ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

কিং কুইন আর জোকারের ইতিবৃত্ত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৭
কিং কুইন আর জোকারের ইতিবৃত্ত তাসের ইতিহাস

ঢাকা: সময় কাটানোর জন্য তাসের জুড়ি নেই। চার রঙা ৫২ তাস যেমন খেলার জন্য উত্তম, তেমনি এর রঙ রূপ আর ছবিতেও রয়েছে বৈচিত্র। বিভিন্ন প্রতীকের সঙ্গে রয়েছে রাজা, রাণী, উজির (জোকার), টেক্কা।

এসব প্রতীক আর তাসে ব্যবহৃত রাজা, রাণী, জোকারের চরিত্রেও রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক চরিত্রের প্রতিফলন। এ প্রতিবেদনে সেসব চরিত্রই তুলে ধরা হয়েছে যাদের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে তাসের বহুল পরিচিত ছবি ও প্রতীকগুলো।

পঞ্চদশ শতকের সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর পরিচয় বহন করে তাসের চারটি প্রতীক। এদের মধ্যে ‘ডায়মন্ডস’ মূলত ধনী শ্রেণির প্রতীক। ডায়মন্ডস দিয়ে তাদের ধনদৌলত আর ঐশ্বর্যকে বোঝানো হতো। তৎকালীন সময়ে এরা ছিলো শাসক গোষ্ঠী।

স্প্যানিশ শব্দ ‘স্পাডা’ থেকে এসেছে স্পেড শব্দটি। এর অর্থ তরবারি। স্পেডস দিয়ে মূলত সে সময়ের সৈন্যেদের বোঝানো হতো।

হার্টস প্রতীকটি পান পাতা থেকে হৃৎপিণ্ডের আকার পায়। এটা মূলত পাদ্রীদের প্রতীক। পাদ্রীদের মন পবিত্র ধরে নিয়ে এই প্রতীকের আবির্ভাব।

ইংরেজি ক্লাবসের বাংলা হলো ‘মুগুর’। গরিব মানুষের মুগুরই একমাত্র সম্বল। আর তৎকালীন সময়েও ‘ক্লাবস’ দ্বারা সমাজের নিম্ন শ্রেণির গরিব মানুষদেরই বোঝানো হতো।

তাসের এ প্রতীকগুলোর পাশাপাশি রাজা, রাণী আর জোকারের চরিত্রেও স্থান পেয়েছে ঐতিহাসিক নানা ব্যক্তিত্ব।

ইশকাপন বা স্পেড:ডায়মন্ডের বা রুইতনের রাজা রাণীফিলিস্তাইন যোদ্ধা গোলিয়াথের হত্যাকারী ছিলেন রাজা ডেভিড। বাইবেলের তথ্য অনুযায়ী এ রাজা যিশু খ্রিস্টের পূর্বপুরুষ এবং তিনি ইজরায়েল শাসন করেছিলেন। রাজা ডেভিডকেই স্থান দেওয়া হয়েছে কিং অফ স্পেডস হিসেবে। ফরাসি শব্দ স্পেডস অর্থ তলোয়ার, যা রাজা ডেভিডের হাতে শোভাবর্ধন করেছে স্পেড কার্ডে। এ রাজার অন্যতম গুণ হলো তিনি কখনোই আবেগের বশবর্তী না হয়ে বুদ্ধি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতেন।

স্পেড বা ইশকাপন তাসের রাণী হলেন গ্রিক দেবী প্যালাস। এ প্যালাস মূলত দেবী হলেও তার যুদ্ধ ছিলো শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। তাইতো তার এক হাতে তরবারির পাশাপাশি অন্যহাতে স্থান পেয়েছে ফুল।

স্পেডের জ্যাকে চরিত্রটি এসেছে ফ্রান্সের একটি জনপ্রিয় কাব্যিক চরিত্র থেকে।

হার্টস বা হরতন:ডায়মন্ডের বা রুইতনের রাজা রাণীতাসের এই রাজা হলো হৃদয়ের রাজা। তবে নিজের মাথায় তলোয়ার ঠেকিয়ে নিজেকেই হত্যা করতে উদ্যত হওয়ার ফলে তাকে ‘আত্মঘাতী রাজা’ও বলা হয়। ৮০০ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপের অর্ধেক জয় করে ফেলা বিখ্যাত রাজা শার্লেমেন-ই স্থান পেয়েছে হরতনে। আরো একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, তাসের রাজাদের মধ্যে একমাত্র হার্টসের রাজারই কোনো গোঁফ নেই।

