ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

জন্মভিটাতেই অস্তিত্ব সংকটে বেগম রোকেয়া

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৬ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৭
জন্মভিটাতেই অস্তিত্ব সংকটে বেগম রোকেয়া বেগম রোকেয়ার জন্মভিটা। ছবি: সৈয়দ ইফতেখার আলম

মিঠাপুকুর পায়রাবন্দ (রংপুর) থেকে ফিরে:  জাগো বঙ্গবাসী/ দেখ, কে দুয়ারে/ অতি ধীরে ধীরে করে করাঘাত।/ ওই শুন শুন!/ কেবা তোমাদের/  সুমধুর স্বরে বলে: ‘‘সুপ্রভাত’’!

বাঙালিকে জাগিয়ে তোলার রূপকার, বিশেষ করে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া’র লেখা এটি। অস্তিত্বের বন্ধন শক্ত করে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো রোকেয়া নিজেই যেন আজ অস্তিত্বের শেষ বিন্দু দিয়ে টিকে আছেন!

নেই দেয়াল, ছাউনি কিংবা ধ্বংসাবশেষও।

  কোনো কিছুই নেই! যে বাড়ি থেকে নারী জাগরণের পথিকৃতের ‘মহীয়সী’ হয়ে ওঠা সে বাড়িটির জীর্ণ দশা যে কারো মনেই নাড়া দেবে।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের পায়রাবন্দ গ্রামে জন্ম বেগম রোকেয়ার। তার জন্মের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি এখন লুপ্তপ্রায়। সরেজমিনে দেখা যায়, ঘরের কোনো অস্তিত্ব তো নেই-ই, কয়েকটি ইটের সামান্য গাঁথুনি কেবল দাঁড়িয়ে। সংস্কার উদ্যোগও নেওয়া হয়নি কখনও। নতুন করে নির্মিত জাদুঘর পরিত্যক্ত। অযত্নে অবহেলায় অচিরেই শেষ স্মৃতি চিহ্নটুকুও বিলীন হওয়ার শঙ্কা জেগেছে।

এখানে আসার পথটুকুও বেহাল। রংপুর-বগুড়া মহাসড়ক ধরে মিঠাপুকুরের বৈরাগীগঞ্জে নেমে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান বা মোটরসাইকেল ছাড়া কাদামাথা পথে বিচরণের জো নেই। বাড়িটির ফটক খোলা-লাগানো এবং ঝাড়ু দেওয়ার কাজ করেন বয়স্ক স্বামী-স্ত্রী। নাম হাবিবুর রহমান (৭৫) ও সালেহা বেগম (৭০)।

সালেহা রংপুরের ভাষায় কথা বলেন। তার বক্তব্য ছিল এমন, দুর্গম হয়ে উঠেছে এলাকাটা। ঠিক মতো রাস্তাঘাট নির্মিত না হওয়ায় মানুষজন ঘুরতে আসতে ভোগান্তিতে পড়েন। বেগম রোকেয়া স্মৃতি তোরণ

প্রাচীন এই স্থাপনা দেখতে আসা মোবাইল কোম্পানির কর্মকর্তা আখেরের সঙ্গে কথা হয়। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রচার-প্রচারণার অভাব রয়েছে। বেগম রোকেয়া বাঙালি নারী সমাজের জন্য যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, আধুনিক দাবিদার এই আমরা তা ভুলতে বসেছি।

তার সঙ্গে থাকা সহকর্মী আশরাফুল বলেন, এই গ্রামের বাড়িতে বসে রোকেয়া একশ’ বছর আগে যা চিন্তা করেছেন, লিখেছেন- বড় বড় শিক্ষিত অনেক ব্যক্তিই সেভাবে এখনও চিন্তাই করতে পারেন না। শুনেছি বাংলা একাডেমি এর দেখভালে; কিন্তু জায়গাটাকে জ্ঞানকেন্দ্র হিসেবে তারা আদৌ গড়ে তুলতে পারলো না।

বাড়ির মূল আকর্ষণ রোকেয়ার পড়ার ঘর। ছোট্ট ঘরে জানালার কাছে একটা সময় ছিল টেবিল-চেয়ার। তিনি পড়তেন আর জানালা দিয়ে দেখতেন অন্য এক জগৎ!বেগম রোকেয়ার জন্মভিটা।  ছবি: সৈয়দ ইফতেখার আলম

