ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বরিশালের খাবারে তৃপ্তি, অতৃপ্তি সেই ‘লবণে’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
বরিশালের খাবারে তৃপ্তি, অতৃপ্তি সেই ‘লবণে’ বরিশালের সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল থেকে: ভোরের আলো ফোটার অনেক আগেই বরিশাল নদী বন্দরে এসে পৌঁছালো লঞ্চ। কিন্তু ঘাটেই বসে থাকতে হলো সূর্যোদয়ের অপেক্ষায়। তবে পেটের খিদেকে বেশিক্ষণ বশে রাখা গেল না। ধূসর আকাশে বরিশাল শহরের রাস্তায় নেমে পড়তে হলো সকালের নাস্তার সন্ধানে।

আগন্তুকের কাছে বরিশালের মতো পুরোপুরি নতুন একটা শহরে সম্বল হিসেবে আছে গুগল ম্যাপ ও এ অঞ্চলের দু’চারটি ভ্রমণ কাহিনী। বরিশাল আগমনের আগে স্থানীয় ও জনপ্রিয় কিছু খাবারের দোকানের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল।

এই তালিকা থেকে ‘সকাল-সন্ধ্যা মিষ্টান্ন ভান্ডারে’ যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে হলো। প্রথমত, ‘সকাল-সন্ধ্যা মিষ্টান্ন ভান্ডার’র অবস্থান লঞ্চঘাটের খুব কাছেই সদর রোডে। লঞ্চঘাট থেকে এই স্থানের রিকশা ভাড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা। দ্বিতীয়ত, এখানে আসার আগে ভ্রমণ বিষয়ক বিভিন্ন লেখায় এই রেস্টুরেন্টের নাস্তার থালির বেশ ভাল রিভিউ চোখে পড়েছিল।

ভোর ৬টায় ‘সকাল-সন্ধ্যায়’ গিয়ে দেখা গেল তখনও নাস্তা তৈরি হয়নি। খেতে চাইলে আবার অপেক্ষা করতে হবে কিছুক্ষণ। এতো সকালে আশেপাশের অন্য রেস্টুরেন্ট খোলা পাবার আশা নেই। তারওপর সাপ্তাহিক ছুটি। এসময় রাস্তায় লোকজনের হাটা-চলা নেই বললেই চলে।
 
নাস্তা তৈরি হতে হতে চোখ গেলো শেলফে সাজানো মিষ্টির দিকে। জানা গেলো ছানার জিলাপিটা আজ সকালেই দোকানে আনা হয়েছে। তাই ছানার জিলাপি দিয়ে স্থানীয় মিষ্টির স্বাদ পরখ করা এবং পেটের খিদেটাকে একটু শান্ত করা, দু’টোই একসঙ্গে হয়ে গেল। এখানকার ছানার জিলাপি সাইজে বেশ বড়, তবে মিষ্টিটা স্বাদে তেমন কড়া না।  
সর মালাই ও রসগোল্লা১৫-২০ মিনিট পর নাস্তা এসে গেলো। ‘সকাল-সন্ধ্যা মিষ্টান্ন ভান্ডার’র নাস্তার থালির কথা অনেকেই শুনে থাকবেন। এই থালির বৈশিষ্ট্য হল, একটা থালিতে কিছু সংখ্যক লুচি, সঙ্গে সবজি, ডাল ও পায়েসের তিনটি আলাদা আলাদা পদ। এক থালির দাম তিরিশ টাকা। লুচি ভাজতে আরও দেরি হবে, তাই এর বদলে পরোটা নিতে হলো।
 
পরোটা ছিঁড়ে সবজির তরকারি সহকারে মুখে দিতেই যে ব্যাপারটা আন্দাজ হলো, সবজি রান্না করার সময় রাঁধুনি একফোঁটা লবণও দেননি এতে। তবে প্রথমেই এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিলো না। তাই সবজি খেয়ে পাশের টেবিলের অতিথির মধ্যে কোনো অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া ঘটে কিনা তা দেখার অপেক্ষা করতে হলো। বেশিক্ষণ বসে থাকা লাগলো না, খাবার মুখে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বিরক্ত হয়ে অভিযোগ করলেন, এক ফোটা লবণ দেওয়া হয়নি তরকারিতে।
 
এ বিষয়ে রাঁধুনিকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানালেন, তরকারিতে লবণ দিয়েছিলেন কিনা মনে নেই তার। লবণহীন এ খাবার খাওয়া যেন এক প্রকার অত্যাচার বলে মনে হল। কাজ চালানোর জন্য পিরিচে করে লবণ এনে দিলো একজন কম বয়সী হোটেল বয়। পাশের টেবিলের অতিথির কাছ থেকে জানা গেলো, খাবারের লবণ সংক্রান্ত এ অঞ্চলের এক মজার তথ্য।
 
