ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

পূর্ব-পশ্চিমে সূর্যগ্রহণ, প্রভাব পড়বে না বাংলাদেশে

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
পূর্ব-পশ্চিমে সূর্যগ্রহণ, প্রভাব পড়বে না বাংলাদেশে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের ফাইল ফটো

৯৯ বছর পর আমেরিকায় দৃশ্যমান হচ্ছে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ। তবে বাংলাদেশ থেকে এ গ্রহণ দেখা যাবে না। পড়বে না কোনো প্রাকৃতিক ও শারীরিক প্রভাব। বাংলাদেশে সবশেষ ২০০৯ সালে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ হয়। ফের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ দেখতে অপেক্ষা করতে হবে ১০৫ বছর। 

যুক্তরাষ্ট্রের এ পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ এখন বিশ্ব মিডিয়ার আলোচিত বিষয়। অনেকের ধারণা ছিলো বাংলাদেশ থেকেও এ বিরল দৃশ্যটি দেখা যাবে।

এতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়েও চলছে নানান আলোচনা।  

এ গ্রহণ বিষয়ে শনিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশ থেকে এ পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ে স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৩৪ মিনিটে গ্রহণ শুরু হবে (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৪৭ মিনিট)। বাংলাদেশ গ্রহণ শেষ হবে রাত ৩টা ৪ মিনিটে। আইএসপিআর থেকে গ্রহণের একটি গতিপথও নির্দেশ করে দেওয়া হয়েছে।

১৯১৮ সালের ৮ জুন শেষবার পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখে যুক্তরাষ্ট্রবাসী।  

সূর্যগ্রহণ নিয়ে নানান সংস্কার-কুসংস্কার রয়েছে মানুষের মধ্যে। গ্রহণের সময় না খাওয়া, কিংবা বিশেষ খাবার খাওয়া, গর্ভবর্তী নারীদের বিভিন্ন নিয়ম মেনে চলা, রান্না না করা প্রভৃতি। যেহেতু বাংলাদেশ থেকে দেখা যাবে না, তাই এসব নিয়ে তাদের চিন্তা না করলেও চলবে।

দিনের বেলা হঠাৎ রাতের মতো অন্ধকার নেমে আসার প্রভাব প্রাণীকুলে পড়ে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় প্রস্তুতি নেওয়া হলেও ‍অন্ধকার আকাশ পশু-পাখিদের বিভ্রান্ত করতে পারে। নিশাচর প্রাণীরা, বিশেষত পেঁচা দিনের বেলায়ই রাত ভেবে জেগে যেতে পারে, ভেড়ার পাল খুঁজতে পারে ঘুমানোর জন্য জায়গা। এমনকি দিনের পাখিরা (Songbird) কলরব বন্ধ করে দিতে পারে।

জেডএসএল লন্ডন-এর অমেরুদণ্ডী প্রাণী বিভাগের প্রধান ডেভ ক্লার্কের মতে, পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ রাতে চলা পতঙ্গ ও প্রজাপতিদের চলাফেরাতেও বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত যারা দিক-নির্ধারণ করতে দিনের আলো ব্যবহার করে।

দ্য ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজের অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার অনুষদের এমেরিটাস অধ্যাপক ডোনাল্ড ব্রুম বলেন, প্রাণীকূলের ওপর সূর্যগ্রহণের প্রভাব এত বেশি যে একটু লক্ষ্য করলেই মানুষ বুঝতে পারবে তার আশে-পাশে অনেক পাখি গ্রহণের সময় ‍ডাকছে না। নিরাপদ ভেবে অনেক পাখি গাছের উঁচু ডালে বা নির্জন স্থানে চলে যেতে পারে। কারণ প্রতিটি প্রাণীরই ২৪ ঘণ্টার একটি নিয়মতান্ত্রিক কর্মতালিকা রয়েছে। তারা বুঝতে পারে এটা রাত নয়, কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু হচ্ছে। পোষা বিড়াল ও কুকুরও বিরক্ত বোধ করতে পারে।

