ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

হায়দ্রাবাদের বিখ্যাত মক্কা মসজিদে ঈদের জামাত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৭
 হায়দ্রাবাদের বিখ্যাত মক্কা মসজিদে ঈদের জামাত হায়দ্রাবাদের বিখ্যাত মক্কা মসজিদে ঈদের জামাত, ছবি: শুভ্রনীল সাগর

হায়দ্রাবাদ থেকে: নামপল্লী স্টেশনে (বর্তমান হায়দ্রাবাদ স্টেশন) নামতেই ছোটাছুটি-হুড়োহুড়ি চোখে পড়লো। যে যেভাবে পারে, অটো-ক্যাব-স্কুটি নিয়ে ছুটছে। প্রায় সবার পরনে সাদা পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি। ছোটাছুটির কারণ, ঈদ-উল-আজহার নামাজ। ভারতে একে 'বকরি ঈদ'ও বলা হয়। ঘড়ির কাঁটা পৌনে সাতটার ঘরে।​​

ঈদ-উল-আজহার নামাজ সকাল সকাল পড়াই নিয়ম। কোরবানি দেওয়ার ব্যাপার থাকে।

এই নিয়ম এখানেও। অন্যান্য জায়গায় নামাজ আগেই হয়ে গেছে। কিন্তু মক্কা মসজিদে নামাজ এখনও বাকি। ফি বছরই এখানে নামাজ একটু দেরিতে অর্থাৎ ভারতীয় সময় ৯টা থেকে সাড়ে ৯টায় পড়ানো হয়। এবছর নির্ধারিত সময় ছিলো সাড়ে নয়। সবার গন্তব্য সেখানেই।

এমন নয়, এরা সাত সকালে উঠতে পারেনি তাই দেরি করে শুরু হওয়া নামাজ ধরবে। তা নয়। সবারই ইচ্ছা, মক্কা মসজিদে নামাজ পড়ার। এজন্য অবশ্য মসজিদটির মাহাত্ম্য একটু বলা দরকার।  হায়দ্রাবাদের বিখ্যাত মক্কা মসজিদে ঈদের জামাত, ছবি: শুভ্রনীল সাগরখুব সংক্ষেপে, পূণ্যভূমি মক্কা থেকে আনা মাটির তৈরি ইট দিয়ে এই মসজিদ বানানো, এজন্য নাম মক্কা মসজিদ। প্রায় ৪শ বছর আগেকার এ নয়নাভিরাম স্থাপত্য নিদর্শনটি ভারতের সবচেয়ে পুরনো মসজিদের একটি। একসঙ্গে ১০ হাজার মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় কতে পারেন। মক্কা মসজিদ-বৃত্তান্ত অন্য পর্বে হবে— আজ ঈদ, ঘরে ঘরে আনন্দ। ঈদের কথাই হোক।

ঈদ বলেই এদিন নামাজের সময়ের আগে থেকেই মসজিদ প্রাঙ্গণে ছিলো মুসল্লিসহ সাধারণ মানুষের ভিড়। গায়ে গায়ে নতুন কাপড়, সুগন্ধির সৌরভ। একহাতে জায়নামাজ, অন্যহাতে টুপি পরা ছোট্ট বাবুদের নিয়ে মানুষের ঢল।  হায়দ্রাবাদের বিখ্যাত মক্কা মসজিদে ঈদের জামাত, ছবি: শুভ্রনীল সাগরপেছনে মসজিদ রেখে প্রিয়জনের সঙ্গে সেলফিও তুলে নিলেন অনেকে।

সবার সুবিধার্থে মসজিদের সামনের সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় সকালেই। যতো রোদের তাপ বাড়ে, লোক আসতে থাকে দলে দলে। ধীরে ভরে ওঠে ২২০ ফুট চওড়া এবং ১৮০ ফুট লম্বা মসজিদটির প্রাঙ্গণ।

প্রবেশমুখে কড়া নিরাপত্তা। ১০-১২ জন পুলিশ সকাল থেকেই দাঁড়িয়ে। তল্লাশির মুখোমুখি হতে হলো সবাইকেই। মসজিদের চারপাশজুড়েও ছিলো পুলিশের সতর্ক টহল। ২০০৭ সালে জুমার নামাজের সময় মসজিদে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন ১৩ জন। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি নিশ্চয়ই চায় না তেলেঙ্গানা সরকার।

মূল মসজিদের বাইরে প্রশস্ত বারান্দা, উপরে টিনের ছাউনি। ঈদ বলে সাজানো হয় বিশেষভাবে। নামাজ শুরুর আগেই বারান্দা ছাড়িয়ে নামাজিদের সারি চলে গেলো সিঁড়িতে। ঠিক সাড়ে নয়টায় ইমাম যখন আল্লাহু আকবার বলছেন, সেই মুহূর্তেও ছুটে এলো অনেকে। সিঁড়ি আগেই ভর্তি, অগত্যা রাস্তায় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে পড়লেন তারা।

মক্কা মসজিদের ঠিক পাশেই ‘চার মিনার’— এটি হায়দ্রাবাদের আইকন বলে খ্যাত। চার দিক থেকে চারটি রাস্তা এসেছে মিলেছে চার মিনারের গোড়ায়। পশ্চিমমুখী রাস্তাটি ঐতিহাসিক লাদবাজার। ঈদ বলে দোকানপাট সব বন্ধ। এসবের গল্পও হবে অন্য পর্বে।  হায়দ্রাবাদের বিখ্যাত মক্কা মসজিদে ঈদের জামাত, ছবি: শুভ্রনীল সাগরফিরে আসা যাক ঈদে। নামাজ শেষ হতেই কোলাকুলির ধুম, ছোটাছুটি। মসজিদের স্থায়ী বাসিন্দা হাজারো পায়রাগুলোরও যেনো আজ ঈদ। মানুষ দেখে মোটেও ভয় পায় না। স্বগর্বে উড়ে বেড়ায় এখানে-ওখানে।  হায়দ্রাবাদের বিখ্যাত মক্কা মসজিদে ঈদের জামাত, ছবি: শুভ্রনীল সাগরকিছুক্ষণ পর পর দল ধরে উঁচু মিনারটি ছুঁয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে আকাশের নীলে, আবার ঝপ ঝপ করে দুই ডানায় অঢেল শান্তি নিয়ে ফিরে আসছে মাটিতে!

বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৭
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।