ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

আগের মতোই আছে পলিমাটির গানের আবেদন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৭
আগের মতোই আছে পলিমাটির গানের আবেদন ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘তখন আমার আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। একজন লোভ দেখিয়ে বললো, ভাই চলেন একটু গান গাইতে হবে। কিছু সম্মানীও দেওয়া হবে। আমার গায়ের পাঞ্জাবিটাও তখন একটু ছিঁড়ে গেছে। আমি বললাম, এটা পরে যাবো? তিনি বললেন, চলেন, সমস্যা নাই। মানুষ আপনাকে না যতোটা দেখবে, তার থেকে বেশি আপনার গান শুনবে।’ সত্যিই তাই শ্রোতারা মুগ্ধ হয়েই তার গান শুনেছিলেন। অনুরোধ জানাচ্ছিলেন নিজেদের পছন্দের একাধিক গান গাওয়ার জন্য।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের আয়োজনে জাতীয় জাদুঘরে গান পরিবেশনের মধ্যে এভাবেই স্মৃতিচারণ করছিলেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী মোস্তফা জামান আব্বাসী। সংগীত শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদের ১১৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ সংগীত সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন আব্বাসউদ্দীন আহমদের ছেলে বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ, লেখক ও পণ্ডিত মোস্তফা জামান আব্বাসী ও নাতনী ড. নাশিদ কামাল।

শিল্পী বলেন, আমাকে যে মানুষটা লোভ দেখিয়ে গান গাইতে নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি হলেন আসাদুজ্জামান নূর। আর মঞ্চে উঠে দেখলাম, সামনে বসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পতি ড. ওয়াজেদ মিয়া। তার পাশেই শেখ রেহানা।

‘শেখ হাসিনা বললেন, আব্বাসী ভাই, আমার ওই গানটা গান না একটু! আমি তার অনুরোধটা বুঝলাম। আগে তার সঙ্গে আলাপের একপর্যায়ে শিল্পী হওয়ায় তার প্রিয় গানটা জেনেছিলাম আমি। সে সুবাদেই তখন গাইলাম গানটা। ’

কথা শেষ হতেই শিল্পী গাইলেন, ‘প্রেম জানে না রশিক কালা চান’। আর গান শেষ করে বললেন, দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও যেখানে ভাটিয়ালী-ভাওয়াইয়া পছন্দ করেন, সেখানে বর্তমান প্রজন্ম যেন এগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তবে বাংলার পলিমাটির গানের আবেদন, সৌন্দর্য আগে যেমন ছিলো, এখনও তেমনই আছে।

শ্রোতাদের অনুরোধের গানের চিরকুটগুলো সযতনে নাড়তে নাড়তে বলেন, ‘আমি আমার বাবার বইয়ের মধ্যে এ ধরনের চিরকুট এখনও পাই। তিনি সবগুলো রেখে দিতেন। আমিও রেখে দিচ্ছি। এগুলো আপনাদের ভালোবাসা, আমার প্রাপ্তি। তবে আপনাদের ভালোবাসায় মুগ্ধ আমি যে গানগুলো আজ সময়ের অভাবে গাইতে পারছি না, সেগুলো আবার বাবার রেকর্ড ঘেঁটে নতুন করে চর্চা করে আপনাদের সামনে হাজির করবো। ’

মোস্তফা জামান আব্বাসী বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে গায়ক ও লেখক হিসেবে সুপরিচিত। তিনি সংগীত, দর্শন, জীবনী, ভ্রমণকাহিনী, প্রবন্ধ ও উপন্যাসসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় পঞ্চাশটি বই লিখেছেন। দীর্ঘ ১১ বছর তিনি ‘জাতীয় সংগীত কমিটি’র চেয়ারম্যান ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশিষ্ট এ ব্যক্তি বর্তমানে ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্স স্কলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ড. নাশিদ কামাল কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদের নাতনী। তিনি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের নজরুল গীতি, আধা-শাস্ত্রীয় সংগীত ও উর্দু গজলগুলির অসামান্য চর্চা করেছেন। ২০০৯ সালে নজরুল একাডেমি থেকে নজরুল পুরস্কার জিতেছেন গুণী এ শিল্পী।

বাংলাদেশ সময়: ০১১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৭
এইচএমএস/আরআর

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।