ব্রুম বলেন, প্রতি দিনই রাত আসে, এর মৌলিক কোনো পার্থক্য হয় না। তবে সকালে রোদের তীব্রতা একটু বেশি হলেও এসব প্রাণীদের বিরক্তি বোধ হয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কুকুরের দিকে লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন, তারা বেশ বিচলিত। কেননা তারা বোঝার চেষ্টা করছে আসলে কি হতে চলেছে।

পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের অ্যানিমেশনভারতে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, পেঁচা, বাদুড়, সকালের পাখি, দাঁড় কাক, গঙ্গা ফড়িং এবং মৌমাছির ওপর এর প্রভাব পড়বে। এর আগে ১৯৫৫ সালের জুন মাসে ভারতে জুয়োলোজিক্যাল জরিপে দেখা গেছে, ভোমরও তাদের চাকে পালিয়েছিল।  

গবেষকরা আরও মনে করেন, আলো না থাকায় তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় পোকা-মাকড়দের খাদ্য সংরক্ষণে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যোগাযোগেও তাদের বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হতে পারে।

১৯৭৩ সালে গবেষকরা দেখেন, গর্তে বসবাসকারী কাঠবিড়ালও সূর্যগ্রহণের সময় বিচলিত হয়।

গরুর ক্ষেত্রে বিষয়টি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা গরুর খাওয়া এবং বিশ্রামের সময় নিজের মতো করে ভাগ করে নেয়।

আরেক গবেষক পল মার্ডিন, জলহস্তিরাও আতঙ্কিত হয়ে থাকে সূর্য গ্রহণের সময়। এমনকি গ্রহণ শেষেও তারা বিভ্রান্ত হয়, ঠিক কোন সময় চলছে তা নির্ধারণ করতে।

পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের অপেক্ষায় এখন যুক্তরাষ্ট্রবাসী। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-নাসা ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে গ্রহণ দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে, দলবেঁধে মানুষজন দেখবেন প্রবল পরাক্রমশালী সূর্যকে গ্রাস করে ফেলার দৃশ্য।
সোমবার (২১ আগস্ট) সেই দিন। নাসা বলছে, ৯৯ বছর পর আমেরিকায় পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দৃশ্যমান হচ্ছে। এটি কানাডাসহ পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর/পূর্ব এশিয়া, উত্তর/পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও দেখা দেবে।

সূর্যগ্রহণে চাঁদ সূর্যকে সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলতে পারে, ফলে কোনো স্থানে তখন হয় পূর্ণ সূর্যগ্রহণ। এতে সূর্য পুরো ঢাকা পড়ে বলে সৌরমুকুট দেখা যায়। সেসময় তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। কিছুক্ষণের জন্য সন্ধ্যার আঁধার নেমে আসে আকাশে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায়, চন্দ্রগ্রহণের চেয়ে সূর্যগ্রহণ বেশিবার হয়। প্রতি সাতটি গ্রহণের মধ্যে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের অনুপাত ৫:২ বা ৪:৩। তবে অধিকাংশ সূর্যগ্রহণ সমুদ্রপৃষ্ঠে বা পর্বতমালার ওপর দিয়ে গেলে নজরে পড়ে না।

এবার বৈজ্ঞানিক গবেষণার একটি অংশ হিসেবে সূর্যগ্রহণের দিন বেলুনে করে ব্যাকটেরিয়া পাঠাতে যাচ্ছে নাসা। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নাসার একটি টিম শতাধিক বেলুন ছাড়বে। এই বেলুনগুলোর সঙ্গে যুক্ত করা থাকবে ক্যামেরা ও ট্র্যাকার। কয়েকটির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে মানুষের জন্য ক্ষতিকর কিছু ব্যাকটেরিয়ার নমুনা।

সতর্কতা
খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখতে নিষেধ করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কোনো এক্সরে প্লেট নিয়ে বা বিশেষ চশমা পরে সূর্যগ্রহণ দেখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।