় মেখে বিছিয়ে দেওয়া হয়
 
কলোনির সবচেয়ে পুরনো কাবাব বিক্রেতা সানাউল্লাহর বয়স ৭০ পেরিয়েছে। তাকে ঘিরে আগ্রহও বেশি কাবাবপ্রেমীদের। দেখা যায়, কয়েকজন ক্রেতাকে ফিরিয়েও দিচ্ছেন কারণ, যতোটুকু কাবাবের মাংস নিয়ে এসেছেন তার অগ্রিম অর্ডারও হয়ে গিয়েছে। অথচ তখন কেবল রাত সাড়ে আটটা।  
 
গত ৪২ বছর ধরেই এখানে কাবাব বিক্রি করছেন সানাউল্লাহ। বাংলানিউজকে বলেন, তখন এখানে খুব বেশি ঘর-বাড়ি ছিলো না। অল্প মাংস নিয়ে আসতাম, সেটুকু বিক্রি করে চলে যেতাম। এখানে সবকিছু এক নম্বর। বাড়িতে বউ ময়দা দিয়ে রুটি বানিয়ে দেয়। মাংস আনলে সেগুলো কেটে মশলায় মাখিয়ে দেয়। যে সরিষার তেলটা ব্যবহার করি, এটাও এক নম্বর। যে পেঁয়াজ দেই সেটাও খাঁটি দেশি পেঁয়াজ।  
 
তিন মেয়ে রয়েছে সংসারে। এখন বড়মেয়ের ঘরের তরুণ নাতি সাহায্য করছেন নানার ব্যবসায়।  

সানাউল্লাহ জানান, সবসময়ই গরুর মাংসের শিক কাবাব করেন তিনি। কাবাব যখন প্রায় পরিবেশনের জন্যে তৈরি হয়ে যায়, রুটিগুলোকে সরিষা আর কাবারের মশলায় মেখে বিছিয়ে দেওয়া হয় চুল্লিতে রাখা কাবাবের উপর। দু’টি রুটির ভেতর ৫টি শিকের কাবাব ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই প্যকেজটির মূল্য ৪৫ টাকা। যেখানে প্রতিটি শিকের দাম পড়ে ৪টাকা। মানুষ এখানে এলে একটি বা দু’টি শিক নয় বরং ১০ থেকে ১৫টি শিকে গাঁথা মাংস খেয়ে ফেলেন এক বসায়।  

এখানে একই সময়ে তার বড়ভাই হায়দারও কাবাবের ব্যবসা শুরু করেছেন। তবে হায়দার আগের মতোই গরুর ভুঁড়ি বিক্রি করেন।  

কাবাবের মেলা

১০ বছরের সীমান্ত বাবার সঙ্গে এসেছেন সানাউল্লাহর শিক কাবাব খেতে। সে বলে, কাকুর দোকানের কাবাব মজা বেশি। তাই বাবা সবসময় এখানেই নিয়ে আসেন। আমিও এখানেই খাই। ভীষণ মজা।  
 
শিক কাবাব ছাড়াও এখানে রয়েছে মাংসের চাপ। গরু ছাড়া মুরগির মাংসের চাপও বিক্রি করা হয়। দেখতে দেখতে কাবাব মোড়ানো রুটি নেওয়া হলো তিন ধাপে।  

বগুড়া শহরের দই বা আকবরিয়া হোটেল শুধু নয়, ঢাকা থেকে যাওয়া প্রচুর মানুষ যাত্রা বিরতিতে ছুটে যাচ্ছে কাবাব খেতে। সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে যেন বসে যায় কাবাবের মেলা।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৭
এমএন/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।