চুম্বকীয় ও আকর্ষণীয় হৃদয়ের হার্টসের রাণীকে সমস্ত তাসের জীবন বলা হয়। শার্লেমেন এর রাণী হিসেবে এ তাসে স্থান পেয়েছে তৎসময়ের বিখ্যাত লেখক লুইস ক্যারলের ‘অ্যালিস অফ অ্যাডভেঞ্চার উইলসল্যান্ডে’র একটি কল্পিত চরিত্র। যেখানে তিনি প্রধান চরিত্রের প্রাথমিক প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হন। এ নারীর ভালোবাসার দ্বারা অন্যদের উপর নিজের ক্ষমতা বিস্তারের একটি স্বাভাবিক গুণ ছিলো।

তাসের এ রানীকে ক্যারল একজন অসমাপ্ত শাসক হিসেবেও বর্ণনা করেছেন। মেজাজ প্রবণতা ও স্বাচ্ছন্দ সহানুভূতি এবং সমবেদনার মাধ্যমে এ চরিত্রটি অনেক শক্ত কাজও হাসিল করেছেন খুব সহজে। তবে কোনো এক সময় ক্রোধে অন্ধ হয়ে সামান্য অপরাধে একজন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন তিনি।

অনেকেই এ তাসের রাণীকে বাইবেলে উল্লেখিত নায়িকা জুডিথ বলেও গণ্য করে থাকেন। যিনি রাজার তরবারির আঘাতে আসিরিয়ান সেনাপতিকে হত্যা করেছিলেন।

হার্টসের জ্যাক হলো ‘লা হিরে’। বিখ্যাত এই যোদ্ধা ফ্রান্সের সামরিক বাহিনীর সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।

ডায়মন্ডস বা রুইতন:স্পেডেসের বা ইশকাপনের রাজা রানী জোকাররাজা জুলিয়াস সিজার। যার  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে রোম সাম্রাজ্যের উত্থানে। রোমের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ একটা দীর্ঘ সময় সিজারের হাতেই ছিলো। রোমের এই বিখ্যাত শাসক, রাজনীতিবিদ ও সাহিত্যিকই হলেন কিং অব ডায়মন্ডস। মজার ব্যাপার হলো, তাসের সব রাজাদের মুখ স্পষ্ট দেখা গেলেও একমাত্র রুইতনের রাজারই মুখ দেখা যায় অর্ধেক।

৫২ তাসের মধ্যে কুইন অব ডায়মন্ডস হলেন রাচেল। ডায়মন্ডস কিং জুলিয়াস সিজারের আপন স্ত্রী রাচেল। জুলিয়াস সিজারের সব স্বার্থকতায় এ নারী চরিত্রটি সবসময়ই বেশ বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেছেন।

গ্রীক ও রোমান পুরাণ অনুযায়ী ‘ট্রয়ের’ বিখ্যাত যোদ্ধা ছিলেন হেক্টর। আর এ বিখ্যাত যোদ্ধাকেই স্থান দেওয়া হয়েছে ডায়মন্ডস জ্যাকে।

ক্লাবস বা চিরতন:ক্লাবসের বা চিরতনের রাজা রাণীআলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। গ্রিসের মেসিডোনিয়ার এই সম্রাটের নাম শোনেননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর। এই প্রভাবশালী সম্রাট পৃথিবীর প্রায় পুরোটাই দখল করে বসেন ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বের দিকে। গ্রিস থেকে মিশর ও উত্তর-পশ্চিম ভারত পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার ছিল অ্যালেকজান্ডারের। দিগ্বিজয়ী এ সম্রাটই হলো কিং অব ক্লাবস।

এ রাজার রাণী হিসেবে তাসে স্থান পেয়েছে ব্রিটিশ রানী প্রথম এলিজাবেথ। সমগ্র তাসের জগতে কুইন অব ক্লাবস-ই হলেন একমাত্র ইংরেজ মহিলা।

ক্লাবসে গোলাম হিসেবে স্থান পেয়েছে রাউন্ড টেবিলের বিখ্যাত নাইট, স্যার ল্যান্স লট।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৭
এইচএমএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।