ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

ও ধান ভানরে...

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২০ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৭
ও ধান ভানরে... ফরিদা ইয়াসমীন কাজ করছেন ঢেঁকিতে, ছবি: বাংলানিউজ

মিঠাপুকুর (রংপুর) ঘুরে এসে: নতুন ধানের সুগন্ধে যখন মাতোয়ারা হতো কৃষাণ-কৃষাণি, মুখের বুলি হতো গীত। কাজের ফাঁকেই বাতাসে ভেসে বেড়াতো, ‘ও ধান ভানরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া, ঢেঁকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দুলিয়া, ও ধান ভানরে..., ধান বেচিয়া কিনমু শাড়ি, পিন্দা যাইমু বাপের বাড়ি, স্বামী যাইয়া লইয়া আইব গরুর গাড়ি দিয়া, ও ধান ভানরে...’ 

সত্তরের দশকে মেশিনে ধান ভাঙ্গা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আবহমান বাংলায় এটাই ছিলো ঢেঁকিঘরের আবহ।  সেই ঢেঁকিঘরে ভানা চাল, চিড়া, মসলায় সমৃদ্ধ হতো রসুইঘর।

প্রতিটি বনেদি গৃহস্থ পরিবারে ঢেঁকিটা থাকতে‍াই।
 
কিন্তু এমন দৃশ্যপট এখন আর রচিত হওয়ার সুযোগ নেই। গ্রামের ঐতিহ্য থেকে হারিয়ে গেছে ঢেঁকি নামের এই লোকজ সংস্কৃতি। কিন্তু রংপুরের মিঠাপুকুরে বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন গ্রামে ঐতিহ্যের ধারক হয়েই যেনো ধুঁকতে ধুঁকতে টিকে আছে অযান্ত্রিক এই গৃহস্থালি উপকরণ।
এখানে উৎসব, বিয়ে, ঈদ ও পূজায় ঢেঁকিতে ধান ভেনে আটা তৈরি করা হয়। প্রত্যেক বাড়ি থেকেই গৃহিণী এসে প্রয়োজন মতো ব্যবহার করেন। শুধু আটাই নয়, ভুট্টা ভানা, ছাতু তৈরি, মসলা গুঁড়া করার মতো কাজও করা হয় নিয়মিত।
 
ফরিদা ইয়াসমীনদের বাসার এই ঢেঁকি গ্রামীণ সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে। আশপাশের গ্রামে যা আর দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন গ্রামের এক সন্তানের জননী ফরিদা বাংলানিউজকে বলেন, চার বছর আগে এ বাড়িতে বউ হয়ে এসেছি। শ্বশুর বাড়িতে এসেই দেখেছি ঢেঁকি। সেসময় থেকে গ্রামবাসী আসেন, ব্যবহার করেন- এমন রেওয়াজের সঙ্গে আমি পরিচিত।
 
তার স্বামী মকসেদুল ইসলাম একটি মোবাইল কোম্পানির টাওয়ারে কাজ করেন। সাংসারিক দায়-দায়িত্ব থাকলেও ঐতিহ্য সচেতন তিনি। তাইতো ঢেঁকির জন্য বরাদ্দ করা ঘরকে যথেষ্ট জায়গা দিয়ে প্রশস্ত করেছেন শোবার ঘর।
 
আশাপাশের বাঙালি ছাড়াও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ওঁরাও সম্প্রদায়ের নারীরা এটি ব্যবহার করতে আসেন; সবার জন্যই ব্যবহার উন্মুক্ত।
 
ঢেঁকি ছাঁটাই চালের ভাত শুধু লবণ দিয়ে খেলেও মজা। বর্তমানে ইউরিয়া মেশানো মেশিনে ভাঙা চাল খাওয়া হয়। এর স্বাদ ঢেঁকির মতো হয় না। শহরের অধিকাংশই এমন চালের ভাতের স্বাদ কখনও পাননি! আর সার্বিকভাবে ঢেঁকিই তো এখন রূপকথার বস্তু হয়ে যাচ্ছে, কথায় কথায় যোগ করেন তরুণী এই গৃহবধূ।
 
তার মতে, গ্রামীণ উপকরণ ঢেঁকি টিকিয়ে রাখতে সরকারের নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে। অনেক বিত্তশালী মানুষজন গ্রামে বাড়ি করেন, তারা যদি খানিকটা জায়গায় ঢেঁকি বসান, তবে নতুন প্রজন্ম ভুলবে না তাদের অতীত।
 
কাঠের তৈরি কলের নামই ঢেঁকি। প্রায় ছয় ফুট লম্বা ও নয় ইঞ্চি ব্যাসবিশিষ্ট একটি ধড় থাকে এতে। মেঝে থেকে ১৮ ইঞ্চি উচ্চতায় ধড়ের একেবারে সামনে দুই ফুট লম্বা একটি গোল কাঠ থাকে। যাকে মৌনা বলা হয়। দুটি বড় কাঠের দণ্ডের ভেতর দিয়ে একটি ছোট হুড়কা হিসেবে কাঠের গোলাকার খিল থাকে। এভাবেই তৈরি ঢেঁকি দিয়ে কাজ করা হয়।
 
কবি জীবনানন্দের কবিতায় প্রবলভাবে ধরা পড়েছে বাংলার রূপ, ঐতিহ্য। তাই তো তিনি লিখেছেন, ‘চারিদিকে নুয়ে পড়ে ফলেছে ফসল/ তাদের স্তনের থেকে ফোঁটা ফোঁটা পড়িতেছে শিশিরের জল,/ প্রচুর শস্যের গন্ধ থেকে-থেকে আসিতেছে ভেসে/ পেঁচা আর ইঁদুরের ঘ্রাণে ভরা আমাদের ভাড়ারের দেশে। ’

আমাদের ভাড়ারের এই দেশে বিলুপ্তির পথে থাকা ঢেঁকি যার অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সৈয়দ ইফতেখার আলমলেখক
সৈয়দ ইফতেখার আলম
সাংবাদিক, বাংলানিউজ

আরও পড়ুন:
চাল ভাজা ছাতুর সংসারে ভাবনাহীন ভবিষ্যৎ
জন্মভিটাতেই অস্তিত্ব সংকটে বেগম রোকেয়া
দুই ভাইয়ের বিরোধে আ'লীগের সর্বনাশ!
মন্ত্রী হবেন টিপু সেই প্রভাব ভোটে!
** টিপুর বিপক্ষে এমদাদেই ভরসা
একবার খেলে ভোলা যায় না হাড়িভাঙার স্বাদ
ঈদে ট্রেনেই নিশ্চিন্ত যাত্রা
‘এরশাদ কান্দিলে ভোট আছে কিসু’
‘লাইসেন্স দেন-ট্যাক্সও বাড়ান, মারেন শুধু বিড়ি শ্রমিকরে’
মিঠাপুকুর আ’লীগে গ্রুপিং, বিভক্ত ভোটাররা!
‘সুষ্ঠু ভোট হলে এমপি জাপার’
বিএনপির অফিস এখন আম-কলার আড়ৎ!
হাইওয়েতেও ইফতারির পূর্ণ আনন্দ!
বাংলাদেশ জিতবে আশা গ্রামবাসীর! 

 
বাংলাদেশ সময়: ১১১৬ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৭
আইএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।