ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

ভোরের কলকাতা যেনো ভাঙা বিয়েবাড়ি

শুভ্রনীল সাগর, ফিচার এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৭
ভোরের কলকাতা যেনো ভাঙা বিয়েবাড়ি সকালে সুনসান কলকাতার রাস্তা। ছবি: শুভ্রনীল সাগর

কলকাতা থেকে: ভোর শব্দটির মধ্যেই কেমন যেনো স্নিগ্ধ-নরম ব্যাপার। একদম দোয়েল পাখির আলতো ডানার মতন। এসময় পাড়ার সবচেয়ে এঁদো-পঁচা কাদাময় গলিটিও দেখতে অন্যরকম লাগে। কেমন মায়া জড়ানো। পরতে পরতে থকথকে লুকানো গল্প।

বেশ আগে কার একটা লেখায় পড়েছিলাম, ভোরের কলকাতা হলো ভাঙা বিয়েবাড়ির মতো। বিয়ে শেষ, কনেসহ বরযাত্রীরা বাড়ির পথ ধরেছে।

প্যান্ডেলের বাঁশগুলো এখনও তোলা হয়নি। রঙিন কাপড়গুলো খোলা হচ্ছে পেরেকের গাঁথুনি থেকে। ছড়ানো-ছিটানো জরি আর কাগজ টুকরোয় হুহু করে শূন্যতা। কেউ চলে গেছে, যে ছিলো কয়েক ঘণ্টা আগেও।

তেমনই রূপ রোজকার ভোরবেলার। ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে মাঝরাত্তির অব্দিও জমজমাট ছিলো দোকানপাট, মানুষের আনাগোনা। লাল-নীল আলোর রোশনাই। যতো রাত বেড়েছে কমে এসেছে জীবনের হাঁকডাক। ভোর হতেই পুরোপুরি কনে বিদেয় হওয়া ফাঁকা প্রান্তর। উবারের চার চাকা পেরিয়ে যায় যাদবপুর, ঢাকুরিয়া, গোলপার্কের সুনসান রাস্তা।  ছবি: শুভ্রনীল সাগররোজকার মতো সূয্যি মামা জাগবে। আলো ঠিকরে পড়বে পুরনো পাড়ার মোড়, দু’ধারে টঙ দোকান, অটোওয়ালার অলস হাই, ‍পুরনো বটগাছ আর ট্রামের রাস্তায়। ফের শুরু লেনদেন। ব্যস্ততা বাড়বে। আবারও বিয়ের তোড়জোড়। ঠিক এইটুকু সময়ের কলকাতা যেনো চুপচাপ রেলিংয়ে বসে থাকা দোয়েল। যার ডানায় লেগে রয়েছে গতদিনের উড়ান।

সোমবার (৭ আগস্ট) কলকাতায় সূর্যোদয় ছিলো ৫টা ১০ মিনিটে। উবারের চার চাকা পেরিয়ে যায় যাদবপুর, ঢাকুরিয়া, গোলপার্কের সুনসান রাস্তা। মেঘলা আকাশ তাই কাগজে-কলমে সূয্যিমামা জাগলেও, হাই তুলে ফের শুয়ে পড়েছেন। গন্তব্য হাওড়া স্টেশন। ৭টা ২৫ মিনিটে ট্রেন ফালাকনুমা এক্সপ্রেস। ট্রেন যাবে ১৫৪৫ কিমি দূর হায়দ্রাবাদ।

কাচের জানালা গলে বাইরে চোখ যায়। দোকানের ঝাঁপি সব নামানো। রাস্তার ধারের চায়ের দোকানগুলো দু’একটা খুলেছে। দূরের কানাগলি অব্দি চোখ যায়। কাঁধে গামছা নিয়ে দাঁত মেজে চলেছে কেউ। তার নাম জানি না। শুধু জানি, তার মতো দিন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে কলকাতাও। রাস্তায় গাড়ির আনাগোনাও তেমন নেই। খানিক বাদে এদের বিকট আওয়াজে জেগে যাবে যাত্রী ছাউনিতে এখনও ঘুমিয়ে থাকা লোকগুলো।

সুনসান কলকাতার রাস্তা।  ছবি: শুভ্রনীল সাগররাস্তাঘাটে লোক একেবারে নেই যে তা নয়। যারা আছে তাদের হয়তো বিশেষ কাজ। বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় অনেকে হাঁটতে বেরোয়নি। স্কুল দূরে বলে হয়তো সাতসকালেই মায়ের সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছে দু’একজন খুদে শিক্ষার্থী। তার চোখেমুখে এখনও লেগে রয়েছে গতরাতের ঘুম।

সোমবারের সকাল বলে খুব বেশিক্ষণ যে এ অবস্থা থাকবে তা চোখ বন্ধ করে বলা যায়। এক সময়ের অবিভক্ত ভারতের রাজধানীর মানুষ রোববার কাটিয়েছে সাপ্তাহিক ছুটি। কতো কাজ থমকে ছিলো, কতো কাজ বাকি— সেই তাড়াহুড়া নিয়ে একটু পরই ঝাঁপিয়ে পড়বে সবাই।

তবুও ঘুমজড়ানো চোখে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা এঁটো চায়ের ভাড়গুলো দেখতে ভালো লাগে। বাজারের ব্যাগ হাতে দাদু, মুটে-মজুরের হাঁক, চুন-সুরকি খসা বাড়ির ব্যালকনিতে ঝোলানো জামা হাত নেড়ে বলে— আমাদের কথা লিখবে না?

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৭
এসএনএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।