ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

কুকুরই নিশ্চিত করলো দ্বীপে আর পিঁপড়া নেই!

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৭
কুকুরই নিশ্চিত করলো দ্বীপে আর পিঁপড়া নেই! কুকুরই নিশ্চিত করলো দ্বীপে আর পিঁপড়া নেই!

ঢাকা: টোবাইস একটি ল্যাব্রাডর প্রজাতির শিকারি কুকুর। একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে তাকে যেতে হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত সান্টা ক্রুজ আইল্যান্ডে। সান্টা ক্রুজ আইল্যান্ডের বৈচিত্র্যময় জীবজগতের সদস্য সংখ্যা প্রায় এক হাজার।

এ দ্বীপে রয়েছে এক প্রকার আক্রমণাত্মক পিঁপড়ার বসবাস। এরা ‘আর্জেন্টাইন অ্যান্টস’ নামে পরিচিত।

এদের বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক প্রাণীগুলোর একটি। পিঁপড়াগুলোকে খুঁজে বের করাই টোবাইসের কাজ।

এ পিঁপড়াগুলো দ্বীপের জীববৈচিত্র্যের জন্য এক মারাত্মক হুমকি। দ্বীপের মৌমাছিসহ অন্য পোকাদের মেরে ফেলে এরা। মৌমাছি বা পোকামাকড় ছাড়া ফুলের পরাগায়ন বেশিরভাগ গাছের জন্য প্রায় অসম্ভব।

ক্ষতিকর আর্জেন্টাইন পিঁপড়ার হাত থেকে বাঁচতে সেখানকার কর্তৃপক্ষ ১৯৭৮ সাল থেকে বিভিন্ন রকমের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু কোনো প্রচেষ্টাই সফলতার মুখ দেখছিল না। অবশেষে ক্রিস্টিনা বোজার নামক এক প্রাণিবিজ্ঞানী পিঁপড়াগুলোকে ধ্বংস করার এক অভিনব পদ্ধতি প্রস্তাব করেন।  

ক্রিস্টিনার পরিকল্পনা অনুযায়ী হেলিকপ্টার থেকে চিনি মিশ্রিত পানি ফেলা হয় দ্বীপের বিভিন্ন অঞ্চলে। এ পানিতে আরও মেশানো হয়েছিলো পিঁপড়া মারার বিষ। পদ্ধতিটা খুবই কার্যকর প্রমাণিত হয়। ২০১৫ ও ২০১৬ সালের মধ্যেই দ্বীপের বেশিরভাগ পিঁপড়া ধ্বংস করে ফেলা হয়।

কিন্তু আর্জেন্টাইন পিঁপড়া খুবই মারাত্মক। দ্বীপে এসব পিঁপড়ার মাত্র একটা বসতি অক্ষত থেকে গেলে, বংশবৃদ্ধি করে সংখ্যায় আবার আগের পর্যায়ে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগবে না। এতে পুরো পরিকল্পনাটাই হবে ব্যর্থ। তাই পিঁপড়াগুলো সমূলে ধ্বংস হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া চাই। একাজেই দরকার হয়েছে টোবাইসকে। কুকুরই নিশ্চিত করলো দ্বীপে আর পিঁপড়া নেই!টোবাইস গন্ধের সাহায্যে আর্জেন্টাইন পিঁপড়া খুঁজতে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। এ প্রজাতির কোনো পিঁপড়ার রেখে যাওয়া গন্ধ সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করতে পারে সে।  

এ বছর মার্চ মাসে টোবাইস ও তার প্রশিক্ষক জিমারম্যান সান্টা ক্রুজ আইল্যান্ডে আসেন। তাদের উদ্দেশ্য, দ্বীপে আর্জেন্টাইন পিঁপড়ার কোনো বসতি রয়ে গেছে কিনা তা পুরোপুরি নিশ্চিত করা। পিঁপড়ার খোঁজে কয়েক মাস ধরে পুরো দ্বীপ চষে বেড়িয়েছেন তারা।  

সম্প্রতি টোবাইসের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে দ্বীপে আর্জেন্টাইন পিঁপড়ার আর কোনো বসতি অবশিষ্ট নেই। অবশেষে পিঁপড়া নিধন প্রকল্পের পুরো দল ফেলেছেন স্বস্তির নিঃশ্বাস।  

টোবাইসের প্রশিক্ষক জিমারম্যান বলেন, কুকুরদের গন্ধশক্তি খুবই প্রবল। অপরাধী, মাদকদ্রব্য, বোমা ইত্যাদি খুঁজে বের করতে এরা খুবই পারদর্শী। এমনকি গন্ধের মাধ্যমে বিভিন্ন কীট-পতঙ্গের পার্থক্যও করতে পারে এরা।  

টোবাইস সম্পর্কে তিনি বলেন, টোবাইস শুধু আর্জেন্টাইন পিঁপড়া খোঁজার প্রশিক্ষণ নিয়েছে। ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতো। পিঁপড়া খুঁজে পেলে প্রিয় পুরস্কার নীল রঙের ক্রিসমাস বলটা পেলেই খুশি সে। ওর চাহিদা খুবই কম। কাজেও সহজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে না।

ক্রিস্টিনা বোজার বলেন, আরও কুকুরদের এ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে পৃথিবীর অন্য অঞ্চলের আর্জেন্টাইন পিঁপড়া নিধন অনেক সহজ হবে।  

টোবাইসের পরবর্তী গন্তব্য পার্শ্ববর্তী সান ক্লেমেন্ট আইল্যান্ডে। সেখানেও একইভাবে আর্জেন্টাইন পিঁপড়া খুঁজতে যাচ্ছে সে।  

বাংলাদেশ সময়: ০১৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৭
এনএইচটি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।