বাড়িতে ঢুকতেই হাতের ডান দিকে পড়বে হস্তশিল্প বিক্রয়কেন্দ্র। রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষিত নারীদের তৈরি জিনিসপত্র এখানে বিক্রি হয়। এর তত্ত্বাবধায়ক বিউটি আক্তার ঝরনা বাংলানিউজকে বলেন, ২০০৯ সালে বিক্রয়কেন্দ্রের যাত্রা। গত আট বছরে ৯ ডিসেম্বরকে ঘিরে (রোকেয়ার জন্ম-মৃত্যু) সরকার বা জেলা প্রশাসনের দৌড়ঝাঁপ দেখেছি শুধু। সারাবছরই এখানে লোকজন আসার ব্যবস্থা করতে হবে; শুধু জন্ম-মৃত্যু দিনে নয়।

বিশেষ করে যারা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বা সিলেট থেকে কোনো কাজে রংপুরে আসেন- তাদের একবার হলেও এখানে ঘুরে যেতে হবে- এমন আয়োজন করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

একাধারে প্রাবন্ধিক-কবি-দার্শনিক-ঔপন্যাসিক রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। তার স্মৃতিকে ধরে রাখা, সুবিধাবঞ্চিত নারীদের পুনর্বাসন এবং তার জীবন আর রচিত গ্রন্থ নিয়ে গবেষণা করার জন্য চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ‘রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র’। ১৯৯৭ সালে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ২০০১ সালে কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে জোট সরকার ক্ষমতায় এলে ২০০৪ সালে কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে পায়রাবন্দে নতুন আশার সৃষ্টি হয়। কিন্তু আট বছর পার হলেও এটি পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হয়নি। বেগম রোকেয়া স্মৃতিফলক।   ছবি: সৈয়দ ইফতেখার আলম
স্মৃতিকেন্দ্র চালু, এর দায়িত্ব বাংলা একাডেমির কাছে হস্তান্তর এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধ করতে হাইকোর্টে রিটও করা হয়। দ্রুত কার্যক্রম শুরুসহ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতায় রাখার জন্য একটি সার-সংক্ষেপ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের জন্যও পাঠানো হয়। যাতে  অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এ নির্দেশনার এখনও পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি।

জানা যায়, মন্ত্রণালয় থেকে বাংলা একাডেমির একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। যারা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে। তবে এ কাজেও নেই অগ্রগতি।

স্মৃতিকেন্দ্রে বেগম রোকেয়ার একটি ম্যুরাল, ২৬০ আসনের মিলনায়তন, ১০০ আসনের সেমিনারকক্ষ, ১০ হাজার পুস্তক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন লাইব্রেরি, চার হাজার বিভিন্ন বইপত্র ও পত্রিকা, গবেষণাকেন্দ্র, সংগ্রহশালা, ২৫টি সেলাই মেশিনসহ একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। সেইসঙ্গে আছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস, উপপরিচালকসহ কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা। তবে বেশিরভাগ কক্ষই থাকে তালাবদ্ধ।

প্রতিবছর রোকেয়া দিবস ঘিরে কেন্দ্রটি হয় সরব। ৯ থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী মেলার আয়োজনও হয়। যাতে আলোচনার মধ্যেই সীমাবন্ধ থাকেন মহীয়সী নারী।

যেন তার লেখা চরণগুলোর মধ্যেই আটকা তিনি।
‘‘কেন আসিলাম হায়! এ পোড়া সংসারে
কেন জন্ম লভিলাম পর্দানশীন ঘরে!’’

আরও পড়ুন:
দুই ভাইয়ের বিরোধে আ'লীগের সর্বনাশ!
মন্ত্রী হবেন টিপু সেই প্রভাব ভোটে!
** টিপুর বিপক্ষে এমদাদেই ভরসা
একবার খেলে ভোলা যায় না হাড়িভাঙার স্বাদ
ঈদে ট্রেনেই নিশ্চিন্ত যাত্রা
‘এরশাদ কান্দিলে ভোট আছে কিসু’
‘লাইসেন্স দেন-ট্যাক্সও বাড়ান, মারেন শুধু বিড়ি শ্রমিকরে’
মিঠাপুকুর আ’লীগে গ্রুপিং, বিভক্ত ভোটাররা!
‘সুষ্ঠু ভোট হলে এমপি জাপার’
বিএনপির অফিস এখন আম-কলার আড়ৎ!
হাইওয়েতেও ইফতারির পূর্ণ আনন্দ!

বাংলাদেশ জিতবে আশা গ্রামবাসীর! 

বাংলাদেশ সময়:  ১০১০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৭
আইএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।