ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

উষ্ণতার ফেরিওয়ালা

প্রশান্ত মিত্র, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৭
উষ্ণতার ফেরিওয়ালা নিন্ম ও মধ্যবিত্তদের শরীরে ব্লেজার তুলে দিচ্ছেন বিক্রেতারা

ঢাকা: প্রকৃতিতে এখন শীতের প্রস্তুতি। সন্ধ্যা নামতেই নগর জীবনেও কুয়াশার চাদর মোড়ানো শীতের আগমনী বার্তা স্পষ্ট। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, এবার দেশজুড়ে হিমেল হাওয়ার প্রভাব থাকবে বেশ।
 

মোটা কাপড়, কম্বল কিংবা লেপ-তোষকের দোকানে ভিড় জানান দিচ্ছে, জনমানুষের মধ্যেও শীতের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। তবে, সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় করতে গিয়ে সবার বিপনি-বিতানগুলোতে কেনাকাটা হয়ে ওঠে না।

প্রয়োজনের তাগিদে তাদের আস্থার জায়গা তখন নগরীর ফুটপাত।
 
রাজধানীর গুলিস্তানে রাস্তার পাশের এক ব্লেজার বিক্রেতার ভাষ্য, ‘বাবা পাঁচ হাজার ট্যাকা দিয়া কী সবার ব্লেজার বানানো সম্ভব? তাই অনেকে আমাগো কাছ থেকে ব্লেজার কিনে। ’
 
বুধবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের পাশে রাস্তায় দাঁড়িয়েই হাতে ও কাঁধে কয়েকটি ব্লেজার ঝুলিয়ে হাঁকডাক দিচ্ছিলেন বাদল শেখ নামে এক বিক্রেতাসহ আরো কয়েকজন। তাদের ঘিরে উৎসুক ক্রেতারও কমতি নেই। খুব যত্নসহকারে ক্রেতাদের গায়ে চাপিয়ে দিচ্ছেন বাহারি ব্লেজার। মাপে ঠিক হলে দামাদামি করে ব্লেজার নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতা।
 
মৌসুমি ব্লেজার বিক্রেতা বাদল শেখ বলেন, ‘বিদেশ থেকে এসব ব্লেজার চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় আসে। সেখান থেকে আমরা এগুলো লট হিসেবে কিনে কম দামে বিক্রি করি। টেইলার্সে একটি ব্লেজার বানাইতে গেলে পাঁচ/সাত হাজার ট্যাকা লাগে। কিন্তু সবার তো এতো সামর্থ্য নাই। তাই অনেকে আমাগো কাছ থেকে আইস্যা ব্লেজার কিনে। দামে সস্তা, কিন্তু সব ব্রান্ডের মাল। ’
 
কথা প্রসঙ্গে বাদল জানান, তাদের বিক্রিত ব্লেজার বিদেশ থেকে আসলেও এগুলো মূলত অন্যের ব্যবহার করা। তারা প্যাকেট হিসেবে ব্লেজার কেনেন। এক প্যাকেটে পাঁচ থেকে ১০টি ব্লেজার থাকে। প্রতিটি ব্লেজার ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন তারা। প্রতিদিন গড়ে ১০/১৫টি ব্লেজার বিক্রি করলে প্রায় হাজারখানেক টাকা আয় থাকে।
 
তিনি বলেন, কোনো কোনো চালানের পোশাক ময়লা, ছেড়া থাকে। তখন এগুলো বিক্রি করা যায় না। আবার যখন ভালো চালান আসে তখন পুষিয়ে নেওয়া যায়।
 
‘আমাদের বাড়তি পুঁজি নাই তাই কোথাও দোকান দিয়ে বসতে পারছি না। ঢাকায় অনেক দোকান আছে যেখানে আমরা যা বিক্রি করি তারাও তা বিক্রি করে। তফাৎ একটাই তারা দোকানে বসে বিক্রি করে, দামও বেশি নেয়। আমরা কম দামে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিক্রি করি। ’
 
নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তরাই মূলত তাদের ক্রেতা বলে জানান তিনি।
 
বাদল শেখের কাছ থেকে ৩৪০ টাকায় একটি ব্লেজার কিনেছেন আশরাফ। তিনি বলেন, ‘এখানে কম দামে অনেক ভালো ব্লেজার পাওয়া যায়। পছন্দের একটা ব্লেজারের দাম ১১শ’ টাকা হাঁকান বিক্রেতা, পরে দামাদামি করে ৩৪০ টাকায় কিনে নিলাম। ’
 
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতেই ভাসমান দোকানিরা শীতের বাহারি পোষাক সাজিয়ে হাঁকডাক চালাচ্ছেন। নিন্ম আর মধ্যবিত্তরাও শীতের কাপড়ের চাহিদা মেটাতে দ্বারস্থ হচ্ছেন সেসব ফুটপাতে। শীতের আগমনীতে তারা সবাই যেন ‘উষ্ণতারই ফেরিওয়ালা’।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৭
পিএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।