বরিশালের স্থানীয়রা এমনিতে তরকারি রান্নার সময় লবণ একটু কমই ব্যবহার করেন। খাওয়ার সময় পাতে আলাদা করে লবণ নিয়ে খান। আর তরকারিতে লবণ দেওয়া হয়েছিল কিনা— এ নিয়ে রাঁধুনিদের মনে প্রায়ই বিভ্রান্তিতে পড়তে দেখা যায়। যেহেতু রান্নার সময় লবণ কম পরিমাণে ব্যবহার করা হয়, তাই রান্না পরখ করে সব সময় বোঝা যায় না—এতে লবণ দেয়া হয়েছিল কিনা। আবার ভুলে তরকারিতে একাধিকবার লবণ দেয়ার ঘটনা প্রায় ঘটে। সেজন্য একপ্রকার কথাও প্রচলিত হয়ে গেছে এই অঞ্চলে, ‘ও মনু, ডাইলে লবণ দ্যাছো? নাকি দ্যাবা?’।
 
প্রথমে লবণের ব্যাপারটা তেমন আমলে না নিলেও, দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় নিশ্চিত হওয়া গেল, লবণ সংক্রান্ত তথ্যটা আসলেই ফেলে দেওয়ার মতো নয়। দুপুরে খাওয়ার জন্য বরিশাল শহরে অনেক বিকল্প। সি অ্যান্ড বি রোডে দেশি-বিদেশি নানা জাতের খাবারের অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট চোখে পড়ল।

চৌমাথা বাজারের কাছেই অর্পিতা গৌরনদী মিষ্টান্ন ভান্ডার। এর ঠিক বিপরীতেই চৌমাথা লেকের পাশে একটি বিদেশি খাবারের রেস্টুরেন্ট, নাম লেক ভিউ। চৌমাথা লেকের উত্তর দিকে রয়েছে পাশাপাশি দু’টি ভাতের হোটেল; ভাই ভাই হোটেল এবং মায়ের দোয়া রেস্টুরেন্ট। কাস্টমারদের ভিড় আন্দাজ করে ভাই ভাই হোটেলেই দুপুরের খাবার খাওয়ার সিদ্ধান্ত। স্বাভাবিক কারণেই, যে হোটেলে খাবারের স্বাদ ভাল, সে হোটেলেই কাস্টমাররা বেশি ভিড় করবেন।
 
তবে ভাই ভাই হোটেলে খেতে বসে লবণের বিষয়টা আবার প্রত্যক্ষ করতে হলো। এবার আরও একটা বিষয় খেয়াল হলো, কোনো তরকারিতেই তেমন ঝাল নেই। তবে রান্নার স্বাদ ভাল। সবজি, সরপুঁটি, মুরগি এবং ডালের মধ্যে সরপুঁটির ঝোল জিহ্বাকে বেশ স্বাদ দিলো। সবচেয়ে সুস্বাদু মনে হলো ডাল। সবজি ও মুরগির তরকারিতে লবণের বড়ই অভাব। বড় আকৃতির প্লাস্টিকের মগে করে প্রতি টেবিলে টেবিলে পাতলা ডাল পরিবেশ করা হয় এখানে। মগ থেকে যতো খুশি ঢেলে নেওয়া যাবে। এখানকার ডালে লবণের পরিমাণও ঠিকই আছে।
 
একটি মিষ্টির দোকানে সাজানো মিষ্টির সমাহার
লবণ বিভ্রান্তির খপ্পর থেকে বাঁচতে রেস্টুরেন্টের তালিকা থেকে অনেক নামই কেটে ফেলতে হলো সেজন্য।  

দুপুরের পর সন্ধ্যা অবধি কিছু খাওয়া হয়নি। এদিকে সন্ধ্যার পরই ঢাকার উদ্দেশে উঠতে হবে লঞ্চে। তাই লঞ্চ ঘাটের আশেপাশের মিষ্টির দোকানগুলো একটু ঘুরে দেখা হলো। শশী মিষ্টান্ন ভান্ডারের বিখ্যাত গুড়ের সন্দেশ তেমন আহামরি মনে হলো না। তবে ভাল লাগল এ দোকানের ক্ষীরপুরি নামক এক প্রকার মিষ্টি।
 
মিষ্টান্নর মধ্যে সবচেয়ে ভাল লেগেছে সকাল-সন্ধ্যার সড় মালাই। ঘন দুধের সিরাপে ভেজানো এক পিস সর মালাইয়ের দাম পঞ্চাশ টাকা। এখানকার রসগোল্লারও অনেক নাম ডাক। তবে মিষ্টি জাতীয় সব খাবারই তেমন কড়া স্বাদের নয়। যারা কড়া মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন না, তাদের কাছে বরিশালের মিষ্টি ভাল লাগতে বাধ্য। কিন্তু এদেশের যেসব অঞ্চল অনেক কড়া স্বাদের মিষ্টান্ন তৈরিতে বিখ্যাত, সেসব অঞ্চলের লোকেরা বরিশালের মিষ্টি খেয়ে হয়তো সন্তুষ্ট নাও হতে পারেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
এনএইচটি/এইচএ/

** বাংলা সিনেমা নয়, সত্যিকারে লটারি জেতা লিটনের গল্প!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।